ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গলাচিপা, রাঙ্গাবালীতে উন্নয়নের ছোঁয়া

প্রকাশিত: ২২:২১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

গলাচিপা, রাঙ্গাবালীতে উন্নয়নের ছোঁয়া

শংকর লাল দাশ, গলাচিপা ॥ ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুত’। বিদ্যুত বিভাগের অনেকেই এ স্লোগান যে এভাবে এবং এত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে, তা আদৌ ভাবতে পারেননি। এখন সুইচ টিপলেই জ্বলছে আলো। ঘর হচ্ছে আলোময়। কাজ হচ্ছে দ্রুত এবং নির্বিঘœ। বিদ্যুতের স্বপ্ন এভাবে পূরণ হবে তা কখনও কল্পনাতেই ছিল না। অথচ এটাই এখন বাস্তব। তিনদিকে সর্বগ্রাসী নদী আর একদিকে বিশাল সাগর। তারমাঝে জেগে থাকা দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী। ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রধান জনপদ বাহেরচর বাজারে বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে গেছে। এ জনপদের মানুষ জন্ম থেকেই বিদ্যুতের অভাবে ‘চোখ থাকতে অন্ধ’ ছিল। প্রায় দু’লাখ মানুষের কেউই ভাবতে পারেননি, এ অঞ্চলে কখনও বিদ্যুত আসবে। অনেকগুলো নদী আর সাগর পেরিয়ে বিদ্যুত সুবিধা পাওয়ার স্বপ্ন আমাদেরও ছিল না। এ অসম্ভবকে সম্ভব করে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়া একমাত্র সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণেই সম্ভব হয়েছে, এজন্য এলাকাবাসী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়ার কাজটি খুব একটা সহজ্যসাধ্য ছিল না। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই তা ছিল অনেকটা দুঃসাধ্য। কিন্তু মুজিববর্ষে প্রতিটি ঘরে আলো পৌঁছে দেয়ার জন্য বর্তমান সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আর মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নকারীদের কঠোর পরিশ্রমেই তা সম্ভব হয়েছে। এজন্য অন্তত পাঁচটি নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ দিতে হয়েছে। পার্শ্ববর্তী ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার মুজিবনগর থেকে তিনটি নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে রাঙ্গাবালীর সবচেয়ে দূরবর্তী ও দুর্গম দ্বীপ ইউনিয়ন সাগরঘেঁষা চরমোন্তাজে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছে। রাঙ্গাবালী উপজেলার সদরসহ চারটি ইউনিয়নে বিদ্যুত পৌঁছেছে পার্শ্ববর্তী গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়ন থেকে বুড়াগৌরাঙ্গ নদের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে। অপর বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন চালিতাবুনিয়ায় বিদ্যুত পৌঁছেছে গলাচিপা সদর ইউনিয়ন থেকে আগুনমুখা নদের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলার সবগুলো গ্রামে অতিদ্রুত বিদ্যুত পৌঁছে দিতে পল্লী বিদ্যুত সমিতির বেশ বড় একটি টিম বর্তমানে রাতদিন কাজ করছে। পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোঃ মাইনুদ্দিন জানান, চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাঙ্গাবালী উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কারণে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ হিসেবে খ্যাত পল্লী বিদ্যুতের একটি বিশাল টিম প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। চলতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে প্রায় চার হাজার সংযোগ দেয়া হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সবগুলো গ্রামে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে নিরলস প্রচেষ্টা চলছে। আশা করা হচ্ছে উদ্বোধনের আগেই সর্বত্র বিদ্যুত সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে বিদ্যুত সংযোগ নিতে গলাচিপা ও চরবিশ্বাস থেকে দুটি সাবমেরিন ক্যাবল টানা হয়েছে। চরমোন্তাজ ইউনিয়নে বিদ্যুত দিতে তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গসহ তিনটি নদীর তলদেশ দিয়ে ৫ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল টানা হয়েছে। একটি উপজেলায় বিদ্যুতের জন্য পাঁচটি নদীতে সাবমেরিন ক্যাবল টানা একটি বিরল ঘটনা। যা কেবল বর্তমান সরকার প্রধানের আন্তরিকতাতেই সম্ভব হয়েছে। কেবল বিদ্যুত নয়। দুর্গম দ্বীপাঞ্চলীয় জনপদ নিয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা গঠনও বর্তমান সরকারের আরেকটি বিশাল অর্জন বলে মনে করেন দ্বীপ-চরবাসীরা। গত ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে রাঙ্গাবালী উপজেলা উদ্বোধন করেন। এরমধ্যে দিয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। তার আগে রাঙ্গাবালীসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন গলাচিপা উপজেলার আওতাধীন ছিল। ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই রাঙ্গাবালী উপজেলা গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও তৎকালীন বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন আনুষ্ঠানিকভাবে রাঙ্গাবালী পুলিশ তদন্তকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পরে রাঙ্গাবালী উপজেলা গঠনের পরিকল্পনা হিমাগারে চলে যায়। ২০০৮ সালে পুনরায় সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পরই রাঙ্গাবালী উপজেলা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল নিয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা বাস্তবায়নের পরই এ অঞ্চলের বঞ্চিত মানুষের প্রশাসনিকভাবে ভাগ্য খুলে যায়। আগে যে কোন কাজের জন্য দুর্গম জলপথ পাড়ি দিয়ে মানুষজনকে গলাচিপা উপজেলা সদরে যেতে হতো। যা ছিল যথেষ্ট সময় ও শ্রমের কাজ। অর্থ ব্যয়ও হতো অনেক। কিন্তু এখন মানুষ তার নিজ এলাকাতেই সব ধরনের প্রশাসনিক সুবিধা পাচ্ছে। যা এলাকার মানুষের জন্য অবারিত সুযোগ বয়ে এনেছে। উপজেলা গঠন ও বিদ্যুতের ন্যায় অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে রাঙ্গাবালী উপজেলায়। নির্মিত হয়েছে বিশাল উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স। সকল সরকারী দফতর এসেছে একই ভবনের ছাদের তলায়। পুলিশের জন্য নির্মিত হয়েছে নিজস্ব ভবন। স্থানীয় কলেজ ও মৌডুবী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ করা হয়েছে। উপজেলার রাস্তাঘাটেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া বিদ্যুত সুবিধায় পটুয়াখালীর আরেক দ্বীপ উপজেলা গলাচিপাও অনেক এগিয়ে গেছে। অর্জন করেছে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ। মুজিববর্ষে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুত কর্মসূচীর আওতায় পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সবগুলো গ্রাম বিদ্যুতায়িত হয়েছে। গলাচিপা উপজেলার বিচ্ছিন্ন দুই দ্বীপ ইউনিয়ন চরকাজল ও চরবিশ্বাসে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়। চলতি বছর পার্শ্ববর্তী ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার মুজিবনগর থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চরকাজল-চরবিশ্বাস ইউনিয়নে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়। পল্লী বিদ্যুত সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে গলাচিপা উপজেলার মাত্র ১২টি গ্রামে সাত হাজার পরিবারে বিদ্যুত সংযোগ ছিল। সেখানে এখন ৮৯টি গ্রামের প্রায় সবগুলো পরিবার অর্থাৎ ৭২ হাজার পরিবার বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে। এছাড়া গলাচিপা উপজেলায় বিদ্যুত সুবিধা উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে পটুয়াখালী থেকে গলাচিপা পর্যন্ত পৃথক সঞ্চালন লাইন টানার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে গলাচিপায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুতের ন্যায় যোগাযোগেও পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা একাধিক ক্ষেত্রে মাইলফলক ছুঁয়েছে। গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে পটুয়াখালী জেলা শহরে যাতায়াতে ৪-৫ ঘণ্টার ক্লান্তিকর নৌযাত্রার অবসান হয়েছে। এর শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। ওই সময়ে নির্মিত হয়েছে জেলা সদরে যাতায়াতে সাড়ে ১৭ কিলোমিটার সড়ক। যা বর্তমান সরকারের সময়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে। এখন মাত্র ৪০-৫০ মিনিটেই সড়ক পথে পটুয়াখালী পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। একইভাবে পার্শ্ববর্তী দশমিনা উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে রণগোপালদী নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন সেতু। এ সেতুর মাধ্যমে গলাচিপার সঙ্গে দশমিনা, বাউফল, দুমকি ও পটুয়াখালী সদর উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। উপজেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। উন্নয়নের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে গেছে একদার পিছিয়ে পড়া গলাচিপা। উপজেলা সদরে নির্মিত হয়েছে এবং নির্মাণাধীন রয়েছে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন ও দশমিনা সার্ভে ইনস্টিটিউটের মতো বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক স্থাপনা। ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসেই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার মধ্য দিয়ে গলাচিপা ও ডাকুয়া ইউনিয়নের দুটি অংশ নিয়ে ১৯৯৭ সালে গলাচিপা পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমান সরকারের আমলে পৌরসভা প্রথমে ‘খ’ এবং পরে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়। ৩ দশমিক ৩৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় বর্তমানে ৫০ হাজার মানুষের বাস। মেয়র আহসানুল হক তুহিন বলেন, বর্তমানে ৪টি উৎপাদক নলকূপ ও ২টি ওভারহেড ট্যাঙ্কের মাধ্যমে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার পানি পৌরবাসীকে সরবরাহ করা হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনে প্রায় ১৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে। প্রস্তাবিত রয়েছে আরও