ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশে এনআইডির জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১৬ অক্টোবর ২০২১

বিদেশে এনআইডির জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা

অনলাইন রিপোর্টার ॥ বিদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবাকে নাগরিকদের কাছে নিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরে ৪০টি দেশে এনআইডি কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশের হাইকমিশন বা অ্যাম্বাসির মাধ্যমে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এতে এনআইডি কর্মকর্তারা দেশ থেকে গেলে সেখানকার হাইকমিশন/অ্যাম্বাসির লোকবলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন। রেজিস্ট্রেশন টিম পাঠানো ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় আইডিইএ (স্মর্টকার্ড) প্রকল্প-২ এর সংশ্লিষ্ট খাত থেকে ব্যয় করা হবে। আইডিইএ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)-এ আগামী ৫ বছরে পর্যায়ক্রমে ৪০টি দেশে উল্লিখিত কার্যক্রম নিতে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ভার ধরা রয়েছে। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নবেম্বর দুবাই প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নবেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থারত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এরই মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের দ্বার উন্মোচিত করে সংস্থাটি। কিন্তু অনলাইন কার্যক্রমে তেমন সাড়া পড়েনি। এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে থেমে যায় সব প্রক্রিয়াই। জানা গেছে, দুবাই থেকে সাড়ে পাঁচশ জনের মতো অনলাইনে আবেদন করেছেন। যুক্তরাজ্যেও তেমন সাড়া নেই। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ৬০টির মতো আবেদন। এই অবস্থায় নতুন করে বিদেশে গিয়েই নাগরিকদের সেবা দেওয়ার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে ইসি। এদিকে বিদেশে কর্মী পাঠিয়ে এনআইডি সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যকে প্রথম বেছে নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব দিলে নীতিগত সিদ্ধান্তটি নেয় সংশ্লিষ্ট কমিটি। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পরিচয়পত্র ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত ওই কমিটি ১২ অক্টোবর একটি বৈঠক করে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনাসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এতে এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক, পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, আলোচনার পর পাঁচটি সুপারিশ করেছে কমিটি। সুপারিশগুলো হলো— (ক) বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে দেশভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হবে। তবে যেহেতু লন্ডন দূতাবাসের হাইকমিশনার সেখানে এনআইডি সেবা চালুর জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন, সেহেতু পরীক্ষামূলকভাবে লন্ডনে কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। অনতিবিলম্বে কাজ শুরু করার লক্ষ্যে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয়াদি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করে একটি চিঠি পাঠানো যেতে পারে। (খ) জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের ডাটার শুদ্ধতা, স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে আবশ্যিকভাবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নিজস্বজনবলের সমন্বয়ে গঠিত রেজিস্ট্রেশন টিম দ্বারা সম্পাদন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে একজন কর্মকর্তা এবং দুজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি রেজিস্ট্রেশন টিমের মাধ্যম কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। তবে ওই টিমে সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনের স্থানীয় জনবল সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এজন্য লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করতে হবে। (গ) রেজিস্ট্রেশন টিম পাঠানো ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় আইডিইএ প্রকল্প-২ এর সংশ্লিষ্ট খাত ব্যয় করা হবে। (ঘ) প্রবাসী নিবন্ধনের জন্য ইতোপূর্বে চালুকৃত পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে যুক্তরাজ্য থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩০৮টি আবেদন পাওয়া যায়। সংখ্যাগত দিক থেকে তা নগণ্য বিধায় অনলাইন পোর্টালের লিংক সম্পর্কে এবং ওই লিংক ব্যবহার করে আবেদনের পদ্ধতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থাকে চিঠি পাঠানো যেতে পারে। অন্যদিকে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান পদ্ধতির পাশাপাশি ভিন্নরূপ কৌশল হিসাবে স্পট রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাস কর্তৃক নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে ভোটার হওয়ার নিমিত্ত কোনো ব্যক্তি প্রয়োজনীয় তথ্যাদি নিয়ে হাজির হলে, তাৎক্ষণিকভাবে নিবন্ধন ফরম-২(ক) পূরণ করে তার ছবিসহ বায়োমেট্রিকস নিতে হবে। পরবর্তীতে সেই ডাটা দেশে নিয়ে আসার পর সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসার কর্তৃক সরেজমিন তদন্তে সঠিক ও যোগ্য বিবেচিত হলে এবং আঙুলের ছাপ ম্যাচিং এ যোগ্য হলেই তাদের কেবল এনআইডি দেওয়া হবে। এরপর এনআইডি প্রিন্ট করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনে পাঠিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাদের তদন্তে নেতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া যাবে অথবা আঙলের ছাপ ম্যাচিংয়ে অযোগ্য প্রমাণিত হবে তাদের এনআইডি দেওয়া হবে না। (ঙ) রেজিস্ট্রেশন করতে প্রয়োজনীয় কাগজাদি: অনলাইন জন্মসনদ; বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি; এসএসসি/সমমানের শিক্ষা সনদ; আবেদনকারীর পিতা/মাতা/ভাই/বোন অথবা একজন রক্তের সম্পর্কীয় নিকট আত্মীয়ের (বাংলাদেশে বসবাসকারী) এনআইডি নম্বর; তবে জন্ম সনদের বিকল্প হিসাবে যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত কী ধরনের কাগজাদি নেওয়া যেতে পারে সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন যুক্তরাজ্য সংশ্লিষ্ট উইং এর কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে স্থায়ী নাগরিকত্ব অর্জনকারীদের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে ইস্যুকৃত দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিদ্যমান আইনি ব্যাখ্যা তুলে হাইকমিশনের মতামত চাওয়া হবে।
×