
নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ ॥ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৭.৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি বইছে।
আর মাত্র করতে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে আরো ১০ সে. মি. পানি বাড়লেই বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জে বন্যা সতর্কতা জারি করে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ঢলের পানিতে ভেসে গেছে হাওরের উঁচু এলাকার বেশকিছু বোরো ফসল। পানিতে বাদামসহ নষ্ট হয়েছে মৌসুমি সবজি ক্ষেত।
এদিকে টানা বর্ষণে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়বন গ্রামের পাশের মাইজখলা গ্রামের পাশের হাওরের বাঁধ ভেঙে পানিতে ভেসে গেছে ৮টি বসত ঘর। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনদের দোয়ারাবাজার মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। পাহড়ী ঢলে ঘরে থাকা আসবাবপত্র, ধান-চাল, পানিতে ভেসে গেছে।গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। ইউপি সদস্য কাছম আলী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদেরকে স্কুলের ভবনে থাকার জন্য জায়গা দেওয়া হয়েছে।
জেলার সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহীম, সদরগড়, সৈয়দপুর এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার তিন ইউনিয়নের বরকত নগর, শরীপুর গোজাইড়া, মহব্বাতপুর মামদপুর, মারফতি গ্রামসহ অনন্ত ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। এছাড়াও জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু সড়ক ও ঘড়বাড়ি হয়েছে।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ঢলের পানিতে তাহিরপুর ও সদর উপজেলার উচ্চ এলাকার ২০ হেক্টর বোরো জমি তলিয়েছে। টানা বৃষ্টিতে রোদের দেখা না পাওয়ায় মাড়াইকৃত ধান নিয়ে বিপাকে আছেন কৃষকরা। ভেজা ধান শুকাতে না পারায় ধানের চারা গজানোর কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক।
সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের শফিজুল হক বলেন, ঢলের পানিতে রাস্তঘাট ডুবে গেছে। পানির কারণে চলাচল করতে অসিুবিদা হচ্ছে না। অনেকের ঘরে পানি উঠেছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার মহব্বতপুর দাইনিয়াল ইসলাম বলেছেন, ঢলের পানি দোয়ারাবাজার উপজেলার কাংলা, নাইন্দা, গোজাউরা, সিংরাই হাওরের স্কিমের ধান তলিয়ে আছে। পাহাড়ের সীমান্তবর্তী অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, ঢলের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এখনো পুরোপুরি নিরুপণ হয়নি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পানি শিগগিরই নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলা ১০ হেক্টর ও সদর উপজেলার ১০ হেক্টর জমির ইরি ধান তলিয়ে আছে। যা পাহাড়ী ঢল বন্ধ হলেই পানি নেমে যাবে এবং পরিস্থিতি সাভাবিক হয়ে উঠবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানিয়েছে, সুনামগঞ্জ ও মেঘালয়ে ভারী বর্ষণের কারণে বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল জমেছে। তবে তা অস্বভাবিক নয় বলে জানান তিনি।