ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সাকিবকে নিয়ে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২২:০১, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

সাকিবকে নিয়ে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে যাত্রা শুরু হয়েছে হার দিয়ে। সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে তাই এটাই শেষ সুযোগ সিরিজ হার ঠেকানোর। চট্টগ্রামে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ দল কি পারবে নিজেদের ফিরে পেতে? মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ সকাল ১০টায় শুরু হবে ম্যাচটি। ঘরের মাটিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্রে মোটে ৬ টেস্ট খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে একটি শেষ, আপাতত বাকি থাকা এই এক ম্যাচে দারুণ কিছু করতে পারলে হয়তো দ্বিতীয় চক্রে শুরুটা ভালভাবে করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম টেস্টে ভাল ব্যাটিং উইকেটে পঞ্চম দিন সকাল পর্যন্ত গেছে ম্যাচ। মিরপুরের চিরাচরিত কঠিন ও ধীরগতির উইকেটে বাংলাদেশ কেমন করবে তা নিয়ে আছে সংশয়। সাকিব আল হাসান ফিরছেন এই ম্যাচে সেটাই দলের শক্তি কিছুটা বাড়িয়েছে। অবশ্য অধিনায়ক মুমিনুল হকের দাবি পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে যে কোন কন্ডিশনে এমনকি ধানখেতে হলেও ভাল করতে হবে। মিরপুর টেস্টে আবারও বাংলাদেশের একাদশে ২/৩টি পরিবর্তন আসছে তা শুক্রবারই নিশ্চিত হয়ে গেছে। কারণ ওপেনার সাইফ হাসান টাইফয়েড আক্রান্ত হয়ে ছিটকে গেছেন। তাই তার পরিবর্তে ওপেনিংয়ে নতুন এক জুটির দেখা পাওয়া যাচ্ছে নিশ্চিতভাবে। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বশেষ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখা গেছে ২০১৭ সালে গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবাল জুটি ১১৮ রান করেছিলেন। আর দেশের মাটিতে সর্বশেষ শতরানের উদ্বোধনী জুটি আরও আগে! পাকদের বিপক্ষেই ২০১৫ সালের এপ্রিলে খুলনায় ৩১২ রানের জুটি গড়েন তামিম-ইমরুল কায়েস। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৬ বছরে দেশের মাটিতে টেস্টে ওপেনিং জুটিতে শতরান দেখা যায়নি। এ কারণে প্রায় নিয়মিতই ওপেনিং জুটিতে দেখা গেছে পরিবর্তন। ২০১৮ সালের নবেম্বর থেকে চলতি নবেম্বর পর্যন্ত এ ৩ বছরেই ওপেনিং জুটিতে খেলেছেন ৬ ক্রিকেটার এবং ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাদের মধ্যে জুটি হয়েছে ৯টি। এই ৯ জুটি ৩২ ইনিংসে মাত্র ৭ বার অর্ধশতাধিক রানের জুটি গড়তে পেরেছেন। তার মধ্যে তামিম একাই ৩টি অর্ধশত জুটির কারিগর হিসেবে ছিলেন। তার অনুপস্থিতি বেশ ভোগাচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। এবার আরেকটি পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের ডানহাতি টপঅর্ডার মাহমুদুল হাসান জয়েরই সাদমান ইসলামের সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ টপঅর্ডারে আর সবাই বাঁহাতি। ৫ নম্বরে এসে একমাত্র ডানহাতি মুশফিকুর রহিম এবং ছয়ে আবার বাঁহাতি সাকিব। তাই জয়ের ওপেনার হিসেবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হতে পারে। এ বিষয়ে অধিনায়ক মুমিনুল শুক্রবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ওপেনিং সমন্বয় বাঁহাতি-ডানহাতি হতে পারে দুইজন বাঁহাতিও হতে পারে। তবে বাঁহাতি-ডানহাতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’ সাদমান-জয় ইনিংস উদ্বোধন করলে বাকি জায়গাগুলো ঠিক থাকবে, শুধু ইয়াসির আলী রাব্বির জায়গায় খেলবেন সাকিব। ইয়াসির দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেক ক্যাপ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু মাথায় আঘাত পেয়ে ছিটকে যান, কনকাশন সাব হিসেবে খেলেন নুরুল হাসান সোহান। তবে ইতোমধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ইয়াসির দুদিন অনুশীলন করেছেন দলের সঙ্গে। মিরপুরের চিরাচরিত উইকেট যেমন ধীরগতির, সেখানে ২ পেসার খেলানোর চিন্তা থেকে দূরে যেতে পারে বাংলাদেশ। তখন একমাত্র পেসার হিসেবে এবাদত হোসেনেরই খেলার সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে খেলবেন ইয়াসিরও। সাকিব, তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ খেলবেন স্পিনার হিসেবে। চট্টগ্রামে ব্যাটিং উইকেট ছিল। এবার মিরপুরের উইকেট নিয়ে মুমিনুল বললেন, ‘মিরপুরের উইকেট সম্পর্ক আমি আপনি সবাই জানি, খেলাটা কঠিন হয়। আমার কাছে মনে হয় না অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো উইকেট হবে, উইকেট দেখে যেমনটা মনে হলো।’ পাক পেসারদের নিয়েই কিছুটা চিন্তা। চট্টগ্রামে খেলা ৩ পেসার- শাহীন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলী ও ফাহিম আশরাফ দুর্দান্ত বোলিংয়ে কোণঠাসা করেছেন বাংলাদেশী টপঅর্ডারদের। তাই এবার সেখান থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে বাংলাদেশের ওপেনারদের। যদিও মিরপুরের ধীর উইকেটে পেসারদের জন্য তেমন কিছুই থাকবে না। এরপরও শাহীন আফ্রিদি চ্যালেঞ্জটা নিয়ে সতর্কবার্তাই দিয়েছেন বাংলাদেশী ব্যাটারদের। তিনি বলেছেন, ‘এশিয়ার সব উইকেটই আসলে কম-বেশি ধীরগতির। লোকে বলে যে স্পিনারদের সহায়তা বেশি মেলে। তবে শক্তপোক্ত হলে ও গায়ে জোর থাকলে এখানেও কার্যকর হওয়া যায়। আমার কাছে ব্যাপারটি হচ্ছে, ৩ ওভারের স্পেল হোক বা ৫ ওভারের, আগ্রাসী বোলিং করতে চাই। এভাবেই সাফল্য ধরা দিচ্ছে। দ্বিতীয় টেস্টেও আমরা আগের টেস্টের মতো পারফর্মেন্স দিতে চাই।’ এই টেস্টে বাংলাদেশ দলে গতিময় পেসার তাসকিন খেলতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু তিনি সবেমাত্র ইনজুরি আক্রান্ত আঙ্গুলের সেলাই কেটে মাত্র ২ দিন অনুশীলন করেছেন। তার খেলা নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘অবস্থা যদি বলেন ওর এই ম্যাচ খেলার জন্য হয়তো কালকে (আজ) পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগবে। তখন হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে ভাল হবে। কিন্তু আমার মনে হয় নিউজিল্যান্ডে খেলার জন্য সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা আছে।’ চট্টগ্রাম টেস্টে জেতা পাকিস্তানের একাদশে পরিবর্তন আসার তেমন সম্ভাবনা নেই। বিশেষ করে স্পিনিং উইকেট হওয়াতে অফস্পিনার সাজিদ খান ও বাঁহাতি স্পিনার নুমান আলীই থাকছেন। সঙ্গে এক পেসার কমিয়ে হয়তো আরেকজন স্পিনারকে টানা হতে পারে। এছাড়া আর কোন পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়ে শাহীন বলেন, ‘জুটি বেঁধে বল করতে হয়। হাসানেরও এখানে কৃতিত্ব আছে এবং হাসানের সঙ্গে যখনই আমি বোলিং করি, আমরা নিজেদের মধ্যে ঠিক করে নেই যে, কে কখন আক্রমণ করবে, কে রান আটকে রাখবে। হাসানেরও তাই ভূমিকা আছে।’ এর আগে মিরপুরে ২ টেস্ট খেলে দুটিতেই বেশ ভাল ব্যবধানে জিতেছে পাকিস্তান। এমনকি সর্বশেষ ২০১৫ সালে খেলা টেস্ট সিরিজে খুলনায় ড্র করলেও মিরপুরে এসে জিতেছে তারা। এবারও তাই শতভাগ সাফল্য পেতে উন্মুখ তারা। সিরিজ জিততে শুধু ড্র করলেই চলে বাবর আজমদের। তাই ভারমুক্ত হয়েই নামবে তারা। এই ম্যাচে অবশ্য ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বাংলাদেশের শক্তি বেড়েছে সাকিব যোগ হওয়াতে। তাকে নিয়ে মুমিনুলও বললেন, ‘উনি আসলে, অধিনায়ক হিসেবে আমি নির্ভার থাকি। তার ব্যাটিং-বোলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। দলগত সমন্বয়ে তার থাকাটা আমাদের জন্য দারুণ ইতিবাচক দিক।’ ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে কিছুটা ভাল করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভরাডুবি হয়েছে বাংলাদেশের। এবার ব্যর্থতা এড়াতে তাই ব্যাটিংয়ে ভাল করা জরুরী। বিশেষ করে দুই ইনিংসেই দিনের প্রথম এক ঘণ্টার আর্দ্রতায় বিপর্যস্ত হয়েছেন বাংলাদেশী ব্যাটাররা। এ বিষয়ে মুমিনুল বলেন, ‘আমার কাছে টেস্ট ম্যাচে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ যেটা হলো আপনার প্রথম এক ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি ব্যাট করি, ওরা যদি করে যেই করুক। আমরা যদি একটা ভাল শুরু করি তাহলে ভাল। আর সবাই জানে আমাদের শক্তির জায়গা হলো ব্যাটিং। ব্যাটিং শক্তিতে আমরা যদি ৬ সেশন ব্যাট করতে পারি তাহলে খেলায় ফিরতে পারব।’ মিরপুরে সর্বশেষ খেলা টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেটিও ছিল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ। তবে সেটি ছিল প্রথম চক্র। এবার দ্বিতীয় চক্রে মিরপুরে প্রথম টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ পাকদের বিপক্ষে ১২ টেস্টের ১১টিতে হার ও একটি জয়ের বাজে পরিসংখ্যান এবং সর্বশেষ ম্যাচে মিরপুরে মাত্র ১৭ রানে হারের বেদনা নিয়ে নামতে হবে মুমিনুলদের। সেই সঙ্গে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ঘরের মাঠে প্রথম সিরিজেই পুরো পয়েন্ট খোয়ানোর শঙ্কা আছে। এখন মুমিনুলরা কি করবেন তা মিরপুরের রহস্যময় উইকেটের চরিত্রটাই হয়তো অনেকখানি নির্ধারণ করে দেবে।
×