ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি রোধে কয়েকটি সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা

নিত্যপণ্যের বাজার আরও টালমাটাল হওয়ার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১৯ মে ২০২২

নিত্যপণ্যের বাজার আরও টালমাটাল হওয়ার আশঙ্কা

শংকর কুমার দে ॥ রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং বাজারের অবস্থা আরও টালমাটাল হওয়ার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির সুযোগ নিতে পারে মজুদদার, কালোবাজারি, পাচারকারী, অপরাধী চক্র। গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এ ধরনের অবস্থায় গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে অশুভ চক্র। এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি যাতে করতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি, জনগণের সচেতনতা তৈরি, প্রচার মাধ্যমের সাহায্য নেয়াসহ দেশের নিত্যপণ্যের মূল্যের উর্ধগতিরোধে কয়েকটি সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এমন পরিস্থিতিতে ভোজ্য ও জ্বালানি তেলসহ জরুরী প্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করেছে সরকার। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পণ্যের বাজারে টালমাটাল অবস্থার কারণে একদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে আমদানি ব্যয়, অন্যদিকে পণ্যের ঘাটতি। ফলে বাজারে হু হু করে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। একই সঙ্গে সঙ্কটের আশঙ্কায় মজুদ শুরু করেছে ভোক্তা থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে ভোজ্য ও জ্বালানি তেলসহ জরুরী প্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার বিষয়ে জনগণকে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করার পরও কালোবাজারি, মজুদদার, পাচারকারী চক্রের তৎপরতা থেমে নেই। ওএমএস কার্যক্রমের সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের মাঝে স্বল্পমূল্যে খাবার বিতরণ কার্যক্রম চালু না করলে দ্রব্যমূল্যর উর্ধগতি রোধ করা সম্ভবপর হবে না। এরই মধ্যে গম-আটার ঘাটতির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। বাজারে সমানতালে বাড়ছে চালের দামও। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর পরপরই একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারকে আগাম সতর্ক করা হয় বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে অর্থনীতিতে যুদ্ধের বিরূপ প্রভাব, আমদানি ও রফতানিতে সম্ভাব্য সঙ্কট, পণ্যবাজারের অস্থিরতাসহ সার্বিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বেশ কিছু সুপারিশ করে প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব সংক্রান্ত ওই বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয় প্রতি বছর রাশিয়া ও ইউক্রেনে সরাসরি ও অন্য দেশের মাধ্যমে তৈরি পোশাক, পাট, হিময়িত খাদ্য, চা, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক পণ্য, তামাক, মাছ, ওষুধ, সবজি ইত্যাদি রফতানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। অপরদিকে এই দুই দেশ থেকে বাংলাদেশে গম, ভুট্টা, সরিষা, মটর ডাল, মসুর ভাল, সূর্যমুখী তেল, খনিজসামগ্রী, রাসানিক পদার্থ, যন্ত্রাংশ ও প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন প্রকার পণ্য আমদানি করা হয়। এছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশ ও ছোট এই দুই দেশের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করায় সারা বিশ্বে জ্বালানি তেল, গ্যাসসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজারে অস্থিরতা এবং মূল্য বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে যুদ্ধের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বাংলাদেশেও নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তায় পড়ায় বিশ্ব পুঁজিবাজারে বড় অঙ্কের দরপতন ঘটেছে। যার প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারে পড়তে পারে বলে সরকারকে আগাম সতর্ক করে গোয়েন্দা সংস্থাটি। পণ্য আমদানি-রফতানিতে বিকল্প উপায় ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, যুদ্ধের কারণে ৩৬টি দেশের সঙ্গে রাশিয়ার বিমান যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পণ্য পরিবহনও ব্যাহত হচ্ছে। কৃষ্ণসাগর ব্যবহার করতে না পারায় অনেক জাহাজকে বহু দেশ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। যার কারণে পরিবহন খাতে আকাশ ও নৌপথে ব্যয় অনেকগুণ বেড়ে গেছে। দেশের বাজারে বেশ কিছু আমদানিনির্ভর পণ্যে ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তাই বিকল্প রুট অথবা আকাশপথ ব্যবহার করতে হবে। যুদ্ধের প্রভাব মোকাবেলায় গোয়েন্দা সংস্থাটির পক্ষ থেকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে কয়েকটি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা সুপারিশগুলো হলো ১. যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আগেই সরকারীভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে গম ও ভুট্টা আমদানি করে মজুদ করা। ২. রাশিয়া ও ইউক্রেন ছাড়াও বিশ্বের নতুন নতুন দেশে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য রফতানি পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা। ৩. রাশিয়ার ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়নে দেশে চলমান প্রকল্পসমূহের কার্যক্রম যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৪. কৃষ্ণ সাগরের আশপাশের দেশসমূহে যুদ্ধকালীন পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে আকাশপথ ব্যবহার করা। ৫. গম ও ভুট্টার আমদানি-নির্ভরতা কমাতে ও স্থায়ী সমাধানের জন্য দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রান্তিক কৃষকদের এ খাতে ভর্তুকি প্রদানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা। ৬. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দেশে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন অপপ্রচার চালিয়ে বা গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেই বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করা এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের শুরুর পর থেকেই বিশ্ববাজারসহ বাংলাদেশের পণ্যের বাজারে কি ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে সেই বিষয়ে সুপারিশ করে গোয়েন্দা সংস্থাটি।
×