ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় হত্যা, তিনজন গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ১৯ অক্টোবর ২০২১

ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় হত্যা, তিনজন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার আশুলিয়ায় জামগড়া শিমুলতলার দি ভাই ভাই ফার্নিচারে কাজ করতেন রমজান মিয়া (১৯)। গত ১ অক্টোবর কাজ শেষে মোল্লা বাজারে ভাড়া বাসায় ফেরার পথে পলমল গার্মেন্টসের সামনে ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়েন তিনি। ছিনতাইকারীরা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টাকালে রমজান তাতে বাধা দেন। এ সময় ছিনতাইকারী তার বুকে, পেটে এবং সরু রড দিয়ে গলায় আঘাত করে। পরে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে থানা পুলিশ খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও সক্রিয় ছিনতাইকারী দলের হোতা ও সহযোগীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মূলহোতা আমিনুল (২৮), সহযোগী সাগর মোল্লা (২৮) ও মোঃ ইউনুছ (৩৫)। রবিবার রাতভর কয়েকটি জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে নিহত রমজানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি জব্দ করা হয়। সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি’র এলআইসির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এসব তথ্য জানান। বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানান, ৪ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে নিহত রমজান মিয়া দ্বিতীয়। আর্থিক অনটনের সংসারে জীবিকার সন্ধানে প্রায় ছয় বছর আগে শিশু অবস্থায় ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় রমজান। এরপর আশুলিয়ায় শিমুলতলায় খালার পরিবারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থেকে সেখানে রানা মিয়ার ফার্নিচারের দোকানে ছয় হাজার টাকা বেতনে প্রায় তিন বছর কাজ করে। পরবর্তীতে একই এলাকার দি ভাই ভাই ফার্নিচার দোকানে ১১ হাজার টাকা বেতনে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করে আসছিল। মুক্তাধর জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন রমজান। পথিমধ্যে ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়ার পলমল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সামনে তাকে পথরোধ করে ছিনতাইকারী। এ সময় ছিনতাইকারীরা রমজানের কষ্টার্জিত টাকায় কেনা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় রমজান বাধা দেয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীরা ধারালো ছুরি দিয়ে রমজানের বুকে, পেটে ও সরু রড দিয়ে গলায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার মধ্যে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় নিকটস্থ নারী ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহত রমজানের খালা মোসাম্মৎ কুলসুম বেগম (২৩) অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানান, ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে তা সিআইডি’র নজরে আসে। সিআইডি ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনার বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ ও গভীরভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর নরসিংদীর জামগড়া এলাকা থেকে মূল হোতা আমিনুলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে সাগর মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। আর ইউনুছকে গ্রেফতার করা হয় আশুলিয়ার জিরানী এলাকা থেকে। বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানান, গ্রেফতারকৃতরা মূলত সক্রিয় ছিনতাইকারী দলের হোতা ও সহযোগী। তারা ওই এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীদের টার্গেট করে তাদের গতিরোধ করে ছিনতাই করত। কেউ তাদের ছিনতাই কাজে বাধা দিলে ধারালো ছুরি, লোহার রড দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যেত।
×