ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহবুব আলী

গল্প ॥ ফেরা না ফেরা

প্রকাশিত: ০০:০৫, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

গল্প ॥ ফেরা না ফেরা

তারপর সময় হলে মধ্যাহ্নের শেষভাগ, রেশন ডিলার আবুল কাশেমের দোকান বারান্দায় মানুষজনের ভিড়ে যে ছেলেটি ধীরে ধীরে ছন্দোবদ্ধ এসে দাঁড়ায়, চেহারা-ছবিতে শুকনো বিষাদ আর অল্প বয়সী দেখালেও আসলে সে স্কুলের দশম শ্রেণী অতিক্রান্ত ছাত্র, পরপর দু-তিন বছর ক্লাসের ফার্স্টবয় অবস্থান থেকে সেবার এসএসসি পরীক্ষার্থী হয়েছিল, কিন্তু পরীক্ষা দিতে পারেনি, কেননা সেটি হয়নি, আর তার চোখের সামনে উজ্জ্বল দিনগুলো ভাবনার অলিগলিতে অনেকখানি মøান হতে শুরু করেছে। যুদ্ধ শেষে সকলেরই আলাপ-আলোচনা, যা অনুচ্চ বা প্রকট এবং কখনও হয়ত বা প্রগলভ, সর্বোপরি এতদিন যা মাতিয়ে রেখেছিল, অন্য কোন ভাবনার অবকাশ প্রায়ই ছিল না, সে-সবের অবসান হয়েছে কিংবা মুক্তি, অতএব যা হোক না কেন কমবেশি অনেকেই দলবদ্ধ অবস্থান থেকে হয়ত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। যেহেতু লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, পৃথিবীর মানচিত্রে এখন নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ, সবুজ জমিনের মধ্যখানে লাল সূর্য আর পদ্মা-মেঘনা-যমুনার প্রচ্ছন্ন রেখাঙ্কিত মানচিত্র জ্বলজ্বল করে; এখন নেতার ফেরার পালা। মানুষজন সেই ভিড়ের মধ্যখানে তিন ব্যান্ড ফিলিপস্ ট্রানজিস্টার এক রেডিওর দিকে সকল মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে রেখেছে। সেটির চকচকে উর্ধমুখ এ্যান্টিনা, স্পিকারের ফুল ভলিউমে বেশ জোরালো আর ধারাভাষ্য চলমান। তারই মধ্যে মানুষের প্রতীক্ষার, আনন্দ কথপোকথন, উল্লাস-চিৎকার উঁকিঝুঁকি মেরে মাইক্রোফোনের তরঙ্গ বেয়ে ইথারে ভাসতে ভাসতে এখানেও নীরব-নিশ্চুপ শ্রোতাদের মধ্যে এসে পড়ে এবং অদ্ভুতভাবে অনেকের ভেতর একইরকম উপলব্ধি সংক্রমিত হতে থাকে। তখন ছেলেটি ভিড়ের প্রান্তদেশে একে-ওকে দেখার বা চেনার চেষ্টা নিতে নিতে অনেক কথা ও ঘটনার নিশ্চুপ প্রবাহে স্মৃতিকাতর হয়ে যায়। সে-সময় কেউ কেউ ঠিকই শনাক্ত করে ফেলে তাকে। তার কাঁধ ছড়ানো ঘন চুল, নাকের নিচে গোঁফের হালকা রেখা আর উদাস আকাশের মতো দীর্ঘায়ত চোখ যদিও অনেক অচেনা লাগে। সেই জটলায় কারও উৎসুক অথবা ভাবলেশহীন দৃষ্টি বৃত্তাকার ঘুরে আসতে আসতে খেই হারিয়ে ফেলে। কারও চোখে বিষাদ মেঘ ভেসে যায়। কেননা কথা বা প্রতিশ্রুতির সবটুকু যে নির্ঝঞ্ঝাট এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে, সে-সময় সেটি ধারণা করা কষ্টকর ছিল, যেহেতু কথা অনেক সময় কথার মতো থাকে না, বিবিধ কূটকৌশলে বদলে যায়, তখন কারও কাছে স্বপ্ন বা অঙ্গীকার ভিন্নরূপ পরিগ্রহ করতে পারে। যে ব্যক্তি আকার-ইঙ্গিতে বুঝে নিতে জানে তার মুখে কোন কথা নেই। ছেলেটিও অপেক্ষায় নিশ্চুপ ছিল। সেই মৌনতার মধ্যে হাজারও কথা, সে যা বলতে চাইছিল না; অথচ কেউ একজন সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসে,- ‘রাইসুল কেমন আছিস?’ ‘এই তো!’ ‘তারপর?’ রাইসুল এখানে আর থাকবে কিনা ভেবে নিতে নিতে ধারাভাষ্যের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। মনের অগোচরে হাজারও কথা, ঘটনা ঘাত-প্রতিঘাত জীবন সংশয় কত কী-ই না সেলুলয়েড ফিতের মতো চোখের আলোয় প্রতিবিম্বিত হতে থাকে, যার কোনটি বিষাদ কোনটি কষ্টদহন আর দু-চারটি আনন্দ বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে, সে-সবের কিছু মনে দাগ কেটে আছে, আর কিছু হারিয়ে যাওয়ার অবসর খুঁজে নেয়। পশ্চিমবঙ্গের কালিয়াগঞ্জ ক্যাম্প যেদিন দেখা হয়েছিল, জুনের মধ্যভাগ কিংবা শেষ প্রায়, আকাশে প্রগাঢ় মেঘ, এপ্রিল-মের তপ্ত দিনকালের পর বুঝি সে-সময় সময়-অসময়ে আকাশ মুখ গম্ভীর করে রাখে, সে তেমনই অচেনা কোন কান্না নিয়ে দিশেহারা একটি আশ্রয় আর কোন ঠিকানা বা গন্তব্যের সন্ধানে সবকিছু পিছুটান ছেড়ে চলে গিয়েছিল, হয়ত বা যেমনভাবে নিয়তি সকল ঘটনা আর কুশীলব সাজিয়ে রাখে, কে জানে; মানুষের অনিশ্চিত জীবন বোধ করি পথহারা-দিগ্ভ্রান্ত কোন গাঙচিল বিশাল সমুদ্রের জলরাশি ছেড়ে একটু তীরভূমি কিংবা সামান্য মাটির জন্য অস্থির কাঙাল হয়ে যায়; অবশেষে দেখা হয়েছিল। উনিশ শ একাত্তর, এপ্রিলের তেরো তারিখ, মঙ্গলবার, এক সময় দশমাইল-রামডুবি-চেহেলগাজী এলাকা আর পুবে একদিকে রাজবাড়ী অন্যদিকে মোহনপুর হতে মর্টার শেলের মুহুর্মুহু নিনাদ জেগে ওঠে। শহরের মানুষজন উত্তর-দক্ষিণ-পুব-পশ্চিম অলিগলি রাস্তা ধরে যে যার মতো প্রাণ হাতে নিয়ে পালাতে শুরু করেছে, আকাশে বোমা বিস্ফোরণের ভয়ংকর ধ্বনি-প্রতিধ্বনি; পাকিস্তান সেনারা এগিয়ে আসছে। সেই উনত্রিশে মার্চ, সোমবার, কুঠিবাড়ি বিদ্রোহে শত্রু অবমুক্ত শহর বুঝি হারাতে হয় আর হলোও তাই; এই তো যুদ্ধ কৌশল। রাইসুল তখন মডার্ন মোড় থেকে চকবাজার-মালদহপট্টি আর উত্তর বালুবাড়ি হয়ে মহারাজের মোড় পেরিয়ে যায়। সাইকেলের দুটো চাকায় নরম বাতাসে গতিবেগ অসম্ভব মন্থর, পায়ের জোর আর অপরপক্ষে এপ্রিলের দগ্ধ দুপুরের বিরুদ্ধ বাতাস, অদ্ভুতভাবে শহরের কাকগুলোও দিগি¦দিক ছোটাছুটি করে বেড়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে; রাইসুল উ™£ান্ত অনেকক্ষণ পর নিঃশ্বাস নেয়ার মতো অবসরে এসে দাঁড়ায়। আকাশে আগুন আর ধোঁয়ার বিস্রস্ত কু-লী, কাঁকড়া নদীর পুবপাড়ে জোলাপাড়া জ্বলেপুড়ে ছারখার, এখানে-ওখানে কতগুলো লাশ, তারা শিশু-নারী-পুরুষ, তারা কিশোর-যুবা-বৃদ্ধ, তাদের চেহারা বোঝা যায়...