ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভিটামিন সির আধার, করোনাকালে বেশ চাহিদা

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

ভিটামিন সির আধার, করোনাকালে বেশ চাহিদা

শেখ আব্দুল আওয়াল ॥ লেবু চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন মনির নামে এক যুবক। স্থানীয় বাজারে লেবু ও লেবুর কলম বিক্রি করে আয় করেছেন ১০ লাখ টাকা। তার সাফল্য দেখে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন লেবু চাষে। বিদেশ যেতে চেয়ে একাধিকবার প্রতারণার শিকার হন জয়ধরখালী গ্রামের মনির। হতাশা যখন চরমে তখনি ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে উপজেলা কৃষি অফিস ও একটি বাড়ি একটি খামারের পরামর্শ ও সহযোগিতায় শুরু করেন লেবু চাষ। আর এই লেবু চাষেই ভাগ্য বদলে যায় মনিরের। করোনাকালে লেবুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি হচ্ছে অনেক। লেবু চাষী মনিরের বাগানের লেবু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলাতে। মনিরের দাবি তার কাছ থেকে লেবু নিয়ে পাইকাররা দুবাই, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছে। মহামারী করোনাকালীন মনিরের তিন মাসে লেবু বিক্রি করে আয় করেছেন দশ লাখ টাকারও বেশি। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে পাগলা থানার পাইথল ইউনিয়নে জয়ধরখালী গ্রামের রিপন মিয়ার ছেলে মনির হোসেন ৩ বছর আগে ভিটে মাটি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার আশায় দালালের কাছে টাকা জমা দেয়। দালালের প্রতারণায় পরে বিদেশ যেতে না পেরে বাড়ির সামনে শুরু করে ছোট করে টং দোকান (মুদি দোকান)। ওই দোকানেও ব্যবসা যখন ভাল চলছিল না, তখন মনিরের মামা সজিবের পরামর্শে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে টাঙ্গাইল থেকে ১৫০০ টাকা দিয়ে ৩০০ চারা ক্রয় করে ১ একর জমিতে চাষ শুরু করেন। লেবু চাষ শুরুর ৩ বছরের মাথায় লেবু আসতে শুরু করে তার বাগানে এখন সে আরও ১ একর জমিতে উপজেলা কৃষি অফিস ও একটি বাড়ি একটি খামার এর সহায়তায় মাল্টার চাষ করেন। বর্তমানে লেবু এবং মাল্টা চাষীর জমির পরিমাণ ৪ একর। মাহমুদুল হাসান সজিব নামে এক লেবু চাষী বলেন, মনিরের বাগানের বারমাসি (সিড) লেবুর কলামের ১৫শ’ চারা নিয়ে ৩২ কাঠা জমিতে লাগিয়েছি। কিছুদিনের মধ্যে হয়ত আমার বাগানেও লেবু আসতে শুরু করবে। আমি মনে করি আমাদের মতো শিক্ষিত যুবকদের লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ না গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মত ১ ইঞ্চি জায়গা খালি না রেখে সকলেরই কিছু করা উচিত। এতে করে নিজেরাও স্বাবলম্বী হব। দেশেও বেকারত্ব দূর হবে। মনিরের বাবা রিপন মিয়া বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমি এক সপ্তাহে লেবুর বাগান থেকে দেড় লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছি। লেবু চাষী মনির বলেন, জীবনে অনেক কষ্ট করে বারবার বাবার সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করেছি, যেতে পারিনি। মামার পরামর্শে ৩ বছর আগে যখন লেবু চাষ শুরু করি তখন এলাকার মানুষ আমাকে পাগল ডাকতে শুরু করে। আর এখন আমার বাগানের লেবুই গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ফুলপুর থেকে পাইকাররা কিনে নেয়। আর এই পাইকাররাই আড়তে নিয়ে মালয়েশিয়া, বাহরাইন, মালদ্বীপ ও দুবাইয়ে পাঠায়। মনির আরও বলেন, করোনাকালীন সময় এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে ১০ লাখ টাকার উপরে লেবু বিক্রি করেছি। সঙ্গে লেবুর কলামের চারাও বিক্রি করেছি লক্ষাধিক টাকার মতো। মনিরের এই সফতলা দেখে মনিরের কাছ থেকে লেবুর কলম কিনে নিচ্ছেন ময়মনসিংহ জেলা ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, নেত্রকোণা ও শেরপুরের চাষীরা।
×