ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গুর ওষুধ

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৯ নভেম্বর ২০২০

ডেঙ্গুর ওষুধ

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ বিশেষ করে হেমোরেজিক ডেঙ্গু একটি ভয়াবহ সংক্রামক ও হন্তারক ব্যাধি, এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন প্রতিষেধক ভ্যাকসিন এবং ওষুধপত্র না থাকায় প্রতিবছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে বহু মানুষ মারা যায়। অবশ্য এ বছর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাবের কথা কমই শোনা যাচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে মানুষ স্বাস্থ্যসচেতন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় ডেঙ্গুর সংক্রমণও কম হতে পারে। তদুপরি গণমাধ্যমের চাপে পড়ে দুই সিটি কর্পোরেশনসহ পৌরসভাগুলোতে নিয়মিত মশকনিধন কর্মসূচীও পরিচালিত হচ্ছে। এতকিছুর পরও ডেঙ্গুরোগীর খবর যে নেই তা নয়। তবে এর ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী যেভাবে নাকাল ও বিপর্যস্ত হয়েছে তাও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। সে বছর হেমোরেজিক ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি থাকায় রক্তের চাহিদাও ছিল ব্যাপক। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের একদল চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীর হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে কার্যকর ওষুধ খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ও সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে। উল্লেখ্য, হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর রক্তের ব্লাড প্লাটিলেট তথা অনুচক্রিকা ভেঙ্গে যায়। ফলে রোগী চলে যায় শক সিনড্রোমে এবং বেড়ে যায় মৃত্যুঝুঁকি। এর প্রতিকারে বাংলাদেশী গবেষক দল ‘এলট্রম্বোপ্যাগ’ নামের একটি ট্যাবলেট স্বল্প মাত্রায় প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছেন। ওষুধটি মানুষের লিভার বা যকৃতের মারাত্মক জটিলতা, ব্লাড ক্যান্সার তথা লিউকেমিয়ায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, এই শ্রেণীর রোগীদেরও কেমোথেরাপি দেয়ার কারণে রক্তের প্লাটিলেট ভেঙ্গে যায়, যা হয়ে থাকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও। সে অবস্থায় হেমোরেজিক ডেঙ্গু রোগীদের ‘এলট্রম্বোপ্যাগ’ দেয়া হলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশী গবেষক দলের এই সাফল্যের খবর প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে। আগামীতে এক্ষেত্রে আরও সাফল্য পাওয়া গেলে তা স্থান পাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে। বর্তমানে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকার উদ্ভাবন ও অগ্রগতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে নিয়মিত। তাদের মতে, এ পর্যন্ত ৪২টি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলমান। এই তালিকায় সংযুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের নামও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় যে ১১৫টি টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অবস্থায় রয়েছে সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের তিনটি টিকার নামও আছে। এটি অবশ্যই একটা গর্ব করার বিষয়। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং উন্নতমানের। অনেক ওষুধ যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ রফতানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এখন দেখা যাচ্ছে দেশের বিজ্ঞানীদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণা এবং সাফল্যও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। গ্লোব কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের উদ্ভাবিত তিনটি টিকা তারা ইতোমধ্যে প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করে সাফল্য পেয়েছেন। এবার তারা যাবেন মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করবে ঢাকার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা সংস্থা আইসিডিডিআরবি। সংস্থাটি গবেষণা প্রটোকল তৈরি করে পেশ করবে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনে (বিএমআরসি)। এরা অনুমোদন দিলেই বাংলাদেশের টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগে আর বাধা থাকবে না। তবে বাংলাদেশের টিকার প্রয়োগে অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএরও। অনুরূপ সাফল্য যদি অর্জিত হয় ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রেও। তবে তা নিশ্চয়ই হবে বাংলাদেশের চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের একটি অর্জন। ডেঙ্গু প্রতিরোধ ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরিতে এগিয়ে আছে থাইল্যান্ডের মাহীদল বিশ্ববিদ্যালয় বা রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সেটি সফল প্রমাণিত এবং বাজারে না আসা পর্যন্ত হেমোরেজিক ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় যদি ‘এলট্রম্বোপ্যাগ’ ট্যাবলেট স্বল্প মাত্রায় প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যায় তবে তা আশাব্যঞ্জক বৈকি।
×