বোঝা যায় না, অভিব্যক্তিহীন কিংবা যন্ত্রণাদগ্ধ বীভৎস, নদীর জল আর পাড়ের বালিয়াড়িতে লুটিয়ে থাকা অসহায় খোলা চোখগুলো শুধু বলে যায় তারাও মানুষ। তাদের ছোট ছোট ঘরদোর পুড়ে অঙ্গার-কয়লা-ছাই, এলোমেলো ছড়িয়ে থাকা তৈজসপত্র আর অন্ন-আহার, এতকিছুর মধ্যেও অগ্নিশিখার কবল থেকে বেঁচে যাওয়া দু-একটি কলাগাছের পাতা তখনো নদীবাহিত বাতাসে একবার বুক অন্যবার পিঠ দেখাতে ব্যস্ত থাকে, অন্যদিকে পশ্চিমপাড়ের বিশাল ন্যাড়া শিমুল গাছে লালে লাল ফুলের মধ্যে একদল শকুন উৎসুক আর লোভাতুর দৃষ্টি মেলে লাশগুলো দেখে যায়। রাইসুল চোখ বন্ধ করে দিশেহারা কী যেন ভেবে নেয় অথবা কিছুই ভাবতে পারে না, মূলত সে জানে না এরপর কী হতে যাচ্ছে অথবা কী হতে পারে; সে দ্রুত পালাতে থাকে। কোথা হতে কোথায় পালায়? সে তখন মনে মনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বুঝে নেয়, পথ আর গন্তব্য নির্ধারিত হয়ে গেছে, পথ হারাবার আর আশঙ্কা নেই, মূলত ক্ষণিকের বিভ্রান্ত মন যেমন চেনা পথে দাঁড়িয়ে ঠিক বুঝে নিতে পারে না কোথায় এসে দাঁড়িয়ে গেছে আর গন্তব্য কতদূর; সেইসব ভুল ক্রমশ মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সেই সময়ের অনুমান এক-দেড় মাস পর, যখন আকাশে সর্বদা ঘনঘোর মেঘ, ইরি ক্ষেতের সেচনালা দিয়ে টলটলে পানি চলমান চাঞ্চল্যে ধরে রাখে সবুজ চারাগাছ, সেই জলের নহরে কিছু পোনামাছ মনের আনন্দে সাঁতার কেটে যায়; চোখের অশ্রু মুছে বাধাহীন মুক্ত বিহঙ্গের মতো পথে নামে রাইসুল। একা একা একান্ত গোপনে, পঁচিশ-ত্রিশ মাইল, তারপর সীমান্ত; সেখানে গিয়ে খুঁজে নেবে হারানো ঠিকানার সঠিক গন্তব্য, অভিযাত্রা কৌশল। তারপর এখানে-ওখানে খুঁজে নিতে নিতে কালিয়াগঞ্জ ক্যাম্পে জেনে যায় সকল নিয়মকানুন আর সত্যি সত্যি একদিন ‘এ্যান্টি ট্যাংক ওয়ারফেয়ার ইউনিট’-এর ‘সুইসাইড গ্রুপ-এর দক্ষ সৈনিক হয়ে যায়। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাবতে কিংবা বলতে বেশ ভাল লাগে তার। সেই সংগ্রাম বা যুদ্ধ শেষ হয়েছে। যেখানে একটি শেষ হয়, আরেকটি নতুনের শুরু অবশ্যম্ভাবী, তাই এই ধ্বংসস্তূপের উপর উঁকি মারে অন্য এক যুদ্ধের সূচনা। নেতা ফিরে এসে আরও একবার সেই যুদ্ধের ডাক দেবেন, এমন উপলব্ধি মনের কোণায় গুনগুন করতে থাকে; এসবের মধ্যেই চলতে থাকে ধারাভাষ্য। নেতা ফিরে আসছেন। একুশ দফা, ছয় দফা, এগারো দফা পার হয়ে এক দফা বাংলার স্বাধীনতা। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের বন্ধু প্রথম রাষ্ট্রপতি ফিরে আসছেন। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত দীর্ঘপথ মানুষের দৃষ্টি উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে, পথের দিকে; কখন আসছেন প্রাণপ্রিয় নেতা? এই তো কয়েক সপ্তাহ আগে নিজেও ফিরে এসেছে রাইসুল। অস্থির মন দৃঢ়পায়ে এগিয়ে এলো বটে তবু আবেগ-উত্তেজনা কাবু করা যায় না, নিজের ঠিকানায় পৌঁছে দেখতে পাবে বাবা-মা আর ছোট ভাইবোনদের, শুধু একজনকে দেখতে পাবে না, মামুনকে যে কাঁকড়া নদীর পুবপাড়ে বাঁশবাগানের একপ্রান্তে শুইয়ে রাখা হয়েছে এপ্রিলের শেষপ্রান্তে। কয়েক মাসের শিশু রক্তআমাশায় ভুগতে ভুগতে বিনাচিকিৎসায় প্রাণ ছেড়ে দিল এক দুপুরে। হতভাগা! এমন মানুষও এত অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে