ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আশঙ্কা

আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে আফগানে তালেবান ক্ষমতা দখল

প্রকাশিত: ২২:১২, ১ আগস্ট ২০২১

আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে আফগানে তালেবান ক্ষমতা দখল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে শনিবার অনলাইনে আফগানিস্তান বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচনার বিষয় ছিল ‘আফগানিস্তানে আসন্ন তালেবান ক্ষমতা দখলের পরিণাম’। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। উদ্বোধনী বক্তৃতায় ইউরোপ, আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার ১২টি দেশের মানবাধিকার কর্মী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী ও আইন প্রণেতাদের স্বাগত জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখল উপমহাদেশের আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকির কারণ হবে। তাই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন এবং ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের কারণে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমাদের বিশ্বাস, এর ফলে আফগানিস্তানের মানুষের জীবন ও জীবিকার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তি বিপন্ন হবে। আমরা ইতোমধ্যে আফগানিস্তানে পূর্ববর্তী তালেবান শাসনকালে মানব সভ্যতার নিদর্শন ধ্বংস, নির্বিচারে হত্যাকা-, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিশেষভাবে বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, নারী ও শিশুদের ভয়ঙ্কর অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি। সে সময় জামায়াতে ইসলামী, হরকাতুল জিহাদ এবং অন্যান্য ইসলামী সংগঠন পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশীকে তথাকথিত জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য আফগানিস্তানে প্রেরণ করেছিল। মোল্লা উমরের সরকার পতনের পর তারা ফিরে এসে সারাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তালেবান এবং আল কায়েদার মতো জিহাদিরা কোনও দেশের রাজনৈতিক বা ভৌগোলিক সীমানার পরোয়া করে না। যদি পশ্চিমা শক্তিগুলো আফগান জনগণের দুর্দশার কথা চিন্তা না করে আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা অন্য কোন দেশে তালেবান, আল-কায়েদার মতো জঙ্গীদের ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অনুমোদন করে তবে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ৯/১১-এর মতো বহু ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখতে হতে পারে। সেজন্য আজকের সম্মেলন থেকে আমরা আফগানিস্তানে আসন্ন তালেবান দখলের বিরুদ্ধে বিশ্বের আলোকিত নাগরিক সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই এবং আফগানিস্তানে তালেবানসহ সকল জঙ্গীদের নির্মূল এবং শান্তি পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ন্যাটোর উপস্থিতির দাবি জানাই। পশতুন নেতা এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিনিধি ফজল-উর-রেহমান আফ্রিদি বলেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তালেবানরা একের পর এক এলাকা দখল করে জনসাধারণের সম্পদ বিনষ্ট করছে, আত্মঘাতী হামলা চালাচ্ছে, গাড়িবোমা হামলা করছে, মহিলাদের হত্যার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে এবং যুদ্ধবন্দীদের তাৎক্ষণিক হত্যা করছে। যদি তালেবানরা পুনরায় কাবুল দখল করে তবে আমি মনে করি, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্রীয় স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তার সবই বিলুপ্ত হবে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আফগানিস্তানের এই ধ্বংসের পেছনে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মদদ রয়েছে। আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে তারা তালেবানদের প্রশিক্ষণ, অর্থ ও রসদ সরবরাহ করে নির্বাচিত আফগান সরকারের বিরুদ্ধে তালেবানদের প্রত্যক্ষ সমর্থন প্রদান করছে। পাকিস্তানের জঙ্গী সংগঠনগুলো, সাধারণ জনগণ এমনকি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত গণমাধ্যমও প্রকাশ্যে তালেবানদের দ্বারা আফগানিস্তান ধ্বংস উদযাপন করছে। পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সঙ্গেই দ্বিচারিতা করেনি, নিজ দেশের জনগণ ও পার্লামেন্টের সঙ্গেও দ্বিচারিতা করেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, তালেবানরা যদি পুনরায় কাবুল দখল করে তাহলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এবং এ অঞ্চলে ইসলামি জঙ্গীবাদ ও উগ্রপন্থীদের উত্থান ঘটবে। তারা ভারতীয় কাশ্মীর অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে এবং এর ফলে ৯০-এর দশকের মতো বাংলাদেশে পুনরায় জঙ্গী সংগঠনগুলোর পুনরুত্থান ঘটবে। প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিক ও ‘এ্যান্ড রেগম ইন আফগানিস্তান : ফর হোম দ্য ডাইস রোলস’ গ্রন্থের লেখক হিরন্ময় কার্লেকার বলেন, তালেবান সম্পর্কে কারও ভ্রান্ত ধারণা থাকা উচিত নয়। তারা ইসলাম সম্পর্কে বিকৃত ধারণা পোষণ করে এবং সারাবিশ্বে শরিয়া আইন কায়েম করার অঙ্গীকারবদ্ধ একটি জিহাদি দল। তারা একেবারে ধর্মান্ধ গোঁয়ার যারা তাদের লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত বা বিধ্বস্ত না হওয়া পর্যন্ত থামবে না। আফগানিস্তানে তারা ক্ষমতায় এলে বিশ্বের কোথাও কেউ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না। আফগানিস্তান পুনরায় বিশ্বব্যাপী জিহাদের চারণক্ষেত্রে পরিণত হবে। তাদের বিজয় বিশ্বের সর্বত্র জিহাদিদের মনোবলকে ব্যাপকভাবে চাঙ্গা করবে। এরপর তারা এককভাবে অথবা সংঘবদ্ধভাবে সর্বত্র হামলা শুরু করবে। অতএব, তালেবানকে আফগানিস্তান থেকে মূলোৎপাটন করার বিকল্প নেই। ব্রিটিশ মানবাধিকার নেতা ও কলামিস্ট জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, ৯/১১-এর ধ্বংসযজ্ঞের পর গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে; বিশেষত মেয়ে এবং নারীদের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে। তালেবানি পশ্চাৎপদ শক্তিসমূহ যদি আফগানিস্তানে পুনরায় আধিপত্য বিস্তার করে তবে অন্যান্য দেশগুলোতে, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ায় আরও বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠী এ থেকে উৎসাহিত হতে পারে। খুব বেশি দিন হয়নি, বাংলাদেশে হেফাজত দাবি করছিল- মেয়েদের কেবল পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করা উচিত।
×