.
রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ খাল দখল-দূষণে জর্জরিত। শহরের জলাবদ্ধতারও অন্যতম কারণ। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে কালুনগর, জিরানী, মান্ডা ও শ্যামপুর খালের কিছু অংশ উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মোট উদ্ধার করা হবে ১৯ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার। উদ্ধারের পর খালপাড় সাজানো হবে উন্নত দেশগুলোর আদলে। খাল ঘিরে তৈরি হবে সেতু, সুরক্ষা বেষ্টনী ও ওয়াকওয়ে। থাকবে ফোয়ারা, বিনোদনকেন্দ্র, সাইকেল লেন ও নান্দনিক বাতির ঝলকানি।
এ কাজের জন্য ‘খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি শীর্ষক প্রকল্প’ হাতে নেয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯৮ কোটি ৯৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই, ২০২২ থেকে ডিসেম্বর, ২০২৫। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন খালগুলোতে সুষ্ঠু পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা, জীবনযাত্রার মান ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, খালগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনার মাধ্যমে নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদ আহাম্মদ বলেন, আমাদের খালগুলো উদ্ধার করে উন্নয়ন জরুরী। এতে একদিকে নগরীতে যেমন বিনোদনের পরিবেশ তৈরি হবে, অন্যদিকে সৃষ্টি হবে পানিপ্রবাহ। খালগুলো উদ্ধার করা গেলে জলাবদ্ধতা থেকেও নগরবাসী পরিত্রাণ পাবে। এ জন্য ৮৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে খালে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, দূষণমুক্ত করা ও সাধারণ পানিপ্রবাহ বজায় রাখা হবে। দৃষ্টিনন্দনরূপে খালগুলোকে সাজাতে হাঁটাপথ, পার্ক, বসার জায়গা, রেস্তোরাঁ ও বিনোদনকেন্দ্র রাখার সংস্থান রেখে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।’
প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, এই প্রকল্পের আওতায় ২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার কালুনগর খাল উন্নয়ন, ৩ দশমিক ৯০ কিলোমিটার জিরানী খাল উন্নয়ন, ৮ দশমিক ৭০ কিলোমিটার মা-া খাল উন্নয়ন ও ৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার শ্যামপুর খাল উন্নয়ন করা হবে।
জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৭৫টি ওয়ার্ড ও ১০টি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। আয়তন ১০৯ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার। এখানে জনঘনত্বও অনেক বেশি। গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। ডিএসসিসি ঘিরে রয়েছে বুড়িগঙ্গা, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী। কালুনগর খাল মূলত হাজারীবাগ খাল নামে পরিচিত। ধানমন্ডি লেক, রামপুরা খাল, জিরানী খাল (খিলগাঁও থেকে বাসাবো খাল), মান্ডা খাল (বেগুনবাড়ি), জোয়ারি খাল, ওয়াপদা খাল, কাজলা খাল ঢাকা দক্ষিণের আওতায়। এ ছাড়া ডিএ্যান্ডডি রোডসাইড খাল, কুতুবখালী খাল, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডসাইড খাল ও শ্যামপুর খাল রয়েছে।
ডিএসসিসি জানায়, রাস্তা, ফুটপাথ, মিডিয়ানসহ অন্যান্য এলাকা থেকে বৃষ্টির পানি বিভিন্নভাবে খালে যায়। অবৈধ দখল ও ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়ায় ড্রেনেজ লাইন থেকে যথাযথভাবে পানি নিষ্কাশিত হতে পারে না। নগরীর আকার-আয়তন বাড়লেও জলাশয় ও খাল কমেছে। বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। খালের পানিপ্রবাহ ঠিক না থাকায় মশা বংশবিস্তার করছে। বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসসিসি খালগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় এ প্রকল্প। কালুনগর খাল শহীদ বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারী মহাবিদ্যালয় থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট পর্যন্ত, জিরানী খাল নন্দীপাড়া ব্রিজ ত্রিমোহনী পর্যন্ত, বেগুনবাড়ি খাল নামে পরিচিত মান্ডা খাল দখলমুক্ত করা হবে। এ ছাড়া ঢেলে সাজানো হবে শ্যামপুর খালও।
খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ, দূষণমুক্ত ও সাধারণ পানিপ্রবাহ বজায় রাখতে কাজ করা হবে। নয়নাভিরাম ও দৃষ্টিনন্দনরূপে খালগুলোকে সাজাতে হাঁটাপথ, পার্ক, বসার জায়গা, রেস্তোরাঁ ও বিনোদনকেন্দ্র রাখার সংস্থান রেখে আলোচ্য প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া সাইকেল লেন, শিশুদের খেলার জায়গা, গণশৌচাগার, উন্মুক্ত ব্যায়াম করার স্থান থাকবে। প্রকল্পের কার্যাবলীর মধ্যে থাকছে ৩৬টি পদচারী সেতু, ১৯টি গাড়ি চলাচল সেতু, তিনটি পাম্প হাউস, ৩৬ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন সুরক্ষা বেষ্টনী, ১০টি পাবলিক টয়লেট, ৩২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ২ হাজার ৪০ মিটার নিকাশ কাঠামো, চারটি প্লাজা, দুটি ফোয়ারা, ১৩ লাখ বর্গমিটার ঢাল সুরক্ষা ও ৭৭১টি নান্দনিক বাতি।