আসে! এ যে কতবড় অসহায়-অপারগতার যন্ত্রণা বোঝে রাইসুল। সেও মা-বাবার সঙ্গে গড়াগড়ি করে কাঁদে। অশ্রুজলে কি বুক শান্ত হয়? হয় না। সেদিন এইসব বিবিধ ভাবনা আর প্রত্যাশার মায়াজাল ঘোরে এসে দাঁড়ায় মহল্লার গলিমুখে, ধীরপায়ে নিজের ঠিকানায়; একদিন বড় কষ্টে সবকিছু ফেলে শূন্যহাতে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। যেভাবে আঙিনায় এসে দাঁড়ানোর পর দেখা হয় হাঁটু বা কোমর সমান উঁচু ঘাস-আগাছা ছড়িয়ে রেখেছে নিঃসঙ্গতার বিষাদ, দেয়ালের প্রান্তদেশে কবুতরের সফেদ-ধুসর বিষ্ঠার আচ্ছাদন, ইঁদুরের শত শত গর্ত; দরজা-জানালাহীন ঘরের চৌকাঠও বলে দেয় কোন নিরাপত্তা নেই। সেই ঘাসের ফাঁকফোকর দিয়ে সবুজ রং কোন এক সরীসৃপ মৃদুমন্দ পালিয়ে যেতে যেতে পথ ছেড়ে দেয়। তখন রাইসুলের মননে উত্তর ভোলানাথপুর গ্রামের কথা, সবুজ দৃশ্যাবলী আর কোন এক চেনা-অচেনা সুনয়নার সপ্রতিভ চকচকে দৃষ্টি ভেসে ওঠে। কেমন আছে রামিয়া? বেঁচে আছে তো? সেই আলো-আঁধার গভীর রাতে কলাপাতায় ভাত-তরকারি সাজিয়ে খেতে দিতে দিতে পরম আদরে ফিসফিস করেছিল, - ‘দেশ স্বাধীন করে একদিন ঘুরে যেও কিন্তু।’ ‘তোমার নাম কি?’ ‘রামিয়া।’ ‘পড়াশোনা করো? কোন্ ক্লাস? তোমরা ওপারে যাওনি কেন?’ ‘ক্লাস নাইন। আমরা নিজের দেশ ছেড়ে যাব না।’ ‘ও আচ্ছা, এখানে তো বিপদ।...এত রাতে কিভাবে রান্না করলে, তোমাদের খাবার?’ ‘ওদিকে রান্না হচ্ছে। তুমি কি করো? কলেজে পড়ো? বাড়ি কোথায়?’ ‘শহরে। এখন তো গ্রামেও বিপদ।’ ‘এদিকে খানেরা আসে না।’ ‘আসতে তো পারে। তুমি মানে তোমরা বরং ইন্ডিয়া চলে যাও। যুদ্ধ কবে শেষ হবে ঠিক নেই।’ ‘তাই? তোমরা সাবধানে যাবে। বুড়িদীঘির ওখানে রাজাকারের পাহারা।’ ‘আচ্ছা।’ একটি হারিকেন টিমটিম আলো ছড়িয়ে চলে আর তারা তিনজন অসম্ভব গম্ভীর, যেন কোন দুর্বোধ্য জ্যামিতিক সূত্রের সমাধান খুঁজে পেতে অসম্ভব মরিয়া। রাইসুল জ্যামিতিতে অনেক ভাল, স্যার প্রায়শ ব্লাক বোর্ডে ডেকে নিয়ে বন্ধুদের বোঝাতে বলতেন। বড় শুকনো বিষয়, তারপরও আনন্দ আছে; রাইসুলের কি আবেগ থাকতে নেই? রামিয়ার চোখে কী ছিল? মায়া ভালবাসা নাকি কিশোরী আবেগ? রাইসুলের দৃষ্টিতে যে ঘনীভূত অসীম মুগ্ধতা বড় প্রগলভ হতে শুরু করে, আর আলো-আঁধারের রং তুলিতে আনমনে কোন জলছবি আঁকা হয়ে যায়; যখন অন্যেরা খেতে অতিব্যস্ত থাকে। তারপর কত রাত সেই মুখছবি ভেসে উঠেছে। চোখের পাতায় চোখ রেখে নিরিবিলি ফিসফিস কথা বলে যায়। রামিয়া এখন কেমন আছে? সেখানে সেই অপারেশনের পর কিছু হয়নি তো? পাকিস্তান সেনারা রিভেঞ্জ চার্জ করেছে কি? রামিয়া আর তার বাবা-মা ভাইবোন নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছে? রাইসুল একদিন যাবে। খোঁজ নিতে শুধু নয়, একটিবার দেখার বড় সাধ জাগে। সেই রাতে সেখানে অপরেশন ছিল, কৃষ্ণপক্ষের আবছায়া অন্ধকার, সড়কের উপর কুড়ি ফুট দীর্ঘ ধুসর-সাদা ব্রিজ, সেদিক দিয়ে আর্মি লরি আর ট্যাংক যাওয়ার গোপন খবর; তারা তিনজন