ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাম্পার ফলনে খুশি টাঙ্গাইলের পাট চাষীরা

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাম্পার ফলনে খুশি টাঙ্গাইলের পাট চাষীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইল জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি পাট চাষীরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না থাকায় এবার পাটের ফলন বেশি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৯৮৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৮৮ হেক্টর। চলতি মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১০৩ হেক্টর জমিতে বেশি পাট চাষ হয়েছে। এছাড়াও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৮৩ বেল। আর অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৯ বেল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কম হয়েছে ৭ হাজার ২৯৪ বেল। চলতি মৌসুমে ভূঞাপুরে ৪ হাজার ১২৯ হেক্টর, টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ২ হাজার ৭৮০ হেক্টর, গোপালপুরে ২ হাজার ২১০ হেক্টর, দেলদুয়ারে ১ হাজার ৪৩৫ হেক্টর, নাগরপুরে ১ হাজার ৪১৮ হেক্টর, কালিহাতীতে ১ হাজার ৮৫ হেক্টর, মির্জাপুরে ১ হাজার ৮৫ হেক্টর, বাসাইলে ৪৪৫ হেক্টর ও সখীপুরে ১৩৫ হেক্টর, ঘাটাইলে ৯৬০ হেক্টর, মধুপুরে ২০৬ হেক্টর আর ধনবাড়ী উপজেলা ২০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় পাটের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৯৮৫ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছিল ১৫ হাজার ৮১৫ হেক্টর। সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ পাট জাগ দিচ্ছেন, আবার কেউ পাট ধুয়ে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যথা সময়ে খাল, বিল ও ডোবায় পানি আসায় পাট জাগ দেয়া সুবিধাও ভোগ করছেন কৃষকরা। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারও সহযোগিতা করছেন পাট হতে আঁশ ছাড়ানোর কাজে। এছাড়া অনেকেই পাট হাটে নিয়ে বিক্রিও শুরু করেছেন। পাইকাররা বাড়িতে এসেও পাট কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাট চাষীরা জানায়, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পাট চাষ করতে সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। প্রতি বিঘায় ছয় থেকে সাড়ে ছয় মন পাট হয়। প্রতি মণ পাটের বর্তমান মূল্য সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। অপর দিকে প্রতি বিঘায় চার থেকে সাড়ে চারশ আটি পাট খড়ি হয়। প্রত্যেক আটি পাট খড়ির দাম আট থেকে নয় টাকা। এ কারণে চলতি বছর কৃষকরা অন্যান্য ফললের চেয়ে পাটে বেশি লাভবান হচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও বন্যা দেরিতে হওয়াসহ বৃষ্টিপাত তুলনার চেয়ে কম হওয়ায় এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আলকদিয়া গ্রামের পাট চাষী খোকন মিয়া বলেন, ১৫ শতাংশ জমিতে আমি পাট চাষ করেছি। তিন মণ পাট পামু। এছাড়াও দুই হাজার টাকার পাটকাঠি বেচুম। এ বছর পাটের দাম ভালোই। ৩৫-৩৬’শ টাকা মণ। পাট চাষে আমার খরচ হইছে প্রায় তিন হাজার টাকা। এ বছর পাট চাষ কৈইরা লাভ পামু। পাট চাষী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বোরো ধান কাইটা সেই জমিতে পাটের বীজ বুনছিলাম। আমি তিন বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করছি। ফলনও খুব ভালো হইছে। দেরিতে বন্যা আর বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন খুবই ভাল হইছে। সব মিলাইয়া আমার ২০ মণের মত পাট হইছে। গত বছর ২৩’শ টাকা মণ পাট বিক্রি করলেও গত সপ্তাহে আমি ৩৩’শ টাকায় ১০ মণ পাট বিক্রি করছি। বাকি ১০ মণ এখন বেচমু না। পাটের দাম আরও বাড়বো। দাম বাড়লে তখন বেচমু। এই জমিতে পাটের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষ করলে এতো টাকা পাইতাম না। আগদেউলী গ্রামের পাট চাষী নয়া মিয়া বলেন, আমার ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে খরচ হইছে ২৫ হাজার টাকা। পাট হইছে ৩৩ মণ। সাড়ে তিন হাজার টাকা করে পাট বিক্রি করছি। এছাড়াও পাটকাঠি তো আছেই। পাইকাররা আইসা ৮ টাকা আটি দাম করছে তাও আমি বিক্রি করি নাই। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার বলেন, চলতি মৌসুমে বিএডিসি ও বেসরকারি বীজ বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে আর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কারণে এবার লোকাল জাতের চেয়ে উফশী জাতের পাট বেশি চাষ করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় জেলায় এবার পাট চাষ আর উৎপাদন বেশি হয়েছে। এছাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে পাটের দাম। দাম বেশি পাওয়ায় আগামী বছর পাটের চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
×