ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অগ্নিকাণ্ডের খতিয়ান

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৮ জানুয়ারি ২০২২

অগ্নিকাণ্ডের খতিয়ান

দেশে প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ২০২১ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২২ হাজার ২২২টি। যা ২০২০ সালের চেয়ে ১ হাজার ৪৯টি বেশি। অর্থাৎ, ১ বছরে বেড়েছে ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩৩০ কোটি ১৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকার বেশি। জীবনহানির ঘটনা ঘটেছে ১৫০৪ জনের। অগ্নিদগ্ধ ও আহতের সংখ্যা ১১ হাজার ৯৯৯ জন। দেশে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা অপ্রতুল। রাজধানী ঢাকা ছাড়া আর কোথাও নেই পোড়া রোগীর চিকিৎসা। নতুন বছরের শুরুতে শুধু ঢাকাতেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ৫টি। কাপ্তানবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মুরগির মার্কেট পুড়ে যাওয়াসহ নিহত হয়েছেন ১ জন। সর্বশেষ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হলেও হতাহত হয়নি কেউ। ইন্টারন্যাশনাল ফায়ার সেফটি এ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপোর মতে, সারা দেশে প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। পোশাক শিল্প বাদে অন্যান্য শিল্প-কারখানা, বহুতল ভবন ও সুপার মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা প্রায় নেই বললেই চলে। থাকলেও অপ্রতুল, অপর্যাপ্ত অথবা অকেজো। যানবাহন যেমন- লঞ্চ-স্টিমার, দূরপাল্লার বাস এমনকি ট্রেনেও অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা আশানুরূপ নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জরুরী নির্গমনের ব্যবস্থাও নেই। ফলে বেড়েই চলেছে অগ্নিকাণ্ডের পরিমাণ। গণমাধ্যমসহ সর্বত্র ব্যাপক জনসেচতনামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখা জরুরী ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অগ্নিকা-ের শতকরা ৩৫ ভাগ ঘটে থাকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে। অথচ রাজধানীসহ অধিকাংশ শিল্পকারখানা ও ভবনে এ নিয়ে তেমন দেখভাল ও নজরদারি নেই। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থা ও ভবন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়েরও প্রচ- অভাব। ফলে অগ্নি দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছেই। রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অগ্নিদুর্ঘটনা যে মাত্রায় সংশ্লিষ্ট মানুষের জীবন ও জনপদকে আতঙ্কিত আর বিপর্যস্ত করে দেয়, তার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় যাপিতজীবনের যে দুঃসহ চিত্র তা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। সবচেয়ে অসহনীয় পরিস্থিতির সূত্রপাত ঘটে যখন কোন বহুতল ভবন কিংবা বস্তিতে আগুন ধরে যায়। উপস্থিত সঙ্কট মোকাবেলার চেয়েও বেশি দৃশ্যমান হয় অগ্নিকা- নিয়ে হরেক রকম অসংলগ্ন আলোচনা। এমন দুঃসহ মুহূর্তে কিছু মানুষের যুক্তি বুদ্ধি ও ক্ষমতা লোপ থাকে। আগুন নেভানোর চেয়েও গুজব রটাতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় কিছু মানুষকে। সেক্ষেত্রে সাধ্য ও প্রয়োজন মতো আধুনিক অগ্নিনির্বাপক প্রযুক্তি ও সামগ্রী আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে বৃহত্তর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রাখার ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সবার হাতের নাগালে থাকলে পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয় না। সর্বোপরি অগ্নিনির্বাপক ও নিরাপত্তার সরঞ্জাম আমদানি করার পরিবর্তে দেশেই সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ অত্যাবশ্যক। এর পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত প্রশিক্ষণ।
×