অপেক্ষায় থাকে। জিগ্জ্যাগ্ কৌশলে দুটো মাইন বসিয়ে দেয়া হয়েছে। কোমরে বেঁধে রাখা গ্রেনেড বড় উসখুস করে। ফসলের নিষ্প্রাণ ক্ষেত চারপাশে, পুবে শ্যাওড়া গাছ আর কাঁটাগুল্মের ঝোপ পেরিয়ে মৃত ইটভাঁটি, কবে আগুন দেয়া হয়েছে কে জানে; তখনও থেকে গেছে উত্তাপের মৃদু রেশ। অপেক্ষার সময় ফুরোতে চায় না, বুঝি বা থমকে গেছে রাতের প্রহর, তারপর এক সময় পরপর বিস্ফোরণ, দু-চারটি নয়, একটিমাত্র জিপ ব্রিজের খাদে ফেলতে পেরেছিল ওই রাতে; কত শত্রু পড়ে গেছে দেখা হয় না আর বোধকরি সাত-আটজন। তখন তাদের ফেরার খুব তাড়া, যেতে হবে দক্ষিণে আরও কয়েক মাইল। এসব অন্তর্গত সমুদয় স্বীকারোক্তির মতো জিজ্ঞাসা ফিকে হতে হতে মা-বাবা আর ভাইবোনের কথা খুব মনে পড়ে যায়, যেভাবে প্রতিবার কোন অপারেশনের আগে উ™£ান্ত করে রাখে, আর দেখা হবে নাকি হবে না, সময়ের ফাঁকফোকরে এসব গভীর ভাবনায়; তার চোখ ঝাপসা হয়ে পড়ে। কেমন আছে তারা? সে একা ফিরে এসেছে। তারা এখনও ফিরে আসেনি। কেন? অক্টোবরের দিকে মুক্তিবাহিনী সীমান্তের প্রায় আশি শতাংশ দখল নিতে পেরেছে। পাকিস্তান সেনারা পিছু হটতে হটতে ইঁদুরের মতো ঘেরাটোপে শহরে আবদ্ধ মাত্র। এমন অবস্থার মধ্যে ডিসেম্বর মাসের তিন তারিখ, শুক্রবার, পাকিস্তান আক্রমণ করে বসে ভারত, সমগ্র পরিস্থিতি পালটে গেল; তিন দিন পর ছয় তারিখ, সোমবার, ভারত প্রকাশ্যে বাংলাদেশকে ‘স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে মুক্তিযুদ্ধের পথ আরও প্রশস্ত হয়ে যায়। এবার সমন্বিত বাহিনীর শক্তি, যুদ্ধের ময়দানে এসে দাঁড়ায় ভারতের উচ্চ প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে জোরদার হয় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক কার্যক্রম। কোন এক সময় রেডিওতে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ-র এলান প্রচার শুরু হলোÑ ‘হাতিয়ার ডাল দো।’ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল একে নিয়াজি আর কোন উপায় না পেয়ে যুদ্ধ বিরতির বার্তা পাঠিয়ে দিলে ভারত পালটা নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের প্রস্তাব রাখে। ডিসেম্বর মাসের ষোলো তারিখ, বৃহস্পতিবার, বিকেল সাড়ে চারটায় স্বাক্ষরিত হলো আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক দলিল। জগত দেখে...বাঙালী দেখল, সেই আত্মসমর্পণ কোন এসি কক্ষে নয়, কোন আড়ম্বর অনুষ্ঠান আয়োজনে নয়, রেসকোর্স ময়দানের খোলা আকাশের নিচে স্বাক্ষরিত হলো; লেখা হলো জয়-পরাজয়ের ইতিহাস। একটি টেবিল আর দুটো চেয়ার ছাড়াও সাক্ষী হয়ে থাকল কোটি কোটি মানুষ। লেফটেন্যান্ট জেনারেল একে নিয়াজী তার অস্ত্রের সকল গুলি বের করে পূর্বাঞ্চলের সমন্বিত বাহিনীপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নিকট হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন। আত্মসমর্পণ করেন পাকিস্তান সেনার তিরানব্বই হাজার সদস্য পায়ের নিচে অস্ত্র