ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাড় কাঁপানো শীত জানুয়ারিজুড়ে থাকবে

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১৯ জানুয়ারি ২০২১

হাড় কাঁপানো শীত জানুয়ারিজুড়ে থাকবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাপমাত্রা খুব বেশি নামেনি। কিন্তু মাঘের শীত ঠিকই দাপট দেখাচ্ছে। হাড় কাঁপানো শীত বুঝিয়ে দিচ্ছে, এ মাসের শীতে বাঘ কাঁপে। আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, শীতে এই অবস্থা জানুয়ারির বাকি দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকতে পারে। দু’/একদিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরও কমবে। সেক্ষেত্রে শীত আরও বেড়ে যাবে। তারা জানান, দেশের অধিকাংশ এলাকায় সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান নেমে এসেছে। বেশ কিছু অঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে। পাশাপাশি নদী অববাহিকাসহ বিভিন অঞ্চলের ওপর ঘন কুয়াশা দেখা দিয়েছে। ফলে তাপমাত্রা বেশি না কমলেও শীতের প্যারামিটার নিচের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। এদিকে ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের কারণে জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে শীতের প্রচণ্ডতা বেড়ে যাওয়ার কারণে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে অনেক। ঘন কুয়াশার কারণে যান চলাচলে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভোগান্তি। দৃষ্টিসীমা নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া মধ্যরাত থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হতে পারছে না। পারের অপেক্ষায় থাকা মানুষের দুর্গতির যেন সীমা নেই। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে জনপদ, তার সঙ্গে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সেই সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা। সব মিলিয়ে শীতে কাঁপছে পুরো উত্তরাঞ্চল। এর প্রভাব পড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্য এলাকায়। সকাল-সন্ধ্যায় শীতকাঁপ বাড়িয়ে তুলছে। অনেক এলাকায় খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা হচ্ছে। শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেটেখাওয়া, দুস্থ ও অসহায় মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে কোথাও কোথাও সূর্যের আলো দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। কাজের সন্ধানে শ্রমজীবী মানুষজন বাইরে বের হলেও শীতের দাপটে নাকাল হয়ে পড়ছেন। শীতের তীব্রতায় জবুথবু অবস্থা। পৌষ-মাঘ শীত ঋতু হলেও এবার পৌষের শীত বেশি জোরালো ছিল না। প্রথমদিকে শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের বিািভন্ন স্থানে শীতের মাত্রা বেড়ে যায়। এর পর মধ্য পৌষে আরও এক দফায় শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতের অনুভূতি বাড়ায়। এরপর আর শীত ছিল না বললেই চলে। গত ১২ জানুয়ারি এসে শুরু হয় তৃতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহ; যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে এখন বয়ে যাচ্ছে। তবে তাপমাত্রা এখনও অস্বাভাবিক পর্যায়ে নামেনি। কিন্তু হাঁড়ের কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সারাদেশের সব অঞ্চলে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান একেবারেই কমে এসেছে। ফলে শীতের দাপট বেড়ে গেছে। সোমবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অপরদিকে সর্বোচ্চ ২৫.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু মাঝের এই ব্যবধান ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে তাপমাত্রার এই ব্যবধান প্রায় ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে। এছাড়া দেশের শ্রীমঙ্গল, পাবনা, পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁর বদলগাছি এবং দিনাজপুর অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, তাপমাত্রা কিছু বাড়লেও শীতের অনুভূতি এখনি কমছে না। বিশেষ করে ২১ জানুয়ারি মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে তখন তাপমাত্রা আরও নেমে যাবে। ফলে শীতের অনুভূতি আরও এক দফা বাড়িয়ে দেবে। তিনি জানান, জানুয়ারিতে শীতের দাপট একই থাকবে। ফেব্রুয়ারিতে গিয়ে শীতের এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। মৌলভীবাজার ॥ কয়েকদিন থেকে মৃদু থেকে মাঝারি শৈতপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সোমবার সকাল ৯ টায় তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে হাওড়পার ও চা বাগান এলাকাসহ শ্রমজীবী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাস্তায় যানবাহন হেড লাইট জ¦ালিয়ে চালাতে দেখা গেছে। মুন্সীগঞ্জ ॥ ঘন কুয়াশার কারণে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের শিমুলিয়াঘাট থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজারঘাট পর্যন্ত নৌরুটটিতে ৬ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। সোমবার ভোর চারটায় নদীতে ঘন কুয়াশা দেখা দিলে রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাটে কয়েক শতাধিক যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি আটকা পড়ে। মাঝ নদীতে পারাপাররত তিনটি ফেরি আটকা পড়ে। কুয়াশা কিছুটা কমলে সকাল ১০টা থেকে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
×