
বগুড়া সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে টুপি আতরের পসরা
টুপি, আতর, সুরমা, জায়নামাজ, তসবি, কাঁধে জড়ানো গামছা বিক্রি বেড়েছে। পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি মসজিদের সামনে ছোট সামিয়ানা টাঙিয়ে এমন পসরা বসায় দোকানিরা। মুসল্লিগণ মসজিদে প্রবেশের আগে সুগন্ধি মাখিয়ে নিজেদের পাক সাফ করে নেন। বছরের অন্য সময়ও টুপি আতর বিক্রি হয়। তবে রমজানে বেচাকেনা বেশি। যার টুপি আছে তিনিও নতুন কেনেন। যার নেই তিনি তো কিনবেনই। আর আতর না মাখলেই যেন নয়। সুগন্ধি আতরে নিজের এবং আশপাশের লোকজনের মধ্যে পবিত্রতা চলে আসে। আতরের সুগন্ধের পবিত্রতায় অনেকের মন থেকে খারাপ চিন্তা দূর হয়ে যায়।
হালে টুপির অনেক ধরন। কত যে বাহারি টুপি এসেছে। সাধারণ মানের টুপির দাম অবশ্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। তবে বেশি দামেরও আছে। বগুড়া নগরীর স্টেশন রোডের ধারে বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে সাধারণত একটি টুপি আতরের দোকান বসে। রমজান মাসে বসেছে ছয়টি। দোকানিরা জনালেন বেচাকেনা চলবে ঈদের রাত পর্যন্ত। তরুণ দোকানি আতাউল জানালেন তিনি ঢাকার চকবাজার থেকে টুপি কিনে আনেন। আগে বগুড়ার ধুনটে ক্রুজ কাঁটার টুপি তৈরি হতো। এই টুপির দাম বেশি। বর্তমানে ক্রুজ কাঁটার টুপির মতো দেখতে এক ধরনের টুপি পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো মেশিনে তৈরি। দামও কম। প্রতিটি টুপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ৩০ টাকায়। ক্রুজ কাঁটায় বোনা টুপির দাম ৮০ টাকা থেকে একশ’ টাকা। এই টুপি রপ্তানি হচ্ছে।
বাহারি যে টুপি পাওয়া যাচ্ছে তার কিছু বগুড়ার তৈরি। কিছু ঢাকার। ঢাকার চকবাজারে টুপির বড় মার্কেট তৈরি হয়েছে। বাইরে থেকে বেশ কিছু টুপি আসছে। সৌদি আরবের টুপির দাম বেশি। একশ’ টাকা থেকে পাঁচশ’ টাকা দামের মধ্যে। এর চেয়ে বেশি দামের আছে। যার দাম সাতশ’ থেকে হাজার টাকা। তবে এই টুপি মসজিদের সামনের দোকানে পাওয়া যায় না।
টুপির পাশাপশি আতরের চাহিদা বেশি। আতরেরও অনেক দাম। ছোট্ট এক শিশি আতরের দাম ৫০ টাকা থেকে দুইশ’ টাকা। এর চেয়ে বেশি দামেরও আতর মিলছে। দাম তিনশ’ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। মিসকে আম্বর, দরবার এই ধরনের আতরের দাম বেশি। আতর ও টুপি যত বিক্রি হচ্ছে সুরমা বিক্রি ততটা নয়। বর্তমান প্রজন্মের অনেকে সুরমা চেনেও না। দোকানি আতাউল বললেন, তিনি সুরমা তুলেছিলেন। বেশি বিক্রি হয় না। দামও বেশি। পাথর সুরমা গুঁড়া করতে হয়। অতীতে সুরমার কদর ছিল। সুরমা চোখে দিলে চোখ সুন্দর দেখায়। সুরমা দেওয়াটাও কঠিন। আগে সুরমাদানি ছিল। দানির কাঠি অথবা পানের বোঁটা দিয়ে সুরমা দেওয়া হতো। এখন সুরমার ব্যবহার নেই বললেই চলে।
রমজান মাসের পবিত্রতায় পরিষ্কার কাপড় পরে অজু করে টুপি পরে আতর মেখে তসবি তেলাওয়াত মনকে পাপমুক্ত রাখার অন্যতম বিষয়। এর সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও যে যত আমল করবে তার পাপ মুক্ত হওয়ার পথ সুগম হবে। যারা টুপির দোকান থেকে আতর টুপি কিনছেন তারা নিজেদের কলুষমুক্ত রাখতেই কিনছেন। রমজানের পবিত্রতায় আতর টুপি তসবি নিজেকে পাপমুক্ত করে রাখার অন্যতম সঙ্গী হয়ে এসেছে।