ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

২৩ বছর জেল খেটেও ‘গ্যাং কালচারে’ জড়িয়ে পড়ে রফিকুল

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২৫ জুন ২০২১

২৩ বছর জেল খেটেও ‘গ্যাং কালচারে’ জড়িয়ে পড়ে রফিকুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুই দফায় ২৩ বছর জেল খেটে বেরিয়েও ভয়ঙ্কর রফিকুল ইসলাম ওরফে রতন ‘গ্যাং কালচারে’ জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তার বিশাল বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অপরাধে অতিষ্ঠ ছিল এলাকাবাসী। তার নেটওয়ার্ক ছিল হাজারীবাগ, আশুলিয়া ও সাভার এলাকা জুড়ে। এরকম অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার গভীর রাতে ডিবি পুলিশের একটি টিম সাভার ও হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধী রফিকুল ইসলাম ওরফে রতন (৫৪) এবং তার সহযোগী আরমানকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে গুলিভর্তি একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান। অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার জানান, হত্যা মামলায় ২২ বছর কারাভোগের পর প্রায় চার বছর আগে কারামুক্ত হন রফিকুল ইসলাম ওরফে রতন (৫৪)। ২০১৭ সালে জেল থেকে বেরিয়েই আবারও জড়িয়ে পড়েন ‘গ্যাং কালচারে’। ফলে কারামুক্তির মাত্র দুই বছর পর ২০১৯ সালে অস্ত্র আইনের মামলায় আবারও এক বছর জেল হয় তার। ২০২০ সালে দ্বিতীয় দফায় কারামুক্ত হন রফিকুল। তবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি ভয়ঙ্কর এই অপরাধী। চলতি বছরের ৪ জুন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে একজনের পক্ষ নিয়ে জমি দখল করতে গিয়ে ফের গুলি চালায় রফিকুল। সেই ঘটনায় তাকে আবারও পিস্তলসহ গ্রেফতার করে গোয়েন্দা (ডিবি) মিরপুর বিভাগ। তিনি জানান, গত ৪ জুন হাজারীবাগ থানার ৮৯ গজমহল শিকারিটোলা এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে রফিকুলসহ ৮-১০ সন্ত্রাসী বিরোধপূর্ণ জমিতে যায়। সেখানে দেয়াল নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে জমির মালিক মামুনকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় হাজারীবাগ থানায় একটি মামলা হয়। অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার জানান, মামলাটি ডিবির রমনা জোনাল টিমের হাতে আসে। গোয়েন্দারা তদন্তে নেমে জানতে পারেন রফিকুল ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে ওই জমিতে যায়। গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর গত বুধবার গভীর রাতে সাভার ও হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে রফিকুল ইসলাম ওরফে রতন এবং তার সহযোগী আরমানকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রফিক জানায়, ওই ঘটনায় তারা ভাড়ায় গিয়েছিল। তারা সে অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। তার বাহিনীসহ আবুল হাশেম নামে এক ব্যক্তির ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে ওই জমিতে গিয়ে গুলি চালিয়েছে তারা। ডিবি প্রধান জানান, এর আগে একটি হত্যা মামলায় ২২ বছর ও অস্ত্র মামলায় এক বছর জেল খেটে ২০২০ সালে বের হয়। জেল থেকে বেরিয়ে সন্ত্রাসী রফিক ভাল না হয়ে আবারও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করে। এবারও অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার জানান, এর পেছনে আরও যারা জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। আপনারা জানেন, জমি-জমা সংক্রান্ত কোথাও গোলাগুলি হলে ডিএমপির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেখানেই অস্ত্র ব্যবহার হবে, সেখানেই আমরা কাজ করব। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এর আগে পল্লবীর ঘটনাতেও আমরা কাউকে ছাড় দেইনি বলেও উল্লেখ করেন ডিবি প্রধান। কিশোর গ্যাং অপরাধ সংক্রান্ত আরেক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার জানান, কিশোর গ্যাং অপরাধ নিরসনে ডিএমপির গোয়েন্দা জোনাল টিম এবং থানাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের মদদদাতা যদি কেউ থাকে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
×