রেখে। এই সুবর্ণ মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন মুক্তিবাহিনীর উপ-সেনা প্রধান ও বিমানবাহিনী প্রধান গ্রুপ ক্যাপটেন একে খন্দকার। পরদিন সূর্য ওঠার আগেই বিভিন্ন রণাঙ্গন থেকে বিজয়ী মুক্তিসেনা শহরে প্রবেশ করতে থাকে। ভারতীয় ট্যাঙ্কের বহিরাঙ্গনে চেপে চলে এলো রাইসুল। প্রাণের আবাস দিনাজপুর শহর। বন্ধু শিবলি-মহসিন-মামুন-মাহমুদ তারাও সঙ্গে এলো। আকাশে রাইফেলের গুলি পটকার মতো ফাটিয়ে উদযাপন হলো বিজয়। নিজের দেশ নিজের শহর, কত চেনা কত আপন পরিচিত অলিগলি-রাস্তা, এর আকাশ-বাতাস, গাছগাছালি আর ফুলের সৌরভ; রাইসুল বুক ভরে শ্বাস নেয়ার সুযোগ পায় এতদিনে। সকল দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা আর সংশয়ের অবসান হয়েছে, ফিরে আসার আনন্দ কিভাবে প্রকাশ করে, কিভাবে উদযাপন? তার দেশ স্বাধীন হয়েছে, পালিয়ে যাওয়া হারিয়ে যাওয়া পাখিরা আবার কাকলিতে জেগে তুলেছে আকাশ। রাইসুল তখন শহরের রাস্তায় একবার-বারবার পরিক্রমণ শেষে আশ্রয় নেয় মহারাজা স্কুলের শিবিরে। মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুর ছয় এবং সাত নম্বর সেক্টরের অধীন, ট্রানজিট এই শিবিরে আশ্রয় নেয় অনেকেই, কাজ তখনও ফুরোয়নি, প্রতিদিন টিম বেঁধে পাকিস্তানী সেনাদের পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র-গোলাবারুদ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহের কাজ চলছে, জমা করা হচ্ছে সেখানে। শীতের দিনকাল, ছোটদিনের বেলা, চলমান কাজের ফাঁকে সময় পাওয়া যায় না যে আরেকবার নিজের ঘরদোর ঘুরে দেখে আসে। রাইসুল তবু বলে-কয়ে আসতে পেরেছিল। সে এক মিলনমেলা অশ্রু-আনন্দে ভেসে যায়। বাবা-মা বুকে জড়িয়ে ধরে, ছোট ছোট ভাইবোন ভেজা দৃষ্টি নিয়ে হাসে, কখনও গলা ধরে কাঁদে, সে যে কান্না নয়; আনন্দের অশ্রুজল। ‘বাবা কোথায় চলে গিয়েছিলি? আমাদের বলে গেলি না কেন?’ রাইসুল বলে যেতে পারেনি, বলে গেলে কি যেতে পারত; যেতে দিত? সে তবে বেঁচে আছে, মরে যায়নি, সেদিন দুপুরে ছোটভাইকে মাটির নিচে শুইয়ে হারিয়ে গিয়েছিল মাত্র। যে হারিয়ে যাওয়ায় ফিরে আসার আনন্দ আছে, সেখানে আর বিরহকাল কষ্ট কোন অর্থ ধরে রাখে না; তারপরও যন্ত্রণা ছিল। রাইসুল ফিরে এসেছে, আর সেই সন্ধেয়...ওইদিন দ্বিতীয়বার ফেরা। রেডিওয় আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ধ্বনি জোরালো হতে থাকে, আকাশের বুকে বাংলার বলাকা উঁকি দিয়েছে, ফিরে আসছেন প্রাণপ্রিয় নেতা। কিছুক্ষণের মধ্যে স্বদেশ ভূমি চুম্বন করবেন বাঙলার বন্ধু জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। ঢাকার পথে পথে লাখো মানুষের ভিড়ে জেগে উঠেছে আনন্দদোলা, সেই ঢেউ-তরঙ্গ বুঝি এখানের জটলায় ঝাপটা মেরে সকলের চেহারায় আনন্দাশ্রু তুলে দেয়। রাইসুল নিজেকে সামলাতে পারে না, হুমড়ি খেয়ে পড়ে আর তখন কেউ বুঝি চিৎকার করে ওঠে, - ‘এই ল্যাংড়া ছোকরাটা কে বে...