ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অধিকার আদায় করে নিতে হবে

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ৯ মার্চ ২০২১

অধিকার আদায় করে নিতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নারী সমাজকে নিজ নিজ অধিকার আদায়ে নিজেদের যোগ্যতর হিসেবে গড়ে তোলা এবং শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের তৈরি করে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের এই সমাজকে যদি আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তাহলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমি নারীদের একটা কথা বলব যে, ‘নারীর অধিকার দাও, নারীদের অধিকার দাও’ বলে শুধু চিৎকার করা আর বক্তৃতা দেয়া- এতে কিন্তু অধিকার আসে না। অধিকারটা আদায় করে নিতে হবে। আদায় করার মতো যোগ্যতাটা অর্জন করতে হবে। আর সেই যোগ্যতা আসবে শিক্ষা-দীক্ষা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।’ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সোমবার গণভবন থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নারীরা যেন নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারে, তা নিশ্চিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশপাশি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি সমাজের অর্ধেক যদি অকেজো থাকে, তাহলে সেই সমাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে। আগে ধর্মের নাম নিয়ে বা সামাজিকতার কথা বলে নারীদের ঘরে বন্ধ করে রাখার যে চেষ্টা ছিল, সেই অচলায়তন ভেদ করে মেয়েরা এখন এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। আমদের জাতীয় উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা নানামুখী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে জীবন সংগ্রামে জয়ী নারীদের সম্মাননা দেয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মসূচীর মাধ্যমে সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে পাঁচ জন ‘জয়িতা’কে জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এবারও পাঁচজনকে জয়িতা সম্মাননায় ভূষিত করা হয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন- অর্থনৈতিকভাবে সফল নারীর ক্যাটাগরিতে হাছিনা বেগম নীলা, শিক্ষা ও চাকরির সাফল্যের ক্যাটাগরিতে মিফতাহুল জান্নাত, সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে মোসাম্মাৎ হেলেন্নেছা বেগম, নির্যাতিতা-বিজয়ী নারী ক্যাটাগরিতে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা রবিজান এবং সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য অঞ্জনা বালা বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুনেসা ইন্দিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকার চেক, সম্মাননা ক্রেস্ট এবং সনদ তুলে দেন। প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুনেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম বক্তব্য দেন। জয়িতা পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন জয়িতা হাছিনা বেগম নীলা। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা পর্বের মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধান অতিথির বক্তৃব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন একেবারে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে যে সহায়তা দেয়া হচ্ছে, তার ৭৫ শতাংশ আগে মেয়েরাই পেত। এখনও প্রায় ৭০ শতাংশ মেয়েরাই পায়। এছাড়া সরকার প্রায় ২ কোটি ৫ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিচ্ছে, সেখানেও মেয়েদের অংশটাই বেশি। কারণ সমাজকে যদি আমাদের গড়ে তুলতে হয়, তাহলে শিক্ষার ক্ষেত্রেও নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে শিক্ষা দিতে হবে। আর প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও আমরা বলছি যে প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তারা প্রশিক্ষণ নিতে পারেন, যাতে যে কোন কাজে মেয়েরা নিজেদের যোগ্যতা দেখাতে পারে এবং তারা কাজ করতে পারে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে কোন নারী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদ পেতেন না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সর্বক্ষেত্রে নারীদের অবস্থানটা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর পার্লামেন্টের কথা নাই বললাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্পীকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলের নেতা সবই মহিলারা। এটা আমরা স্থান করে নিয়েছি। কাজেই, আমি মনে করি যে এটাই আমাদের সব থেকে বড় অর্জন বাংলাদেশের। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। নারী-পুরুষ সবাই মিলে প্রিয় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। পাকিস্তান আমলে জুডিসিয়াল সার্ভিসে মেয়েরা আসতে পারত না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাদের সুযোগ করে দিয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় এসে উচ্চ আদালতেও নারীদের নিয়ে এসেছি। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ডসহ সব বাহিনীতে নারীদের অংশ নেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বিদেশী কূটনৈতিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও নারীরা হচ্ছেন। স্থানীয় সরকারে নারীদের সংরক্ষিত আসন রেখেছি। ব্যাংকের এমডি, গবর্নর, খেলাধুলাসহ সব জায়গায় নারীদের সুযোগ আছে। নারী উন্নয়নে সরকারের কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২৫ প্রণয়ন করেছি। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা নিরোধ কর্মপরিকল্পনাসহ নারী সুরক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। বাবার নামের সঙ্গে মায়ের নাম সংযুক্ত করে নারীর মর্যাদা নিশ্চিত করেছি। নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। কর্মজীবী নারী হোস্টেল করেছি। ৬৩টি শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্র করেছি। সব জায়গায় এটি করতে নির্দেশও দিয়েছি। ৩২০০ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে নারীদের অনুদান দেয়া হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন করেছি। আমার বাড়ি, আমার খামারের মাধ্যমে নারীরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য ব্যবস্থা করেছি। মুজিববর্ষে গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছি, এতে নারীকেও মালিকানা দেয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলামের ইতিহাস পড়লে জানা যায় যে মুসলমান মেয়েরাও পুরুষদের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে যেত, অস্ত্র এগিয়ে দিত, আহতদের সেবা শুশ্রƒষা করত। হযরত রাসুলে করীমের (সা.) স্ত্রী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা নিজে বক্তৃতা করতেন। দুনিয়ায় ইসলামই নারীর অধিকার দিয়েছে।’
×