ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ৭ জানুয়ারি ২০২২

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ করোনা থেকে আর বুঝি মুক্তি মিলল না। সেই কবে হানা দিয়েছিল সংক্রমণ ব্যাধি। তার পর কখনও সখনও ‘যাই’ ‘যাই’ করেছে বটে। যায়নি শেষতক। বরং নতুন নতুন ধরন নিয়ে হাজির হয়েছে। এই যেমন এখন দাপট দেখাচ্ছে ওমিক্রন। ইউরোপ আমেরকিাসহ পৃথিবীর বহু দেশে এ ধরন ছড়িয়ে পড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি আমলে না নিলেই নয়। দেশটিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক হারে বাড়ছে। আমাদের এখানেও নাজুক হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি। বিশেষ করে ঢাকা ঘিরে আছে বাড়তি শঙ্কা। ঘনবসতিপূর্ণ শহর করোনার হটস্পট হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদফতর যে তথ্য দিচ্ছে তাতেও আভাসটি স্পষ্ট। এরই মাঝে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১১শ’ ছাড়িয়ে গেছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্তের হার এখন প্রায় ৫ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১ হাজার ১৪০ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। বুধবার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ২০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার তা বেড়ে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়েছে। তবে এবারও উদ্বেগ বেশি রাজধানী শহরটি ঘিরেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, গত একদিনে শনাক্ত নতুন রোগীদের মধ্যে ৯৭৮ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৮৫ শতাংশের বেশি। একদিন পিছিয়ে বুধবারে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, মোট শনাক্ত রোগীর ৮১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশই রাজধানীর বাসিন্দা। শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা মঙ্গলবারে ছিল ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। প্রাপ্ত এসব তথ্যই বলে দিচ্ছে, করোনার হটস্পট হওয়ার পথে ঢাকা। কিন্তু কতটা সতর্ক আমরা? রাজধানী ঘুরে, না, সতর্কতার তেমন কোন চিহ্ন চোখে পড়ছে না। স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় উঠেছে তো উঠেছেই। মুখ থেকে নেমে গেছে মাস্ক। কারণে-অকারণে ভিড় বাড়ছে। মার্কেট শপিংমলে রাস্তায় মানুষজনের অবাদ চলাচল। দেখেই বোঝা যায়, করোনা নিয়ে তাদের তেমন মাথাব্যথা নেই। এই মাথাব্যথাহীন মানুষগুলো বলার অপেক্ষা রাখে না, অন্যের মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে। করোনা স্বাস্থ্যবিধি যারা মানার চেষ্টা করছেন তারাও উদাসীন অংশটির কারণে ঠিক পেরে উঠছেন না। অনেকে আবার নিয়তিবাদী হয়ে উঠেছেন। তাদের মধ্যে ‘আমার কিছু হবে না’ ভাব। সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ভাবছে। হয়তো বাস্তবায়নও শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ নিজ থেকে সচেতন না হলে ঝুঁকি বাড়বে করোনার। তাই সময় থাকতেই আসুন সচেতন হই। করোনামুক্ত থাকি। নতুন শুরু সামরিক জাদুঘরের ॥ রাজধানীর সামরিক জাদুঘরটি নতুন নয়। তবে সম্প্রতি একে নতুন করে গড়ে নেয়া হয়েছে। একই স্থানে, মানে, বিজয় সরণিতে এখন অত্যন্ত আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ভবন। ভবনের বহির্কাঠামো, স্থাপত্যশৈলী দেখেই মুগ্ধ হতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ চলছিল। ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছিল কাঠামো। তখন থেকেই জাদুঘরটি ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি কৌতূহল। অতঃপর বিরাট কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ‘বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর’ নামে ভার্চুয়ালি এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাকেও জাদুঘরটি নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। নতুন করে সাজানো জাদুঘরে, জানা যাচ্ছে, সামরিক নিদর্শনই শুধু স্থান পেয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীর জন্য আলাদা আলাদা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে গ্যালারিতে। মুক্তিযুদ্ধের সময় অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছিল সামরিক বাহিনী। তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র গোলা বারুদ ট্যাঙ্ক ইত্যাদি আকর্ষণীয় উপস্থাপনা পেয়েছে সামরিক জাদুঘরে। এসব দেখে দর্শনার্থীরা যেমন চমকিত হবেন, তেমনি আগামী প্রজন্ম জানতে পারবেন লড়াই করে দেশ শত্রুমুক্ত করার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সহসাই জাদুঘরটি সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানা গেছে। জমজমাট পিঠা উৎসব ও পার্বত্যমেলা ॥ রাজধানীতে এখন চলছে পিঠা উৎসব ও পার্বত্যমেলা। পিঠার আয়োজনটি শিল্পকলা একাডেমিতে। পার্বত্যমেলা চলছে বেইলি রোডের শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে। দুটোই মোটামুটি জমজমাট। পিঠা উৎসবে নানা জাতের পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। সবুজ খোলা চত্বরে অনেকগুলো স্টল। চোখের সামনেই পিঠা বানানো হচ্ছে। খাওয়া যাচ্ছে গরম গরম। একটু বাজারি বা বাণিজ্যিক আয়োজন। তার পরও লোকসমাগম অনেক। নতুন পুরনো পিঠা কিনে খাওয়ার পাশাপাশি আগ্রহীরা অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছেন। একই সময় জমে উঠেছে পার্বত্যমেলা। বুধবার শুরু হওয়া মেলায় পাহাড়ে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের পসরা। বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী রান্নাও পাওয়া যাচ্ছে। আছে পাহাড়ী তাঁত শিল্পের নানা নিদর্শন। ঘুরে দেখতে দেখতে পাহাড়ী জীবন সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সুন্দর একটি ধারণা পাওয়া যায়। শনিবার এই মেলা শেষ হচ্ছে। তার আগে মেলা ও উৎসব ঘুরে আসতে পারেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মানলেই শুধু যাবেন, অন্যথায় না যাওয়াই উচিত।
×