এখানে ক্যান্ দালালের বাচ্চা?’ রাইসুল কোথায় কোথায় তীব্র দৃষ্টি ছুড়ে ভিড় থেকে অন্যপ্রান্তে বেরিয়ে আসে জানা নেই। মিশন স্কুলের বিশাল আমগাছের ছায়ায় তখন সূর্যরশ্মি তির্যক হেলে পড়েছে। সে তেমন এক ছায়া ছায়া আবছায়া অবসরে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। এখান থেকেও বেশ শোনা যায় ধারাভাষ্য। শহরে নতুন নতুন চেহারার মানুষজন। এরা কোথা থেকে এলো কে জানে? এখানে-ওখানে সন্ধের পর আর রাতে-ভোররাতে ঘটে চলে বিবিধ অপরাধ। মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে অপরাধীর নব্য গোষ্ঠী...হাইজ্যাকার। এদের মধ্যে পথহারা দিগ্ভ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধাও আছে শোনা যায়। কেউ কেউ সুযোগসন্ধানী সকল মুখোশ খুলে শত্রু সম্পত্তি বাড়িঘর দখলে নেমে গেছে। কারও কারও প্রতিপক্ষকে বাগে পাওয়া সাধ-আহ্লাদ পূরণের মোক্ষম সুযোগ। প্রতিশোধের পুরনো জ্বালা জ্বলে উঠতে থাকে কারও কারও চোখে, সারা বুকে অন্তর্জ্বালা; তাই কে কোথায় মার খায় আর কে কাকে দেখে রাখে সব বুঝি ভেসে যায় যায়। রাইসুল অসহায়ের মতো ধুপছায়া আকাশের অন্ধকার কোণায় দৃষ্টি রেখে নিশ্চুপ বসে থাকে। সেইদিন ছয় জানুয়ারি উনিশ শ বাহাত্তর, বৃহস্পতিবার, সন্ধেয় আকস্মিক ঝলসে উঠল মহারাজা স্কুল, আশপাশ আর সারা শহর। রাইসুল তখন কোথায় ছিল? আগের দিন পশ্চিম বাড়ির মাকসেদুল হক অকারণে শাসিয়ে গেছে। তার দুই ভাই কমান্ডার, অসীম শক্তি; কাঁধের রাইফেলে আরও উন্মত্ত উদ্দাম। রাইসুলের সামনে বাবাকে অনেক গালমন্দ করে তারা। একদা মামলায় হেরে যাওয়ার প্রতিশোধ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে যারা দেশের ভেতরে থেকে গিয়েছিল, কিভাবে বেঁচে ছিল; কেউ কি জানে? কোথা থেকে সংগ্রহ করতে পেরেছিল জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় রসদ? তখন পাকিস্তান সেনা আর তাদের দোসর বিহারি-রাজাকার-আলবদর শহরের চেয়ে গ্রামে গ্রামে দাপটে চসে বেড়াতে শুরু করেছে, নিরাপদ ছিল না অনেক দূরবর্তী ঘোর গ্রাম, পুকুর আর নদীর পাড়, ঝোপজঙ্গল আর লুকোনোর জায়গা। বাবা তাই সকলকে নিয়ে শহরে এসে পড়ে। অস্তিত্বের প্রয়োজনে অফিসে যেতে হয়। বেঁচে থাকতে হলে টাকা দরকার। একব্যান্ড রিসিভারে রাত জেগে জেগে খুব গোপনে যে চরমপত্র আর মুক্তিযুদ্ধের খবর শোনা হয় তার কথা কে বলে? কে দেখায় বুক খুলে প্রাণের আকুতি? কিভাবে প্রমাণিত হয় দেশপ্রেম? রাইসুল যখন হাসপাতালের বেডে ডান-পায়ে প্লাস্টার নিয়ে দিশাহীন কোন ঘুমঘোরে যন্ত্রণার দুঃস্বপ্নে ডুবে যায়, সে শোনেনি, জানতে পারে না কেউ বলেনি, তার জনক, অমন নিরীহ মানুষটিকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। বাবা হয়ে গেছে কলাবরেটর। বিশ্বাসঘাতক দালাল। সেই দুঃখ সেই ক্ষোভ কার কাছে করে? কোথায় রাখে ফরিয়াদ? রাইসুল এই কয়েকমাস অদেখা অচেনা গ্রাম, ঝোপজঙ্গল-বনেবাদাড়ে প্রাণ হাতে নিয়ে অপেক্ষা করে এসেছে পাকিস্তান সেনার ট্যাঙ্ক কিভাবে একটি-দুটি মাইন বসিয়ে ফাটিয়ে দেয়, ধ্বংস করেছিল, করতে পেরেছিল; কিন্তু প্রতিবেশীর ষড়যন্ত্রের সেই কূটজাল যে অত্যন্ত জটিল...