ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীতে আটক ৫ ॥ বিনিয়োগকারীরা পথে

‘আমার বাজার’ নামে প্রতারণা

প্রকাশিত: ২১:২৬, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

‘আমার বাজার’ নামে প্রতারণা

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ সাবেক ডেসটিনি কর্মীদের নিয়ে ই-কমার্স কো¤পানি হিসেবে পরিচয়দানকারী প্রতিষ্ঠান ‘আমার বাজার লিমিটেড’ নীলফামারীসহ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ প্রতারণা শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। টাকা বিনিয়োগ করলে ৯০ দিনে পাওয়া যায় দ্বিগুণ লাভ এমন প্রলোভনে তারা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমন ঘটনায় বুধবার রাতে সৈয়দপুরে আমার বাজার অফিসের ৫ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনার পর জেলার অপর ৫ উপজেলায় আমার বাজারের সকল কর্মীরা গা-ঢাকা দিয়েছে। সৈয়দপুরে আটককৃতরা হলেন আব্দুল কাদের, জালাল উদ্দিন, ওয়াহেদুজ্জামান, ইয়াছিন বাপ্পী ও মিজান আরফিন। সূত্র জানায়, প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী কয়েক যুবক সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসিম আহমেদের কাছে অভিযোগ প্রদান করে। এরই প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রমিজ আলমের নেতৃত্বে পুলিশ তাদের আটক করে। এ সময় তাদের কাছে কোন বৈধ কাগজপত্র এবং ব্যাংকের আর্থিক লেনদেনের কোন হিসাব পাওয়া যায়নি। পুলিশ এখন আমার বাজারের রংপুর বিভাগের প্রকল্প পরিচালক পদধারী গোলাম মোস্তফা বাবুকে খুঁজছে। তিনি নীলফামারী জেলা সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট মাঝাপাড়া গ্রামের কফুর আলীর ছেলে। এই হোতাও গা-ঢাকা দিয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, রংপুর বিভাগীয় শহরে সেনপাড়ায় প্রধান কার্যালয় খুলে সাবেক ডেসটিনির বেশ কিছু কর্মী ‘আমার বাজার লিমিটেড’ চালু করে। করোনাকালীন সঙ্কটের সময় তারা নীলফামারী জেলার ৬ উপজেলার গ্রামগঞ্জে কর্মীবাহিনী মাঠে নামিয়ে দেয়। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা চর এলাকার বেশ কিছু তরুণ-তরুণী ও যুবারা অভিযোগ করে জানায়, উপজেলায় আমজাদ ও বাদশাসহ কয়েকজন টাকা বিনিয়োগ করলে ৯০ দিনে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায় এমন প্রলোভন দিয়ে সদস্য সংগ্রহ শুরু করে। এতে অনেকে না বুঝে দলে দলে বিনিয়োগের জন্য ছুটে আসে। কেউ এক লাখ, কেউ ৫০ হাজার, কেউবা ১০ হাজার করে টাকা বিনিয়োগ করতে থাকে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আরও প্রলোভন দেয়া হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কেউ যদি অন্য কাউকে নিয়ে এসে বিনিয়োগ করাতে পারে তার জন্য বোনাস অঙ্কের টাকা দেয়া হবে। ঠিক এভাবে নীলফামারী জেলার হাজার হাজার তরুণ তরুণী যুবারা বিনিয়োগ করতে থাকে। যা শত কোটি ছাড়িয়ে যায়। ধীরে ধীরে আমার বাজারের কর্মীদের কথাবার্তা আচরণ ভিন্ন দিকে ধাবিত হলে বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরতের জন্য ধর্ণা দিতে থাকে। এতে কর্মীরা তাদের হুমকি ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। ফলে বিনিয়োগকারীরা চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে থাকে। এক তরুণী অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবা নেই। মা ও দুই ভাইসহ অভাবের সংসার। এ অবস্থায় নূপুর নামের এক নারীর কথা বিশ্বাস করে ১৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করে আমার বাজারে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হলাম। আরেক যুবক জানায়, ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে আমি পথে বসলাম। অপর আরেকজন বলেন আমি দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলাম। এখন টাকা হারিয়ে পথে বসতে হলো। অভিযোগ মতে, আমার বাজারের রংপুর বিভাগের প্রকল্প পরিচালক পদধারী গোলাম মোস্তফা বাবু এসব ঘটনার হোতা। তিনি নীলফামারী জেলা সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট মাঝাপাড়া গ্রামের কফুর আলীর ছেলে। এর আগে তিনি ডেসটিনির কর্মকর্তা ছিলেন। সরকার ডেসটিনির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ডেসটিনির মতো ঠিক একইভাবে গোলাম মোস্তফা বাবু- ই-কমার্স কো¤পানি হিসেবে পরিচয়দানকারী আমার বাজার নামে কার্যক্রম চালু করে। তিনি রংপুর বিভাগীয় অফিসে বসলেও এই বিভাগের সকল জেলা ও উপজেলার গ্রামে গ্রামে কর্মী নিয়োগ করে বিনিয়োগকারী হাজার হাজার সদস্যের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডিমলা উপজেলার ৫ শতাধিক বিনিয়োগকারী এমন ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিলে আমার বাজারের কর্মীরা পালিয়ে যায়। পাশাপাশি এ জেলার জেলা সদর, ডোমার, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ উপজেলা থেকেও কর্মীরা পালিয়ে গেছে।
×