
শীতে জবুথবু। রাস্তার পাশে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে মানুষ
কে না শুনেছে এই প্রবাদবাক্য- মাঘের শীতে বাঘ পালায়! কিন্তু সাম্প্রতিককালে এসে সব কিছু ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। একই নিয়মে বদলে গেছে প্রকৃতির আচার আচরণ। শীতকালে এখন আর আগের মতো ঠান্ডা অনুভূত হয় না। একই কারণে ‘মান সম্মান’ খুইয়েছে মাঘ। দাপট কমে যাওয়ায় এ মাসটিকেও কেউ আর তেমন পাত্তা দিতে চায় না। কেন পাত্তা দেবে? এখন মাঘ মাসের শীতে বাঘ তো দূরের কথা, বিড়ালও যে জায়গা বদল করে না! অথচ একসময় মাঘের চরিত্রই ছিল আলাদা।
শীত কাকে বলে? উহা কত প্রকার ও কী কী? অন্তত এই মাসে তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যেত। মাঘের শীত আসলে কত ভয়াবহ হয় সেটি বোঝাতেই বলা হতো মাঘের শীতে বাঘ পালায়। বাস্তবে শীতের সঙ্গে বাঘের আলাদা কোনো লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস চোখে পড়ে না। তবে বাঙালি ‘বিপুল শক্তিধর’ বা ‘ক্ষমতাবান’ অর্থে ‘বাঘ’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। অনুমান করা যায়, অভিন্ন ভাবনা থেকে মাঘের সঙ্গে বাঘের গল্প জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। বলার চেষ্টা করা হয়েছিল, বাঘের মতো অতি সাহসী পশুটিও মাঘের শীতের কাছে কুপোকাত হয়ে যায়।
তো, সেই মাঘ চলছে এখন। চলছে যে, টের পাচ্ছেন নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, লম্বা সময় পর এবার মাঘের শীত অনুভূত হচ্ছে দেশে। পৌষ শেষ হতে না হতেই মাঘের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। তখন থেকে তীব্র শীত। মাঘ শুরুর পর তা আরও বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামীণ জনপদে দিন রাতের পার্থক্য করা মুশকিল হয়ে গেছে। কী দিন, কী রাতÑ সব সময়ই শীত। অনেক বেলা পর্যন্ত কুয়াশা। কাছের দৃশ্যও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। অনবরত শিশির ঝরছে। মুখ দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে না সূর্য। এ অবস্থায় হঠাৎ দুর্ভোগে পড়ে গেছে গ্রামের মানুষ। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে মাঘ বাঘের মতোই হামলে পড়েছে। সিলেট অঞ্চলের মানুষজনও বিশেষ কষ্ট পাচ্ছে শীতে।
রাজধানীর চিত্রটা আলাদা করে বলার মতো। ‘শীত নেই’, ‘গরম লাগছে তো’ বলা মানুষেরা এখন ভালো করে নাম মুখ ঢেকে পথ চলছে। পকেট থেকে হাত সহজে বের করছে না। শীত উপভোগের কথা ভুলে মোকাবিলায় মন দিয়েছে। কারণ শহর ঢাকায়ও সূর্যের দেখা নেই। গরমাগরম অবস্থা দূর হয়ে গেছে। কনকনে ঠান্ডা সর্বত্র। কাজ না থাকলে অনেকে আর ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। দরজা জানালা সব বন্ধ করে উষ্ণতার খোঁজ করছে। চালু আছে রুমহিটারও। ঠান্ডার ভয়ে ¯œান গোসল পর্যন্ত ছেড়ে দেয়ার গল্পও কানে আসছে অহরহ!
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যও মাঘকে প্রতিষ্ঠা করে চলেছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মাঘে সারাদেশে তাপমাত্রা ৬-৮ ডিগ্রি নেমে গেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্রীমঙ্গলে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত সারাদেশেই মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ফলে শীত বাড়বে বৈ কমবে না। কিন্তু হঠাৎ কেন স্বরূপে মাঘ?
আবহাওয়া অফিসের কাছে নিশ্চয়ই উত্তর আছে। তবে সেদিকে না গিয়ে মজার কথাটা বলি। ফেসবুকে একজন লিখেছেন, শীত নিয়ে এবার বেশি হাসি ঠাট্টা করেছিলাম। শীত কোথায়? গরমে গা ঘামছেÑ এ কেমন শীত? আরও অনেক কথা নিজেদের মধ্যে বলাবলি হয়েছে। শীত বোধহয় এসব বলাবলি হাসি ঠাট্টাকে সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে। তাই খেপেছে মাঘ। তাই এত শীত!
গত ক’দিনের শীতে হাসি ঠাট্টা সব থেমে গেছে। শীতকে সমীহ করছে সবাই। তবে সাধারণ মানুষের কষ্টের শেষ নেই। ঢাকার রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে কত মানুষ যে শুয়ে আছে। শুয়ে আছে। ঘুম নেই চোখে। ঠান্ডায় তাদের গা কাঁপছে। জমে যাচ্ছে। আহা, জীবন! প্রচ- শীতে বাঘ পালাতে পারে। ছিন্নমূল মানুষ কোথায় যাবে? মানুষ হয়ে তাই আসুন বঞ্চিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই। এখনই দাঁড়াতে হবে। আসুন, দাঁড়াই।