ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার নাগরিক প্রতিনিধিদলের কলাপাড়ায় সরেজমিন পরিদর্শন

রাখাইনদের শ্মশান দেবালয় বৌদ্ধবিহার মঠ দখলমুক্ত করে সংরক্ষণসহ বিভিন্ন দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২৭ নভেম্বর ২০২১

রাখাইনদের শ্মশান দেবালয় বৌদ্ধবিহার মঠ দখলমুক্ত করে সংরক্ষণসহ বিভিন্ন দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ রাখাইনদের নিজের জমির রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসীচক্র জোড় করে ক্রমাগতভাবে জমিজমা কেড়ে নিচ্ছে। দখল থেকে বাদ যায়নি শ্মশান-দেবালয় পর্যন্ত। জাল দলিল বানিয়ে, হুমকি দিয়ে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে নানারকম মামলা দিয়ে সর্বশান্ত করা হচ্ছে। এসব কারণে ৯৫ ভাগ রাখাইনদের সংখ্যা কমে গেছে। বিকৃত করে দেয়া হচ্ছে পাড়া কিংবা রাখাইন গ্রামের নাম। বর্তমানে ৯৯ ভাগ রাখাইন পরিবার আজ ভূমিহীন। আলাদা শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকা, ধর্মীয় ও নিজস্ব সাংস্কৃতিক কাজ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে পটুয়াখালী-বরগুনার রাখাইন জতিসত্তা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যেখানে ১৯০০ সালের দিকে এই দুই জেলায় রাখাইনদের সংখ্যা ছিল এক লাখ। ১৯৪৮ সালে ৩৫-৫০ হাজার, ১৯৯০ সালে চার হাজার। যা ২০১৪ সালে পৌছেছে মাত্র ২৫৬১ জনে। বর্তমানে পটুয়াখালীতে রাখাইন পাড়া রয়েছে ৩১ টি। এর মধ্যে কলাপাড়া উপজেলায় রয়েছে ২৮টি। যা ১৭৮৪- ১৯৮৪ সালে ছিল ১৪৪টি পল্লী। একইভাবে বরগুনায় ৯৩ টি রাখাইন পল্লীর বর্তমানে আছে মাত্র ১৩টি। দুই জেলায় ২৩৭টি রাখাইন পাড়ার আছে মাত্র ৪৪টি। সবশেষ ছয়আনিপাড়া রাখাইন পল্লী বিলুপ্ত করা হয়েছে। অধিগ্রহণের ফলে এ পাড়াটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আদিবাসী রাখাইনদের সকল উৎসব ছিল ভূমিকে কেন্দ্র করে। ফসল ফলানোর জন্য জমি তৈরি করা, বীজ বোনা, ফসল তোলা, ফসলের ব্যবহার, বিয়ে, জন্ম-মৃত্যু-আনন্দ এসব উৎসবগুলো ঋতু ও ভূমিকেই নিয়ে। অথচ সেই ভূমিই নেই। আদিবাসী রাখাইনদের দাবি, তাঁদের কাছ থেকে ভূমি কেড়ে নেয়ার অর্থ হচ্ছে একটি বাগান থেকে ফুল ছিড়ে নেয়ার মতো। ভূমি নেই তো আনন্দ-উৎসব কিছুই নেই। সংস্কৃতিচর্চার জায়গা কোথায়, গান-ণৃত্য তো দুরের কথা; মনের কথা বলার জায়গাই তো নেই। কলাপাড়া-কুয়াকাটার রাখাইন জনপদ সরেজমিন পরিদর্শন শেষে নাগরিক প্রতিনিধি দলের পক্ষে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস শনিবার শেষ বিকেলে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, কুয়াকাটায় ফ্রুচাইপাড়ায় ১৯২৫ সালে নির্মিত গৌতম বুদ্ধের শয়ণরত বৌদ্ধবিহার এলাকার চারপাশ দখল করা হয়েছে। দেবালয় লেখা রেকর্ডের জমিও রক্ষা পায়নি। একইভাবে কলাপাড়া উপজেলার থনজুপাড়া, মিশ্রীপাড়া, দেয়ারামখোলা, কালাচানপাড়া, তুলাতলী, নয়াপাড়া, সোনাপাড়া, চইয়াপাড়া, হাড়িপাড়াসহ অধিকাংশ পাড়ার শ্মশান পর্যন্ত দখল হচ্ছে। প্রত্যেক পাড়ার রিজার্ভ পুকুর দখল হচ্ছে। প্রত্যেক পাড়ার মুর্তি চুরি হচ্ছে। এসব বন্ধসহ সকলের নিরাপত্তার দাবি করা হয়েছে। এছাড়া বেদখলকৃত ভূমি উদ্ধার, রাখাইন ভাষার শিশু শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা, বিকৃত করা রাখাইন পাড়ান নাম সংরক্ষণ, যেসব রাখাইনরা রয়েছেন তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাখাইনদের সকল বৌদ্ধ মঠ ও বিহার সংরক্ষণসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকার মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, নাগরিক উদ্যোগ এর প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, এএলআরডি’র প্রোগ্রাম অফিসার ( ট্রেনিং) আজিম হায়দার, স্থানীয় রাখাইন মংচোথিন তালুকদার, দামো রাখাইন প্রমুখ। এসময় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব।
×