প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার ড্রেনেজ। পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ খালটি পুনরুদ্ধারসহ সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং ১২টি প্রকল্পে প্রায় ১০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত পৌর এলাকায় বিভিন্ন রাস্তায় ৭০০টি সড়ক বাতি লাগানো হয়েছে এবং ২টি জেনারেটরের মাধ্যমে সাড়ে পাঁচশত গ্রাহককে জরুরী বিদ্যুতসেবা দেয়া হচ্ছে। পৌর এলাকার বর্জ্য অপসারণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের দফতরে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের সময়ই নিজস্ব পৌরভবন, পৌর মার্কেট, ৩টি সাইক্লোন শেল্টার এবং পুরো শহরের রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। সরকারের চেষ্টায় শিশু কিশোরদের জন্য বিনোদন পার্ক, গোটা পৌরএলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, ব্যায়ামাগার নির্মাণ ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করাসহ মডেল পৌরসভা গড়ার চেষ্টা চলছে এদিকে, রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি যোগাযোগের জন্য পানপট্টি-কোড়ালিয়া রুটের আগুনমুখা নদীতে ফেরি সার্ভিস চালু ও রাঙ্গাবালী উপজেলা সদরে দ্রুত হাসপাতাল নির্মাণ হলে এলাকার মানুষ ব্যাপক উপকৃত হতো। বর্তমানে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে হাসপাতাল নির্মাণ কাজ। যে কারণে সামান্য রোগব্যধিতেও এলাকাবাসীকে গলাচিপা সদরে যেতে হচ্ছে। যা মানুষকে মহাদুর্ভোগে ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, সাগর তীরবর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলা বরাবরই মৎস্যসম্পদে সমৃদ্ধ। কিন্তু উপজেলার কোথাও মৎস্য অবতরণকেন্দ্র নেই। এতে মৎস্যসম্পদ বাজারজাতকরণে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে, রাঙ্গাবালী উপজেলার সোনারচরকে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা ও বাস্তবায়ন প্রকল্প কয়েক বছর ধরে আটকে আছে। রাঙ্গাবালীর ট্যুরিজম উদ্যেক্তা একে আজাদ সাথী বলেন, ১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সোনারচরকে ২০১১ সালে বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সোনার চরে পর্যটকদের ওঠানামার জন্য জেটি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, হরিণ দেখার প্ল্যাটফর্ম, পিকনিক স্পট, পায়ে হাঁটা পথ, পর্যবেক্ষণকেন্দ্র, বন্য প্রাণীর সুপেয় পানির জন্য পুকুর খনন, ছাউনি, কাঠের সেতু, কর্মচারীদের ব্যারাক হাউস, বসার ব্যবস্থার জন্য বেঞ্চ ইত্যাদি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা করা হয়নি। পরে ২০১৪ সালে সোনার চরে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জরুরীভিত্তিতে দুটি হেলিপ্যাড, বিশ্রামাগার, অফিস ভবন, টয়লেট, ইট বিছানো সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে রোয়ানুসহ পরবর্তী কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সেগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা আর পরে মেরামত করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, সোনারচর একটি আদর্শ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার সব ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার। তাহলে পর্যটকদের যাতায়াত বাড়বে এবং এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। চার বছর আগে তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান গলাচিপা-চরকাজল রুটের বুড়াগৌরাঙ্গ নদে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করেন। এতে বিচ্ছিন্ন দুটি দ্বীপ ইউনিয়ন চরকাজল ও চরবিশ্বাস সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসে। চরবিশ্বাস ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল মুন্সি জানান, পরবর্তীতে ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেলে ইউনিয়ন দুটির বাসিন্দারা আবার যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গত কয়েক বছর ধরে গলাচিপা ও রাঙ্গাবালীসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার মানুষ গলাচিপা শহর সংলগ্ন রামনাবাদ নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি তুলছেন। এমপি এসএম শাহজাদা বিষয়টি জাতীয় সংসদেও তুলে ধরেছেন। একইভাবে ২০১৫ সালে গলাচিপার আমখোলা এলাকায় রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হলেও পরবর্তীতে তা অন্য এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। এর প্রতিবাদে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ সমাবেশ-মানববন্ধন করেছে। কিন্তু স্থানান্তর প্রক্রিয়া বাতিল হয়নি। কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, আমখোলায় রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্জল গড়ে তোলার জন্য প্রচুর সরকারী খাসজমি রয়েছে। এতে জমি অধিগ্রহণের অর্থ সাশ্রয় হবে। এলাকার বেকার সমস্যার সমাধান হবে। জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন।
×