ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘শাহাবুদ্দিনের শিল্প : রক্তের রাগ ও অশ্রুর দাগ’ শীর্ষক সেমিনার

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:১৯, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

‘শাহাবুদ্দিনের শিল্প : রক্তের রাগ ও অশ্রুর দাগ’ শীর্ষক সেমিনার

রক্তের রাগ ও অশ্রুর দাগ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ

শোনালেন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা। ভয়াবহ সেই বিভৎসতার মধ্যেও নিজের শিল্পীময়তার বহির্প্রকাশ, যা উজ্জীবিত করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের। শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনের গল্পে উঠে এলো অনেক কষ্ঠ ও অদম্যতার কথা। তিনি হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ। জাতীয় জাদুঘর আয়োজিত ‘কালার অব ফ্রিডম’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং ‘শাহাবুদ্দিনের শিল্প : রক্তের রাগ ও অশ্রুর দাগ’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভায় শিল্পী হয়ে ওঠার বাস্তব প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে মঙ্গলবার বিকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাদুঘর পর্ষদের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সম্মানিত অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। মুখ্য আলোচক ছিলেন শিল্প সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশ নেন চলচ্চিত্র নির্মাতা অজয় রায়।
শিল্পী শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি মেঘনা পাড়ের ছেলে। মেঘনায় ডুব দিতে না পারলে স্বস্তি হতো না ছোটকালে। ঢাকায় পড়তে এলেও প্রায়ই যেতাম সেখানে। ছোটবেলা থেকে সেই অজান্তে ছবি আঁকা। মুক্তিযুদ্ধের সেই বহাবহতা আমি ভুলবা ন, ভুলতে পারি না। মনে আছে ট্রেনিংয়ের সময় প্রায় এক মাস ৯ দিন ধরে আমি বিভিন্ন রকমের ছবি এঁকেছি। কোনো এক সময় অন্য মুক্তিযোদ্ধারা জেনে যায় আমি ছবি আঁকি। তার পর থেকে সবাই আমাকে শিল্পী শিল্পী করতে থাকে। আমি তো তখন দ্বিতীয় বর্ষ। তখন কাগজ, রং কিছুই পাইনি। খুব কষ্টে বিভিন্ন দোকান থেকে ক্যালেন্ডার জোগাড় হয়, তার উল্টো পিঠে পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকার চেষ্টা ছিল কিন্তু তা ব্যর্থ হয়।

আমাদের সঙ্গে ছিল সংগীতশিল্পী আজম খান। সে গান হাইতে পারত আর আমি ছবি আঁকতে পারতাম। পরে ছবি আঁকার কিছুটা সুযোগ হয়। ট্রেনিংয়ের সময় ১৫ দিন ধরে আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবির পোর্টেট করলাম। যে মানুষটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে আসা, তার ছবি আঁকা ছিল আমার আরেক স্বপ্ন। সব মিলে ১২ টি ছবি দিয়ে শুরু হয় বিশেষ আয়োজন। সেই অনুষ্ঠানও আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আজম খানের গান আর আমার ছবি দিয়ে দারুণ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অন্য শিল্পীরাও অংশ নিয়েছিল কিন্তু মুখ্য ছিলাম আমি আর আজম খান। এর পর শিল্পী শাহাবুদ্দিন প্যারিসে পড়ালেখার বিষয়ও তুলে ধরেন তার আলোচনায়।
মূখ্য আলোচক মইনুদ্দীন খালেদ বলেন, চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ দেশে ও বিদেশে কম করে হলেও একশ’র মতো একক প্রদর্শনী করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে আমি মনেকরি শিল্পী শাহাবুদ্দিন আমাদের রেনেসাঁ। তিনি সব সময় মানুষকে নিয়ে চলেন, তার ছবিতে শিশু থেকে শুরু করে দিন মজুরসহ সব শ্রেণির মানুষকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তার ছবিতে মনের কথা উঠে আসে। যা অন্য শিল্পীর থেকে আলাদা। তার ছবিতে বেশি আছে যুদ্ধংদেহী মানুষ। শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ কিভাবে বিবর্তিত হয়েছেন সেসব ছবি প্রদর্শনের ফাঁকে ফাঁকে সেসব ছবি নিয়ে আলোচনা করেন মইনুদ্দীন খালেদ।
এর আগে জাদুঘরের সচিব গাজী মো. ওয়ালি উল হকের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আলোচনা। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর প্রদর্শিত হয় শিল্পী শাহাবুদ্দিনের জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘কালার অব ফ্রিডম’।
ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা নাইট উপাধি পাওয়া বাংলাদেশের গর্ব শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদকে নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিক অজয় রায় প্রায় ২৫ বছরের চেষ্টায় তৈরি করেছেন ‘কালার অব ফ্রিডম’ নামের প্রামাণ্যচিত্র। চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ আগরতলার মেলাঘরে গিয়ে বিশাল ক্যানভাসে মুক্তিযুদ্ধের ছবি এঁকেছিলেন। ‘কালার অব ফ্রিডম’ এ তারও ছবি আছে। সে সময় হারিকেনের সলতের কালি আর আইভরি পেনসিল দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর যে ছবি এঁকেছিলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে  স্টেনগান হাতে তার ছবি, প্যারিসে  যেখানে বসে  তৈরি হয়েছিল তার প্রথম চিত্রকর্মটি, শাহাবুদ্দিন সম্পর্কে বিদেশের বিখ্যাত চিত্রকলা সমালোচকদের মূল্যায়ন, শিল্পী সম্পর্কে ভারতের রাষ্ট্রপতির বক্তব্য- এসব বিষয় স্থান পেয়েছে ‘কালার অব ফ্রিডম’-এ।

×