ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চসিক নির্বাচন

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার তুঙ্গে

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার তুঙ্গে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের আর মাত্র ১২ দিন। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে প্রচারে ততই অংশগ্রহণ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। রাজনীতিতে যে ঢিলেঢালা অবস্থা ছিল তা কাটতে শুরু করেছে ভোটের আমেজে। প্রতিদিনই পাড়া মহল্লা সরগরম প্রার্থীদের নাম ও প্রতীকের স্লোগানে। আচরণবিধির কারণে সকালটা ঘরোয়া পরিবেশে কাটলেও দুপুরের পর থেকে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন প্রার্থীরা। সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যেখানেই প্রার্থীর গণসংযোগ সেখানেই ধারণ করছে মিছিলের রূপ। মেয়র প্রার্থীদের বক্তব্য রাখতে হচ্ছে তাৎক্ষণিক পথসভায়। বক্তব্যে প্রাধান্য পাচ্ছে উন্নয়নের পাশাপাশি পরিকল্পিত নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বৃহস্পতিবার গণসংযোগ করেন মহানগরীর আগ্রাবাদ এলাকায়। এ দিন তিনি কয়েকটি পথসভায় বক্তৃতাও করেন। বক্তব্যে তিনি নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। বর্তমান সরকারের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল ও মেট্টো রেল নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু এগুলো এখন দৃশ্যমান। এর আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়েও অনেকে হেসেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেগা প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সমালোচকদের মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নতুন প্রজন্মকে যথাযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে এ বিষয়ে যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টির অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, শিশুরা মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে। কারণ তাদের খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ করা যদিও সম্ভব হবে না, তবে কথা দিচ্ছি যেখানে খোলা জায়গা সেখানেই মাঠ সৃষ্টি করব। অপরাধ কর্মের জন্য কিশোরদের দোষারোপ করে লাভ নেই। পরিবেশই এদের এমন হতে বাধ্য করেছে। যদি সাংস্কৃতিক চর্চা থাকত, খেলাধুলা করার মাঠ থাকত তাহলে কিশোররা এসবে ব্যস্ত থাকত। আনন্দ বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় তারা মোবাইল ফোন বা আড্ডার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে এবং অপরাধে জড়াচ্ছে। নিজের জীবনের বায়ান্ন বছরের রাজনীতির অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৬৬ সাল থেকে রাজনীতি করি। ১৯৬৭ সাল থেকে ছাত্রলীগের পদ পদবি নিয়ে রাজনীতি করছি। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। জনগণের পাশে সবসময় ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। কথা দিচ্ছি, মেয়র নির্বাচিত হলে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াব না। সৈয়দ মোঃ জাকারিয়ার সভাপতিত্বে পথসভায় আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সিরাজুল ইসলাম, আবদুস সামাদ, জাহাঙ্গীর আলম, আবদুর রহমান মিয়া, আবদুল বারেক প্রমুখ। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন এদিন গণসংযোগ চালান উত্তর আগ্রাবাদের চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, মিস্ত্রিপাড়াসহ সংলগ্ন এলাকায়। এ সময় তিনি চট্টগ্রামকে একটি পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে অনেক কাজ হলেও পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি। প্রতিটি ওয়ার্ডেই সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। জোয়ারের পানিতেও তলিয়ে যায়, আর বৃষ্টি হলে তো ডুবেই থাকে। প্রচারে তিনি চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে বলেন, এখানে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনা নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হলে ৫ বছর মেয়াদের প্রতিটি দিন নগরবাসীর জন্য কাজ করে যাব। একটি বাসযোগ্য নগরী গড়ার কথা বলে তিনি বলেন, মাদক ও সন্ত্রাস একটি বড় সমস্যা। এ সরকারের আমলে আগ্রাবাদ এলাকা মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। আগামী ২৭ জানুয়ারি জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে ধানের শীষকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন বলে আশাবাদ বিএনপির এ নেতার। তিনি নির্ভয়ে সকলকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে ভোটের যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এদিকে, মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে হলেও কাউন্সিলর পদগুলোতে রয়েছে অনেক প্রার্থী। প্রায় সকল ওয়ার্ডে বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগে রয়েছে স্বতন্ত্রের নামে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। ভোটের প্রচার মেয়র পদের চেয়েও বেশি জমে উঠেছে কাউন্সিলর পদে। স্থানীয় নেতা হওয়ায় এলাকায় তাদের প্রভাবও বেশি। ফলে গণসংযোগে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। মূলত কাউন্সিলর পদের ভোট যুদ্ধই জমিয়ে তুলছে চসিক নির্বাচনকে। ঘটছে অনভিপ্রেত ঘটনাও। এরমধ্যেই সহিংসতায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে ভোটের আমেজ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় পুলিশ প্রশাসনও রয়েছে সতর্ক অবস্থানে।
×