ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গভ্যাক্স

প্রকাশিত: ২২:৫১, ১৭ জুন ২০২১

বঙ্গভ্যাক্স

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশের গেøাব বায়োটেকের করোনাভাইরাসের টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এবং চীন ও ভারতের দুটি টিকাসহ মোট তিনটি টিকা মানুষের শরীরে পরীক্ষার (হিউম্যান ট্রায়াল) জন্য নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল। বিএমআরসি বলছে, হিউম্যান ট্রায়ালের আগে বিএমআরসির নিয়ম অনুযায়ী সব ধরনের শর্ত পূরণ করতে হবে। বুধবার সকালে বিএমআরসির বিশেষজ্ঞদের সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়। বিএমআরসি সূত্র জানিয়েছে, শিম্পাঞ্জি ও বানরের ওপর এই টিকাগুলোর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সমস্ত কাগজপত্র বিএমআরসিতে জমা দিতে হবে। বুধবার বিএমআরসির পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ রুহুল আমিন বলেছেন, সরাসরি অনুমতি দেয়া হয়েছে বলা যাবে না। তবে শর্ত দেয়া হয়েছে। ভুল ত্রæটি ঠিক করলে আমরা অনুমতি দিয়ে দেব। শর্ত পূরণ করলে অনুমোদন দেয়া হবে। বিএমআরসির অনুমতি পেলে খুব শীঘ্রই শতাধিক মানুষের ওপর দেশীয় এই টিকার ট্রায়াল চালানো হবে। এ জন্য কিছু বেসরকারী হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে। গেøাব বায়োটেক লিমিটেডের কোয়ালিটি এ্যান্ড রেগুলেটরি অপারেশনের ম্যানেজার ডাঃ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, কোন একটি ড্রাগ বা ভ্যাকসিন প্রস্তুতের পর ১ম পর্যায়ে গবেষণা ও পরীক্ষাগারে টেস্ট করা হয়। পরবর্তীতে প্রাণিদেহের ওপর ইঁদুর অথবা খরগোশ অথবা বানরের ওপর এটি পরীক্ষা চালানো হয়েছে। গেøাব বায়োটেকের বঙ্গভ্যাক্সের এই দুইটির ওপর পরীক্ষা চালানোর পর ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের কাছে মানবদেহে প্রয়োগের পরীক্ষার চালানোর অনুমতি চাওয়া হয়। ডাঃ মহিউদ্দিন আরও বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর অনুমতি চাওয়ার পর ৯ ফেব্রæয়ারি গেøাব বায়োটেকের কাছে আরও কিছু তথ্য চেয়েছিল বিএমআরসি। তা বিস্তারিত আকারে সেখানে পাঠানো হয়েছে। বুধবার বিএমআরসি বঙ্গভ্যাক্স, চীন ও ভারতের টিকা মানবদেহে পরীক্ষার শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছে বলে তিনিও গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। তবে এখন পর্যন্ত মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর বিষয়ে কি শর্ত দেয়া হয়েছে তা জানতে পারেননি। মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষা চালানোর জন্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। প্রথমে নিরাপত্তা, কার্যকারিতা ও কত বেশি সংখ্যক মানুষের ওপর টিকাটির পরীক্ষা চালানো হয়েছে সেগুলো গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। গত ১৯ মে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গেøাব বায়োটেকের আবিষ্কৃত এক ডোজের এমআরএনএ টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এর গবেষণাপত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল ভ্যাকসিন এ প্রকাশিত হয়। ওই জার্নালে বলা হয়েছে, বঙ্গভ্যাক্স হলো এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি বিশ্বের প্রথম এক ডোজের কার্যকরী টিকা, যা সার্স- কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সফলভাবে মানবকোষ এবং প্রাণীদেহে সুদৃঢ় সুরক্ষা দেখিয়েছে। বিশ্বের বিখ্যাত টিকা আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গেøাব বায়োটেক লিমিটেড নিজস্ব প্রযুক্তিতে এ টিকা তৈরি করেছে এবং বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করেছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কাজ করার সহজাত সীমাবদ্ধতাগুলো যেমন- কাঁচামালের ব্যবস্থাকরণ, নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে অভিযোজন, গবেষণা তহবিলের অভাব ইত্যাদি সত্তে¡ও ড. কাকন নাগ এবং ড. নাজনীন সুলতানার নেতৃত্বে তরুণ বিজ্ঞানীদের একটি চৌকস দল এ টিকা আবিষ্কার করেছে। প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে, এ টিকা মানবকোষ এবং প্রাণীদেহে সহনশীল ও নিরাপদ। টিকাদান পরবর্তী ৭ম দিনে নির্দিষ্ট এ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ মিলেছে, যা ১৪তম দিনে কাক্সিক্ষত মাত্রায় পাওয়া গেছে। টিকাদান পরবর্তী ৯১ দিন পর্যন্ত মেমরি কোষগুলো পর্যাপ্ত সংখ্যায় পাওয়া গেছে, যা নির্দেশ করে, এই ভ্যাকসিনটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দিতে সক্ষম। অন্য এমআরএনএ ভ্যাকসিনের তুলনায় এ ভ্যাকসিনটি সুলভ হবে, তাই স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য সহজেই ক্রয়যোগ্য হবে। এর মাধ্যমে এই দেশগুলোর প্রায় ৫শ’ কোটি মানুষের এমআরএনএ ভ্যাকসিন (বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর টিকা প্রযুক্তি) পাওয়ার সুযোগ হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত বছরের ১৫ অক্টোবর গেøাব বায়োটেক কর্তৃক আবিষ্কৃত এমআরএনএ ভ্যাকসিনকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। গত ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল বঙ্গভ্যাক্সের গবেষণাগার পরিদর্শন করে সব তথ্য উপাত্ত ও প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নথিপত্র পর্যালোচনা করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অগ্রগতিতে সহযোগিতা করেন। পরবর্তীতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ওই গবেষণাগার ও উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন সাপেক্ষে গত ২৮ ডিসেম্বর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ‘বঙ্গভ্যাক্স’ উৎপাদনের অনুমতি দেন। টিকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি +৪ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মাস এবং-২০ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। এটি সিন্থেটিক্যালি তৈরি হওয়ায় তা ভাইরাসমুক্ত এবং শতভাগ হালাল। বর্তমানে গেøাব বায়ায়োটেকের উৎপাদন কেন্দ্রে প্রতিমাসে ১ কোটি ডোজ টিকা তৈরি করার সক্ষমতা রয়েছে।
×