ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বৃষ্টি ভেজা প্রকৃতি গাইছে আগমনী গান

আরও সন্নিকটে শীত

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ০০:২৬, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

আরও সন্নিকটে শীত

বৃষ্টির পর ঘন কুয়াশা ডেকে আনছে শীত। ফেনীর ছবি

আসি আসি করছিল শীত। কিন্তু আসবে যে, কোন প্রক্রিয়ায়? কার হাতটি ধরে সে আসবে? হয়তো তাই হানা দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম। মিগজাউমের প্রভাবে দুই দিন সারাদেশেই কম বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায়ও সূর্যের দেখা মেলেনি। শহর ঢাকা অন্ধকারে ঢাকা পড়েছিল। বৃষ্টিও ঝরছিল অঝোর ধারায়। থামার কোনো নামই নেয়নি। এই সুযোগে  ঢুকে পড়ে শীত। না, আনুষ্ঠানিকভাবে ঢোকা নয়। তবে ভালো একটা মহড়া দিয়ে গেছে। এখন তারই প্রভাব প্রকৃতিতে। ভেজা প্রকৃতি শীতের অনুভূতিকে জাগিয়ে দিয়েছে। ঢাকার রাস্তায় নামলে দেখা যাচ্ছে  প্রায় সবার গায়েই আছে হালকা শীতবস্ত্র। সন্ধ্যা হতে না হতেই দুহাত পকেটে ঢুকে যাচ্ছে।

উন্মুক্ত এলাকা দিয়ে রাতে হেঁটে গেলে চোখে পড়ছে ঘন কুয়াশা। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মানিক মিয়া এভিনিউ দিয়ে আসার সময় মনে হচ্ছিল, উধাও হয়ে গেছে জাতীয় সংসদ ভবন! কুয়াশার কারণে বিশালাকার আইকনিক স্থাপনার সামান্যই দেখা যাচ্ছিল। কুয়াশার বুকচিরে বের হয়ে আসতে পারছিল শুধু শক্তিশালী এলইডি বাতির আলো। রাতে কুয়াশা আর ভোরের শিশির ঝরছে ঢাকায়। একটু আগেভাগে ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হলে, পার্ক বা খোলা জায়গায় হাঁটাহাঁটি করলে পায়ের পাতা পুরো ভিজে যাচ্ছে। 
তারও আগে থেকে গ্রামে-গঞ্জে বিরাজ করছে শীতের আমেজ। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর কথা তো কারও অজানা নয়। সৈয়দপুর নীলফামারী  রংপুর দিনাজপুর চুয়াডাঙ্গা পঞ্চগড় এলাকায় পুরোদমে শীত এখন। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ফজরের নামাজের পর শিশির মাথায় নিয়ে কুয়াশা ভেদ করে জমিতে কাজ করতে যাচ্ছেন কৃষক। বৃষ্টির কারণে এত শীত অনুভূত হচ্ছে যে, অনেকে অগ্রহায়ণকে পৌষ মাস জ্ঞান করছেন। প্রকৃতির এসব পরিবর্তন শীতের আগমনী গান ছাড়া আর কী!  
বার্তা পেয়ে গ্রামের মতো রাজধানী শহরও শীত নিবারণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে প্রস্তুতি দেখতে কেমন? একবার শুধু ঢাকা নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে আসুন। বুঝে যাবেন। শনিবারের কথা বলি, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেখানে গিয়ে আক্কেলগুড়ুম অবস্থা হলো। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত এলাকা লোকে লোকারণ্য। যানজটে স্থবির। পুরোটাজুড়ে চলছে শীতের কেনাকাটা। রাস্তার বাম পাশের সব মার্কেটে এবং সংলগ্ন ফুটপাতে শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। ক্রেতারাও বিপুল আগ্রহ নিয়ে দেখছেন। গায়ে দিচ্ছেন। কিনছেন। সব দেখে মনে হচ্ছিল ঈদ বাজার! অনেকে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে দু’হাতে ভিড় ঠেলে এ জায়গাটুকু পার হয়েছেন। 
মোহাম্মদপুর থেকে আসা এক গৃহবধূর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। সুবর্ণা নামের এই গৃহবধূ বলছিলেন, আমি তো আগেভাগে শীতের কাপড় কিনতে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম, এখন কে আর কিনতে আসবে? এসে দেখছি  কাড়াকাড়ি অবস্থা। তবে নিউমার্কেট এলাকার ভিড় ঠেলে বেশ অভ্যস্ত জানিয়ে তিনি বলেন, কেনাকাটা করেই বাড়ি ফিরব!     
নিউ মার্কেট, গাইছিয়া বা হকার্স মার্কেটের মতো রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও জমে উঠেছে শীতের কেনাকাটা। ফার্মগেট মোড়ে বাটার শোরুমে যেমন ভিড়, তেমনি ভিড় সামনের ফুটপাতে। সেখান থেকেও  কেড্স বা কাপড়ের জুতা কিনছেন বিভিন্ন বয়সী ক্রেতা। শীত উপলক্ষে রাজধানীর ফুটপাতে যেসব পিঠার দোকান, সেগুলোতেও  ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। একসঙ্গে ৮ থেকে ১০টি চুলো একসঙ্গে জ্বলছে। সেগুলোতে চলছে পিঠা তৈরির কাজ। টিএসসির আড্ডাগুলোও নতুন প্রাণ পেয়েছে। 
এসবের বাইরে আবহাওয়া অফিসও বলছে, সন্নিকটে শীত। শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি  সেলসিয়াস কমতে পারে। দিনের তাপমাত্রাও কমতে পারে সামান্য (১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম)। এভাবে ক্রমে তাপমাত্রা কমতে থাকবে বলেই মত আবহাওয়াবিদদের।  
তাই বলে আগামী কাল থেকেই পুরোদমে শীত নেমে যাবে এমন নয়। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলছেন, বৃষ্টির কারণে তাৎক্ষণিকভাবে ঠাণ্ডা অনুভূত হলেও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেছে। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমার পর শীত অনুভূত হবে। এ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শীত অনুভূত হতে পারে। আর আনুষ্ঠানিক শুরুটা হবে আগামী ১ পৌষ থেকে। চলবে মাঘ পর্যন্ত। প্রস্তুত তো আপনি?

×