ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গোপাল নাথ বাবুল

শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন

কুয়াশার ঘন চাদর মুড়ি দিয়ে শীতনন্দিনী এসে বিদায় জানায় হেমন্তকে। ধরিত্রীর শীতল নিঃশ্বাসে চারদিক শীতল হয়ে যায়। শীত ঋতুতে প্রকৃতি এক এক করে তার সমস্ত আভরণ খুলে ফেলে দীনহীন বেশ ধারণ করে সর্বত্র যেন একটি মলিন ভাব বিরাজ করে। শীতের আলোর প্রত্যাশায় থাকে সবাই উদগ্রীব। কুয়াশার চাদর ভেদ করে যখন সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ে, তখন আবালবৃদ্ধবনিতা সবার আনন্দের সীমা থাকে না। গাছ-পালা, বাড়ি-ঘর, বন-প্রান্তর হঠাৎ যেন সবই ঝলমল করে উঠে। তখন শুধু গরম কাপড় গায়ে জড়িয়ে জবুথবু হয়ে কাঁপুনি নয়, শীত উৎসবের উপলক্ষও হয়ে ওঠে। অজপাড়াগাঁ থেকে শহর পর্যন্ত তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশে চলে শীতকালীন নানা উৎসব। নানা মেলা, নানা পার্বণ, পিঠা উৎসব, যাত্রাপালা, ঘুড়ি ওড়ানো ও লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মিলে শীতকাল আমাদের কাছে উৎসবের ঋতু হয়ে ধরা দেয়। মানুষ তখন নানা সাজে নিজেকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলে। এ সময়ে উৎসবের আমেজে আত্মীয়রা একে অপরের বাড়িতে বেড়াতেও যায়। মাঠ-ঘাট শুষ্ক থাকায় গ্রামের কিশোর-কিশোরীরা মেতে উঠে বিভিন্ন খেলাধুলায় ও অল্প পানিতে মাছ ধরার উৎসবে। অল্প দামে তাজা ও পুষ্টিকর শাক-সব্জি হাত বাড়ালে পাওয়া যায়। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পরে শীতের আগমন বলে কোন টেনশন কাজ করে না। তাই সারাদিন হৈ চৈ করে কাটিয়ে দিয়ে সন্ধ্যায় মুখ-হাত ধুয়ে মায়ের সামনে চুলার পিছনে ভাই-বোন সবাই লাইন করে বসে পড়া, আর মা পরম যত্নে পিঠা বানিয়ে পরম আদরে তুলে দিচ্ছেন এক এক করে ভাপা পিঠা। তা খেঁজুর রসে ডুবিয়ে খেতে কী যে মজা ও আনন্দ, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। স্বর্গসুখও যেন এ সুখের কাছে হার মানতে বাধ্য। তাই কবি সুফিয়া কামাল পিঠা খাওয়ার আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বলেছেন, ‘পৌষ মাসে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে/আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।’ এ সময় বাগানের গোলাপ, বেলি, বকুল, চামেলি ও শিউলি ফুলের মৌ মৌ গন্ধে সকলের মন ভরে যায়। শুধু দেশেই নয়। বিদেশেও শীতকালীন বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবছর বিশাল পৌষমেলা। চীন, জাপান, শ্রীলংকা, নেপাল, ব্রাজিলসহ পাকিস্তানের মতো দেশেও নানা ধরনের শীতকালীন উৎসব হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়, জাপানের সাপ্পোরো স্লো ভেষ্টিভ্যাল ও ব্রাজিলের রিওতে অনুষ্ঠিত শীতকালীন কার্নিভালে ঐতিহ্যবাহী পোশাকের সঙ্গে সাম্বানৃত্য। পরিশেষে বলা যায়, শীতের আনন্দে আমরা সব দুঃখ-বেদনা ভুলে যাই। ভুলে যাই, নিশিথ রাতের হিম ঝরা কুহেলী স্মৃতি, কায়িক অপারগতা সমৃদ্ধ হয় শীতের মোহন ঋতুর ছোঁয়ায়। পরম সুখ জীবনে হাতছানি দিয়ে ডাকে। তখন আমরা ঘনিষ্ঠ হই একে-অপরের সঙ্গে, মিলিত হই মহাজীবনের পরিশুদ্ধ প্রান্তরে। দোহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে
×