ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সুনামগঞ্জের হাওড়াঞ্চলে বন্যার অবনতি, কুড়িগ্রামে নদী ভাঙ্গন

সিলেটে ৩৩২ কিমি সড়ক এখনও পানির নিচে

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২২ মে ২০২২

সিলেটে ৩৩২ কিমি সড়ক এখনও পানির নিচে

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ সিলেটে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। শনিবার বৃষ্টির মাত্রা ছিল কম। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। এভাবে পানি কমে যাওয়া অব্যাহত থাকলে আরও ২/৩ দিনের মধ্যে নগরীর পানিবন্দী মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগ কমেনি। বিদ্যুত ও গ্যাসহীনতা, খাবার পানির সঙ্কটের পাশাপাশি উপদ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত গ্রাম এলাকায় হাটবাজার, রাস্তাঘাট এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। ত্রাণ তৎপরতা যথাযথ না থাকায় বানভাসি গরিব শ্রেণীর মানুষ কষ্ট ভোগ করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায় ‘বর্তমানে বন্যার পানি কমছে। ফলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি আরও উন্নতির দিকে যাচ্ছে। বন্যায় যেখানে যেখানে বাঁধ ভেঙ্গেছে, সেখানে আবার নতুন করে বাঁধ দেয়া হচ্ছে।’ প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটে যে নদী ও খালগুলো আছে, সেগুলো ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ড্রেজিং করার লক্ষ্যে আমরা এখানকার নদীগুলো নিয়ে স্টাডি করছি। সিলেটের সুরমা নদীর গতিপথ ঠিক থাকলেও এর ড্রেজিং করতে হবে। এ লক্ষ্যে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এখনও প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন হয়নি, তবে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলছে।’ সুরমা নদীর ড্রেজিং হয়ে গেলে সিলেটে বন্যার সমস্যা কমে যাবে। এদিকে, সিলেটে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও কুশিয়ারাতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নগরসহ আশপাশের এলাকার পানি কিছুটা কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৯টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার এ দুটি পয়েন্টে পানিপ্রবাহ যথাক্রমে ১১ সেন্টিমিটার ও ৭ সেন্টিমিটার কমেছে। এ ছাড়া শনিবার একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর আমলসীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫৫ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার আমলসীদে ১১ সেন্টিমিটার ও শেওলায় ৩ সেন্টিমিটার পানিরপ্রবাহ কম ছিল। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি শুক্রবারের চেয়ে শনিবার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবার এ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে শুক্রবারের মতো শনিবারও সুরমার পানি কমা অব্যাহত আছে। শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের দিনের চাইতে কয়েক সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে। সিলেটের ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ৩২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৩৩২ কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে ॥ এখনকার বন্যায় সিলেট সড়কের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। জেলায় সওজ ও এলজিইডির আওতাধীন মোট ১২১টি সড়কের ৩৩২ কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়াও ভেঙ্গে গেছে ২টি কালভার্ট। এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইনামুল কবীর জানান, ‘বন্যায় ১১১টি রাস্তার ২৬৭ কিলোমিটার অংশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলা ও কোম্পানীগঞ্জে ২টি কালভার্ট ভেঙ্গে গেছে। যেহেতু রাস্তার ওপরে এখনও পানি, তাই ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।’ সড়ক বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ‘সিলেটের আন্তঃজেলা ১০টি প্রধান সড়কের ৬৫ কিলোমিটার অংশ প্লাবিত হয়েছে, এর মধ্যে ৫টি সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। জকিগঞ্জে বাঁধ ভেঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ২টি সড়কে পানি দ্রুত বাড়ছে।’ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ॥ সিলেটের গোয়াইনঘাটে পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে ‘ওয়ার্ল্ড বাংলা ফাউন্ডেশন’। নন্দিরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের চৌধুরীকান্দি গ্রামে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে চিড়া, মুড়ি, গুড়, স্যালাইন ইত্যাদি শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। এ সময় পানিবন্দী মানুষকে সান্ত¦না, ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হয়। রোটারি ক্লাব ॥ রোটারি ক্লাব সিলেট জোনের উদ্যোগে সিলেট নগরীর মেন্দীবাগ এলাকার বনার্তদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, সাবেক ডিস্ট্রিক্ট ট্রেজারার মিজানুর রহমান, পিপি এ্যাডভোকেট ইসতিয়াক আহমদ, পিপি রোমান খান, রোটারি ক্লাব অব সিলেট রাইজিং স্টারের প্রেসিডেন্ট ইউনুছ আলী, রোটারি ক্লাব সিলেট ডাউন টাউনের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ মাদানী, রোটারি ক্লাব অব সিলেট সিটির সেক্রেটারি এস এ শফি। এ সময় এলাকার তিন শতাধিক বন্যার্তদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য যা যা করার, তার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন ॥ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় পৃথকভাবে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনকালে খাদ্যসমগ্রী বিতরণ করেন মন্ত্রী। এ সময় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য যা যা করার, তার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সিলেটের বন্যাদুর্গত এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২৫ লাখ টাকা ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি আমার ঐচ্ছিক তহবিল থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় আরও ১২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারে যত দিন আছে সিলেটবাসী মনে রাখবেন, আপনাদের একজন বন্ধু আছেন।’ এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ মজিবর রহমান, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদ, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান, গোয়াইনঘাট সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুল হক, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল আলী মাস্টার, সুভাস চন্দ্র পাল ছানা, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও লেঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, গোয়াইনঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক কামরুল হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাংবাদিক সুবাস দাস, ফারুক আহমদ, সিরাজ উদ্দিন, লুৎফুল হক, নাছির উদ্দীন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালিক, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম কিবরিয়া রাসেল, বিধান চন্দ, সোহান দে, মিছবাহ আহমদ, এম মহিউদ্দিন মহি, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শামীম আহমদ ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। মন্ত্রী সকাল সাড়ে ১০টায় নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের সালুটিকর বাজারে ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ত্রাণ বিতরণ করেন। দুপুর ১২টায় গোয়াইনঘাট সদর ইউনিয়ন, লেঙ্গুড়া ইউনিয়ন, ডৌবাড়ী ইউনিয়ন ও পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। সুনামগঞ্জে হাওড়াঞ্চলে বন্যার অবনতি ॥ নিজস্ব সংবাদাতাম সুনামগঞ্জ থেকে জানান, সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। হাওড়াঞ্চলে আরও অবনতি হয়েছে বন্যার। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে এবং সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হাওড়ের দিকে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যায় পানিবন্দী মানুষ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কট। বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে, চুলা ও টয়লেটে পানি ওঠায় চরম দুর্ভোগে আছেন তারা। নিজেরা অন্যত্র উঁচু স্থানে আশ্রয় নিলেও গরু-বাচুর, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব বানভাসি। প্রত্যন্ত হাওড়াঞ্চলের বন্যার্তদের মাঝে এখনও কোন ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। শহর ও শহরতলির কিছু কিছু এলাকায় ত্রাণ সহায়তা গেলেও চরম বিপাকে রয়েছে হাওড় এলাকার মানুষগুলো। কেউ কেউ উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে ঘরের ওপরে মাচা তৈরি করে অনিশ্চিত সময় পার করছেন। জেলার লক্ষাধিক মানুষের এখন বন্যাকবলিত। ঢলের পানিতে ভেঙ্গে গেছে কাঁচা ও আধাপাকা সড়ক। জেলা সদরের সঙ্গে দোয়ারাবাজার- ছাতক ও তাহিরপুর বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন আছে। ধর্মপাশা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অনেকগুলো সেতুর সংযোগ অংশ ভেঙ্গে যাওয়ার ওই সব এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চলাচলে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে জেলা সদরসহ সিলেট-ঢাকাগামী যাত্রীদের। এদিকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এবং ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত থাকার ফলে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কটের পাশাপাশি বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জ সদর, বিশ^ম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৮২৯ হেক্টর জমির বোরো ধান, ৭৫ হেক্টর বাদাম, আউশ বিজতলা ৭৪ হেক্টর, সবজি ৭০ হেক্টর ও ২০ হেক্টর জমির আউশ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। কুড়িগ্রামে বাড়ছে নদীর পানি, বাড়ছে নদী ভাঙ্গনের প্রকোপ ॥ স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলের কারণে কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের পানি বাড়ছে। তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের নিচু এলাকার উঠতি বোরো, বাদাম, ভুট্রা, বীজতলা ও সবজি খেত। পানি বাড়ার ফলে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন তীব্ররূপ ধারণ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলায় ১০, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে ১১ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তিস্তার পানি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে সবকটি নদ-নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজারহাট উপজেলার চর গতিয়াশাম গ্রামের কৃষক জোবাইদুল ইসলাম জানান, এই চরে আবাদ করা প্রায় ১০০ একর বাদামের খেত এখন পানির নিচে। একই অবস্থা তিস্তা পারের থেতরাই, বিদ্যানন্দ, বজরা, দলদলিয়া, ব্রহ্মপুত্র পারের হাতিয়া, যাত্রাপুর, বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চরগুলোর। এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীর ভাঙ্গন তীব্ররূপ নিয়েছে। রাজারহাটের গতিয়াশাম, মেকলি, বিদ্যানন্দ, সদর উপজেলার সারডোব, উলিপুরের বজরা, থেতরাই ও অর্জুন, নাগেশ্বরীর কচাকাটার তরিরহাট, রৌমারী ও রাজীবপুরের বিভিন্ন এলাকায় নদ-নদীর ভাঙ্গন চলছে। এসব এলাকায় গত এক সপ্তাহে অর্ধশত পরিবার গৃহহীন হয়েছে। নেত্রকোনায় ৫শ একর জমির বোরো ফসল প্লাবিত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জ থেকে জানান, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের কালিজানা বিল ও ভাটিপাড়া এলাকার প্রায় ৫শ’ একর বোরো জমি তলিয়ে গেছে। শ্রমিকদের দৈনিক হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে ধান কাটাতে হচ্ছে। জানা গেছে, তিন-চারদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। রোদ উঠছে না। পাশাপাশি কংস ও ধলাই প্রভৃতি নদী দিয়ে উজান থেকে ধেয়ে আসছে পাহাড়ী ঢলের পানি। এ কারণে জেলার নি¤œাঞ্চলগুলোতে পানির চাপ বেড়েছে। গত দু’দিনে বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের কালিজানা বিল ও ভাটিপাড়া এলাকার অন্তত ৫শ’ একর বোরো জমি তলিয়ে গেছে। বগুড়ায় যমুনা ও বাঙালীর পানি বেড়েই চলেছে ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস জানান, দ্রুতবেগে ধেয়ে আসছে উজানের ঢলের পানি। শুরু হয়েছে ঝড় ও টানা বৃষ্টি। বগুড়ায় যমুনা ও বাঙালী নদীর পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। যমুনায় বিপদসীমা ১৬ দশমিক ৭০ মিটার। শনিবার বিকেলে তা ছিল ১৬ দশমিক ২০ মিটার। বাঙালীর বিপদ সীমা ১৫ দশমিক ৮৫ মিটার। শনিবার বিকেলে ছিল ১৫ দশমিক ৩০ মিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে শনিবার মধ্যরাতের পরই বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে আগাম বর্ষা ও উজানি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। পানি প্রকৌশলীগণ আশঙ্কা করছেন বর্ষা শুরু হতে না হতেই উত্তরাঞ্চলে বন্যা আঘাত করতে পারে।
×