খুব গভীরে তার শেকড়; সে পারেনি। অবশেষে বাবাকে কি কাল্পনিক অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে মুক্তি পেতে হবে? রাইসুল দুর্ভাবনার জটিল কোন গোলকধাঁধায় ডুবে যেতে থাকে আর চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। রেডিও-য় ভেসে আসে উদাত্ত ধারাভাষ্য, আবেগ উথলে ওঠে বক্তার কণ্ঠে, ইথারে তরঙ্গিত হতে থাকে কোটি মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস। ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রিয় মুজিব ভাই আসছেন।’ পাকিস্তানের সামরিক প্রধান ইয়াহিয়া আর ভুট্টোর সঙ্গে যখন আলোচনা ব্যর্থ হলো, নেতা তখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন; সেই কথা তো প্রকান্তরে সাতই মার্চ একাত্তর, লাখ-কোটি মানুষের সামনে রেসকোর্স ময়দানেই দিয়েছিলেন: ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ্।’ পরদিন আটই মার্চ বাঙলার আপামর জনসাধারণ বেতারে শুনেছে সেই ঋজু আর আবেগ-আপ্লুত প্রাণের আকুতি। সে যে আত্মার তৃষ্ণা। এই তাঁর অপরাধ। শেখ মুজিব গ্রেফতার হলেন ছাব্বিশে মার্চ, শুক্রবার রাতে। পাকিস্তান কারাগারের অন্ধকারে থাকলেন নয় মাস। যখন বাঙলার সর্বত্র চলছে গেরিলা যুদ্ধ, পাকিস্তান সামরিক আদালতে ব্রিগেডিয়ার রহিমুদ্দিন খান ফাঁসির দ- ঘোষণা করলেন। নেতার জন্য খনন করা হলো কবর। শেষমেশ কিছুই করতে পারেনি। বাঙলার মুক্তিপিয়াসি জনগণ পাকিস্তান সরকারের সকল অত্যাচার-নির্যাতনের মোক্ষম জবাব দিতে পেরেছে। ত্রিশ লাখ প্রাণ বিসর্জন আর দুই লাখ বীরাঙ্গনার আবরু আর আত্মত্যাগ মূল্যহীন থাকেনি। অবশেষে দেশ স্বাধীন...স্বাধীন দেশের পুণ্যভূমিতে আসছেন বাঙলার মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা। তাঁর এই ফিরে আসা ছিল ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে অগ্রযাত্রা’। রাইসুল হাসপাতালে থাকতে পারেনি, চলে এসেছে কোন্ প্রাণের টানে কে জানে, ঘরের কোণায় স্যাঁতসেঁতে বিছানায় পড়েছিল অর্ধমৃত চোখের মতো, যখন সবকিছু বড় বেসামাল জটিল কোন ধাঁধা হতে শুরু করে অগত্যা বের হয়ে আসে, প্রচ্ছন্ন ছিল বুঝি মনের টান; নেতা ফিরে আসছেন। এখন এই আলোছায়া সিমেন্টের বেঞ্চে একাকী হিমবাতাসে বিবশ অন্তপ্রাণ, তার বুকে ধারাভাষ্যের প্রতিটি শব্দ প্রতিটি বাক্য আর উচ্ছ্বাস আবেগের কোমল শরস্পর্শে বুঝি হামলে পড়ে; অচেনা কোন হাহাকারে জেগে ওঠে পূর্ণতার জয়গান। সেই গানের সুর কি মায়া জড়িয়ে রাখে! তার কিছু কষ্ট কিছু ভাললাগা, যেন কী ছিল...কী যেন নেই, হরিষ-বেদনার ঢেউ বয়ে যায়; আর আবছায়া বিকেলের প্রান্তদেশ অদ্ভুত আলোয় ভরে উঠতে থাকে। জাতির জনক ফিরে এসেছেন অবশেষে। এবার নতুন করে দেশ গড়ার কাজ। রাইসুলের অপেক্ষার অবসান হয়েছে।
×