ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর

শিক্ষা সফরের সেই দিন...

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ১৫ নভেম্বর ২০২০

শিক্ষা সফরের সেই দিন...

দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। ক্যাম্পাস আজও খুলল না। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে প্রিয় ক্যাম্পাস থেকে দূরে হাজারো শিক্ষার্থী। তাই অজান্তেই ভাবনার আড়ালে এসে যায় ক্যাম্পাসের অম্ল মধুর দিনগুলোর, স্মৃতির পাতায় যা অমলিন। এমনি একটি দিনের কথা আজ বলবো। দিনটি আমাদের ক্যাম্পাস জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের প্রথম শিক্ষা সফর। ৫ মার্চ, ২০২০। বৃহস্পতিবার। তখনও আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে ছিলনা করোনার ভয়াল থাবা। স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে চলছিলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর ১৪ মাস পর এদিনই এলো আমাদের প্রথম ভ্রমণের সুযোগ। প্যারাসাইটোলজি বিভাগের আয়োজনে একদিনের সফর, যেখানে একদিকে হাতে কলমে শেখার সুযোগ, অন্যদিকে একঘেমি জীবনে কিছুটা প্রশান্তি খোঁজার চেষ্টা। তাইতো ট্যুরের খবর শোনার পর থেকেই উদগ্রীব হয়ে যায়, বাড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। সকাল সাড়ে সাতটায় যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও বাস ছাড়ে প্রায় দেড় ঘন্টা বিলম্বে। শিক্ষকরাও ছিলেন সাথে। গন্তব্য ভালুকা। বাসে পুরোটা সময় ছিলো গান বাজনা আর আনন্দ উদযাপন। এটাই বুঝি তারুণ্য। এটাই বাধন ছেঁড়া পাখির মুক্ত আকাশে নিজেকে মেলে ধরার ক্ষণ। প্রায় সোয়া একঘন্টা পর বাস থামলো ভালুকার উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সামনে। সেখানে নাস্তা শেষে হলো পরিচিতি পর্ব। পুরো ট্যুরের সার্বিক বিষয় নিয়ে নির্দেশনা দেন শিক্ষকরা। এরপর বাসে করে চললাম ‘তাইপে বাংলা ফেব্রিক্স’ এর উদ্দেশ্যে। ভালুকার হাজির বাজারে ১২৫ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানের একপাশে রয়েছে গরু ও মহিষের খামার। আমাদের আসল এসাইনমেন্ট ছিল সেখানেই। আমরা খামার পরিদর্শন করলাম। দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জাতের শতাধিক গরু আছে সেখানে। খামারিদের সাথে কথা বলে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করলাম। পাশাপাশি অনেক নতুন বিষয়ও শিখলাম। এরপরের সময়টা ছিলো ঘোরাঘুরি আর উপভোগ করার জন্য। বন্ধু, সহপাঠী, শিক্ষকদের সাথে ছবি তোলা, কিছুটা খেলাধুলা আর হাসি ঠাট্টার গল্প–- ট্যুরের আমেজকে বাড়িয়ে দেয়। লেকের পাড়ে তোলা গ্রুপ ছবিটা একপলকে সেই দিনটাকে মনে করিয়ে দেয় আজও। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আনন্দগুলো এখানেই। মধ্য দুপুর পেরিয়ে আমরা সেখান থেকে বের হলাম। এবারের উদ্দেশ্য একজন সফল খামারির খামার পরিদর্শন। তার নাম আলম মিঞা। খামার থেকে বেশ খানিকটা দূরে আমাদের বাস থামল। প্রত্যন্ত গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে যেতে হবে সেখানে। পথে দেখা মিলল আঁখের গুড় তৈরির কার্যক্রম, যেটি আমাদের শিক্ষা সফরে বাড়তি মাত্রা যোগ করে। আলম ভাইয়ের খামারটি খুব বেশি জায়গা জুড়ে না হলেও গরুর পাশাপাশি সেখানে ছিল মুরগির খামারও। তার কাছে থেকে আমরা শুনলাম তার সফলতা ও এর পেছনের গল্প। তিনি আমাদেরকে পুরো খামার ঘুরিয়ে দেখালেন। এরপর পুনরায় ফিরে এলাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে। সেখানে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই আবার উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলাম। শেষ বিকেলে কেউ গায়ছে গান, কেউ বাজাচ্ছে গিটার। সমস্বরে গলা মেলাচ্ছে সবাই। তাতে বেড়িয়ে এলো অনেকের সুপ্ত প্রতিভা। আমাদের বিদেশি বন্ধুদের পরিবেশনাও ছিল বলার মতো। ‘জানি আবার আসবে ফিরে, বিশ্বাসটুকু দুহাতে আঁকড়ে ধরে’ -পেপার রাইমের জনপ্রিয় ‘অন্ধকার ঘরে’ গানটির এই শেষ দুই লিরিকের সাথে গিটারের ঝংকারও থেমে গেল, থেমে গেল শতাধিক সুরেলা-বেসুরে গলার আওয়াজ, সমাপ্তি হলো ক্যাম্পাস জীবনের প্রথম আনুষ্ঠানিক ভ্রমণের।
×