ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবেন না

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২০ অক্টোবর ২০২১

ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবেন না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এদেশে সব ধর্মের মানুষ তাঁদের ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে। আমাদের সংবিধানেও সেই নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। আমাদের ইসলাম ধর্মও সেই কথাই বলে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করো না। কাজেই সেই বাড়াবাড়ি যেন কেউ না করে এবং এই দেশের সব মানুষ যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এই দেশের শিশুরা যাতে মেধা ও জ্ঞান নিয়ে যথাযথভাবে বিকশিত হবার সুযোগ পায় এবং কাউকে যেন তাঁর ছোট ভাই শেখ রাসেলের মতো নির্মমতার শিকার হতে না হয় সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশকে যেন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কারণ এত রক্তক্ষয় এত কিছু বাংলাদেশে ঘটে গেছে। কাজেই এ ধরনের ঘটনা আর যেন না ঘটে। দেশের মানুষের জন্য আমরা একটা সুন্দর পরিবেশ রেখে যেতে চাই, যাতে রাসেলের মতো আর কাউকে হারাতে না হয়, এ ধরনের নিষ্ঠুর ঘটনা যেন আর না ঘটে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন ‘শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষে মঙ্গলবার গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দেশে খুনীদের রক্ষায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে না বলে আইন করা হলো এদেশে। বিশ্বে যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন, অনেকে আমাকেও প্রশ্ন করেন- তাদের সেই প্রশ্ন করার কী অধিকার আছে? বাবা-মা-ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচার চাইতে পারিনি, আমাকে একটি মামলাও করতে দেয়া হয়নি। তখন তারা কোথায় ছিলেন? তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনীদের দায়মুক্তি দিতে শুধু আইন করা নয়, খুনীদের রাষ্ট্রদূত বানিয়ে পুরস্কৃত করা, প্রহসনের নির্বাচনে খুনীদের এনে সংসদে বসানোর ঘটনা ঘটেছে। জিয়াউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া এসব কাজ করেছে। ’৭৫ পরবর্তী হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এবং নির্বিচারে সামরিক অফিসার-সৈন্যদের হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর একের পর এক ক্যু’র ঘটনা ঘটেছে। তখন অনেকে বলার চেষ্টা করেছে যে, জিয়ার হাতে নাকি সেনাবাহিনী শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল হয়েছিল! ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত দেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে। এতে সেনাবাহিনীতে ডিসিপ্লিন ও শক্তিশালী হয় কীভাবে? জিয়াউর রহমান শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শুধু জড়িত ছিল না, হাজার হাজার সেনা অফিসার ও সৈন্যকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা ও নির্যাতন করেছে। তাদের মধ্যে কোন মানবতা ছিল না, এখনও নেই। আওয়ামী লীগের ওপর জিয়ার অত্যাচারের খড়গ তার দলও অব্যাহত রেখেছে। খালেদা জিয়ার সরকারের সময়ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত ও মদদ দেয়ার ঘটনা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার করেছি, রায়ও হয়েছিল। কিন্তু ২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকারে এসে সেই বিচার আবার বন্ধ করে দেয়, চাকরিচ্যুত খুনীদের ডেকে এনে পুনর্বহাল ও পদোন্নতি পর্যন্ত দেয় এই খালেদা জিয়া। খুনী খায়রুজ্জামানকে পদোন্নতি এবং আরেক খুনী মৃত পাশাকে পদোন্নতি দেয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, খুনীদের প্রতি খালেদা জিয়ার এই যে পক্ষপাতিত্ব এটার কারণটা কী? কারণটা খুব স্পষ্ট। কারণ খুনী মোশতাকের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল। ছোট ভাই শেখ রাসেলকে সর্বশেষ হত্যা করা হয়। বলা হয়েছিল, ওই ছোট্ট শিশুটিও যেন না বাঁচে। এই নির্দেশটা কে দিয়েছিল? কারা দিয়েছিল? সব শেষে সব লাশ মাড়িয়ে শেখ রাসেলকে হত্যা করা হলো, সবচেয়ে এটাই বড় কষ্টের। আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেন কারাবালার প্রান্তরের মতো ঘটনা ঘটে গেল। কারাবালায় শিশু-নারীদের হত্যা করা হয়নি। যে বাঙালী জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করলেন, বছরের বেশি সময় কারাগারে নির্যাতন সহ্য কররেন- সেই বাঙালীর হাতেই বঙ্গবন্ধু সপরিবারে জীবন দিতে হলো। মাত্র ১০ বছরের শিশু রাসেলকেও চলে যেতে হলো ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে। তিনি বলেন, রাসেলের যখন জন্ম হয় তখন বাবা (বঙ্গবন্ধু) চট্টগ্রামে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত ছিলেন। সেখানেই তাঁকে রাসেলের জন্মের কথা জানানো হয়। আসার হাত ধরেই রাসেল হাঁটতে শেখে। আমাদের বড় চার ভাই-বোনেরও শেখ রাসেল ছিল অত্যন্ত আদরের, কিন্তু বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত। সরকারপ্রধান আরও বলেন, শিশুর নিরাপত্তা, শিশু অধিকার আইন তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে করে দিয়ে গেছেন। প্রাথমিক শিক্ষাটাকে অবৈতনিক করে দিয়ে গেছেন, বাধ্যতামূলক করে দিয়ে গেছেন। কাজেই আমার বাবার আদর্শ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, যাতে আমাদের এই দেশের শিশুরা যেন আর এই নির্মমতার শিকার না হয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের, এখনও আমরা সেই নির্মমতা মাঝে মাঝে দেখি। পরবর্তীতেও আমরা দেখেছি। কিন্তু এইটা যেন না হয়। দেখেছি, আগুন নিয়ে পুড়িয়ে কীভাবে হত্যা করা হচ্ছে জ্যান্ত মানুষগুলোকে, শিশুকে পর্যন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় পিতা দেখেছেন নিজের চোখের সামনে আগুনে পুড়ে সন্তান মারা যাচ্ছে। সে রকম নিষ্ঠুর ঘটনা তো বাংলাদেশে ঘটেছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য এই বাংলাদেশের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এইটুকু চাইব, এখানে মানবতার প্রশ্ন যারা তোলে, তারা যেন এই ঘটনাগুলো ভালভাবে দেখে যে বাংলাদেশে কী ঘটল, কী ঘটেছে। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা কোন শিশু রাস্তায় ঘুড়ে বেড়াবে না, টোকাই থাকবে না। তাদের যেন একটা ঠিকানা থাকে, তারা যেন একটু ভালভাবে বসবাস করতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য যে, এই দেশের প্রতিটি গৃহহীন মানুষ একটা ঘর পাবে। প্রতিটি মানুষ শিক্ষা পাবে। চিকিৎসা পাবে। ভালভাবে বাঁচবে। প্রতিটি শিশু তার যে মেধা, তার যে জ্ঞান, তার যে বুদ্ধি, সেটা যেন বিকশিত হতে পারে। বাংলাদেশকে তারা যেন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি।
×