
জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস হচ্ছে বর্ষাকাল। বর্ষাকালের আরেক সৌন্দর্যের নাম হচ্ছে কদমগাছের হলুদ আর সাদার আভায় বের হওয়া কদমফুল। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে থাকা এই কদমফুলগুলো খুব সহজেই মনকাড়ে ফুল প্রেমীদের। কিন্তু প্রশ্ন জেগেছে বর্ষার এই ফুল বৈশাখেই জেগে উঠেছে প্রাকৃতিক ভাবে বাড়ির আনাচে-কানাচে কিংবা রাস্তার পাশে বড় হওয়া কদম গাছে। গ্রামের ছোট বাচ্চাদের খেলার প্রধান উপকরন হিসেবে এই কদমফুলের কোন জুড়ি নেই।
বর্ষার আগেই কদম ফুল দেরখ পথচারীরা বড় বড় চোখে চাকিয়ে থাকছেন। কারনটা অতিসহজেই অনুমিয় যে উত্তরাঞ্চল সহ সারা দেশ রোদে পুড়ছে। চারিদিকে দুর্বিসহ গরম। হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রতিটি দুপুর অগ্নিময় হয়ে উঠছে। রাস্তাঘাট, মাঠ-ঘাট, গাছপালা সব যেন জ্বলছে অদৃশ্য আগুনে। এই দুর্বিষহ দাবদাহের মধ্যে কৃষ্ণচূড়ার সাথে বর্ষার দূত হিসেবে আখ্যায়িত কদম ফুলও ফুটে উঠেছে! কদম ফুলের ফুটে উঠা দেখে রবিবার (১১ মে) অনেকে মন্তব্য করে বলছেন দাবদাহে যেন প্রকৃতি নিজেই নিজের ব্যথাকে রাঙিয়ে তুলেছে লাল কৃষ্ণচুড়ায় শোভায়। আবার বর্ষার ফুল কদম এসে জানান দিচ্ছে আমি অমলীন বিমোহিত সৌন্দর্য ছড়াতে এসেছি তাপদাহের আগুন নেভাতে। কিন্তু বাস্তবায়তায় বৃস্টির দেখা নেই। গত দুইদিন ধরে নীলফামারী সহ উত্তরাঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪০ এর ঘরে পৌছে গেছে যেন।
আমাদের বাংলাদেশ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এবং ঋতুর বর্ষা এক অনন্য ঋতু। আর বর্ষার আগমনকে স্বাগত জানাতেই হয়তো আগাম হিসাবে কদমফুল প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে এসেছেন। কদম ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হন না এমন বেরসিক মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আবার প্রেমিকার মনোরঞ্জনে কদমের জুড়ি নেই। সোনা ও রূপার রঙের কদম ফুল নিয়ে রচিত হয়েছে নানা গল্প, উপন্যাস, কবিতা আর গান। মানব কল্যাণে প্রকৃতির সৃষ্টি অসংখ্য ছোট-বড় মাঝারি বৃরাজির অংশ বিশেষ কদম ফুলের জুড়ি নেই।
নীলফামারী সহ উত্তরাঞ্চলের পথে-প্রান্তরে কদম গাছগুলো ভরে উঠতে শুরু করেছে ফুলে ফুলে। বিভিন্ন সড়কের পাশে এখন হলুদ আর সাদায় সেজেছে সর্বত্র। বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে কদম ফুলের। গাছের শাখে শাখে সবুজ পাতার আড়ালে ফুটে উঠেছে অসংখ্য কদম ফুল। অসংখ্য কদম ফুল গাছ দেখা মিলছে যেখানে সবুজ পাতার ফাঁকে উকি দিচ্ছে হলুদ বর্নের অসংখ্য কদম ফুল।
নীলফামারী শহরের সবুজপাড়ার শিক্ষার্থী আফসারা বলেন এই খরা মৌসুমে কদম ফুল ফোটে এমনটা এলাকাবাসী কখনো দেখেনি। স্কুল শিক্ষক জেসমিন নাহার বলেন, এত পরিমাণ গাছে কদম ফুল ফুটছে, তা দেখে মনে হচ্ছে এখন যেন আষাঢ় মাস। কদম ফুটলেও নেই বৃষ্টি। বিপরিতে আগুনের ফুলকি ঝড়ছে আকাশে বাতাসে। রোদের প্রচন্ড তাপে যেন জনজীবন থমকে থেকে।
বিভিন্ন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক সহ উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ আনোয়ার হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আর আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে উদ্ভিদের পরিবর্তনের কারণে অসময়ে কদম ফুল ফুটছে। পরিবেশবাদী সংগঠনের সৈয়দপুরের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, বর্ষার বন্দনায় আমাদের গানে কবিতায় ও শিল্প-সাহিত্যে কদম ফুল স্থান পেয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে তাপমাত্রারও হয়েছে পরিবর্তন।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মহসিন রেজা রূপম বলেন, বৈশাখে কদম ফুল ফুটলেও বর্ষার কদমের চেয়ে ছোট আর ক্ষণস্থায়ী এটি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কিছুটা কারণ আছে বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
এদিকে আবার কৃষ্ণচূড়ার রঙ যেন মাটির সমস্ত পিপাসা, সমস্ত ক্লান্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগুনের মতো লাল ফুলগুলো যখন ঝড়ে পড়ে, মনে হয়, ধরা যেন আপন মনের তাপকে মাটিতে ছড়িয়ে দিচ্ছে।কৃষ্ণচূড়ার রঙ যেন মাটির সমস্ত পিপাসা, সমস্ত ক্লান্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগুনের মতো লাল ফুলগুলো যখন ঝড়ে পড়ে, মনে হয়, ধরা যেন আপন মনের তাপকে মাটিতে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ক্লান্ত বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার গন্ধও যেন হালকা সান্তনা নিয়ে এসে বলতে চায়, তাপদাহের শেষেই আছে এক প্রশান্তির আহবান। প্রতি বছর এই সময় কৃষ্ণচূড়া শুধু ফুল ফোটায় না, ফোটায় এক রকম আবেগ। মনে করিয়ে দেয় কঠিন সময়ের মাঝেও রঙিন হয়ে ওঠা যায়।প্রতি বছর এই সময় কৃষ্ণচূড়া শুধু ফুল ফোটায় না, ফোটায় এক রকম আবেগ। মনে করিয়ে দেয় কঠিন সময়ের মাঝেও রঙিন হয়ে ওঠা যায়। দাবদাহ যতই তীব্র হোক, প্রকৃতি কখনো রূপ হারায় না; বরং নিজের ব্যথাকেই সে রাঙিয়ে তোলে অনন্য সৌন্দর্যে। দাবদাহ যতই তীব্র হোক, প্রকৃতি কখনো রূপ হারায় না; বরং নিজের ব্যথাকেই সে রাঙিয়ে তোলে অনন্য সৌন্দর্যে। এই প্রচন্ড উত্তাপের দিনে, কৃষ্ণচূড়ার আগুন যেন এক নীরব গান গাইছে-জীবন, ভালোবাসা আর সৌন্দর্য কখনো থেমে থাকে না। এই প্রচন্ড উত্তাপের দিনে, কৃষ্ণচূড়ার আগুন যেন এক নীরব গানগাইছে-জীবন, ভালোবাসা আর সৌন্দর্য কখনো থেমে থাকে না।
রাজু