স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওরা যাত্রীবেশী দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী। বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়ায় যাত্রীদের তাদের নিজস্ব প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। এরপর সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে ওই যাত্রীর হাত-পা বেঁধে সর্বস্ব লুট করে নির্জন স্থানে ফেলে দেয়। এরকমই একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে চক্রের প্রধান মোঃ মানিক মিয়া, মোঃ জাকির হোসেন, আরিফ, হযরত আলী ও জাহিদ হোসেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্টো-গ-১১-৭৪৫৭), একটি মোবাইল, ছুরি, গামছা, স্কচটেপ, ইলেকট্রিক তার, স্ক্রু ড্রাইভার ও লোহার তৈরি লিভার উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব কথা জানান।
ডিবি অতিরিক্ত কমিশনার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানান, তারা রাজধানীর খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে ভুলতা, গাউছিয়া, ময়মনসিংহ, শেরপুরে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে কৌশলে যাত্রী ওঠায়। পরে যাত্রীর গলায় ইলেকট্রিক তার পেঁচিয়ে, গামছা দিয়ে চোখ ও হাত বেঁধে, মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে কিংবা গলায় ছুরি ধরে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে যাত্রীর সর্বস্ব লুট করে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে চলে যায়। হাফিজ আক্তার জানান, আরিফুল ইসলাম নামে একজন গত ২০ মে রাত সাড়ে নয়টায় বাসায় ফিরতে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন। তার মতো আরও কয়েকজন অপেক্ষা করছিলেন। কিছু সময়ের মধ্যে একটি প্রাইভেটকার আসে, সামনে থেকে ছুটে যান কয়েকজন। তাদের পিছু পিছু যান আরিফুলও। একটি সিট পেয়ে তিনিও গাড়িতে উঠে বসেন। তাকে মাঝখানে বসিয়ে গাড়ি সামনে যায়। কিছুদূর যেতেই দুপাশ থেকে দুজন চেপে ধরে আরিফুলকে। তার ফোন, নগদ টাকা ও বিকাশের পিন নাম্বার কেড়ে নেয়া হয়। পরে চোখে স্প্রে করে গাজীপুরের কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়। এ ঘটনায় আরিফুল খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ডিবির উত্তরা বিভাগ বুধবার গভীর রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে ছিনতাইকারী চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার জানান, ভিকটিম আরিফুলের আশপাশে আরও কিছু লোক ছিল। তারাও বাসের জন্য অপেক্ষা করার অভিনয় করছিলেন। মূলত তারাও এই চক্রের সদস্য। হঠাৎ আসা একটি প্রাইভেটকারে অন্যদের সঙ্গে উঠতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন আরিফুল। তাই রাইড শেয়ারের আগে সতর্ক থাকতে নগরবাসীকে পরামর্শ দেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার জানান, রাজধানীর সড়কগুলো পুরোপুরি সিসিটিভির আওতায় আনতে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। রাজধানীতে অনেক কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। সেগুলো কেন্দ্র করে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। সড়কগুলো আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তির সিসিটিভির আওতায় আনা সম্ভব হবে। এর ফলে ফুটেজে মানুষের চেহারা কিংবা গাড়ির নম্বরপ্লেট স্পষ্ট দেখা যাবে। রাজধানীর ফার্মগেট থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে।
