ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বার্সার ‘বোকামি’ ও ‘অস্থির’ দলবদল

প্রকাশিত: ২০:২১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

বার্সার ‘বোকামি’ ও ‘অস্থির’ দলবদল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গেল কয়েক বছরে বার্সেলোনার দলবদল দেখলে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে রীতিমতো অসহিষ্ণু এবং বোকা মনে হবে যে কারোই। যেন নিজেদের কাজে নিজেরাই আস্থা রাখতে পারছেন না তারা। গেল দুই মৌসুমেই অন্ততঃ ১৬ জন ফুটবলারকে দলে ভিড়িয়ে আবার ছেড়ে দিয়েছে তারা। এর মধ্যে কেউ কেউ খেলেছেন কেবল একটি ম্যাচ! কেউবা টিকেছেন মৌসুমের অর্ধেক! বিদায় নেয়া ১৬ জন ফুটবলারের মধ্যে মাত্র ৩ জন বার্সায় টিকেছেন ৩ মৌসুমের বেশি। তারা হলেন, থমাস ভারমেলেন, ইভান র‍্যাকিটিচ এবং লুইস সুয়ারেজ। ক্লাব থেকে বেরোনোর দরজা দেখিয়ে দেয়াদের তালিকায় সবশেষ সংযোজন সুয়ারেজ এবং সেমেদো। এর আগে বিদায় নিয়েছেন র‍্যাকিটিচ, আর্থার মেলোরা। কেবল এরাই নন, গেল ২ বছরে যারা যারা ক্লাবে যোগ দিয়েছেন আবার বেরিয়েও গেছেন, তাদেরকে দেখে আসা যাক। মারলন: বার্সা সমর্থকরা এই নামটার সঙ্গে হয়তো পরিচিতই নন। কারণ বার্সার জার্সিতে যে তাকে দেখাই যায়নি! ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ফ্লুমিনেঞ্জ ছেড়ে বার্সায় যোগ দেন মারলন। তবে টিকতে পারেননি এক মৌসুমও। সেবারই বার্সার জার্সি গায়ে অভিষেক হয় তার এবং অভিষেক ম্যাচটিই হয়ে যায় তার শেষ ম্যাচও। সেই মৌসুমেই তাকে ধারে পাঠানো হয় ফরাসী ক্লাব নিসে। ২০১৮ সালে তাকে ইতালিয়ান ক্লাব সাসৌলুর কাছে বিক্রি করে দেয় বার্সা। জেরার্ড দিউলুফিউ: বার্সার একাডেমিতেই বেড়ে ওঠেন এই ফুটবলার। ২০১৭ সালে তাকে মূল দলের অন্তর্ভূক্ত করে বার্সা। তবে দলে সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। মৌসুমের মাঝামাঝিতে দলবদলের সময় ইংলিশ ক্লাব ওয়াটফোর্ডে চলে যান তিনি। ২০১৮ সালে তাকে ১৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে পাকাপাকিভাবে নিজেদের করে নেয় ওয়াটফোর্ড। ইয়েরি মিনা: দিউলুফিউ এর মতোই বার্সায় অর্ধমৌসুম টিকতে পেরেছিলেন এই কলম্বিয়ান ফুটবলার। ২০১৮ সালের শুরুতে পালমেইরা থেকে ১২ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কাতালান ক্লাবে যোগ দেন মিনা। তবে ভালভার্দের দলে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি এই ডিফেন্ডার। একই বছরে ৩০ মিলিয়ন ইউরোতে ইংলিশ ক্লাব এভারটনে তাকে বিক্রি করে দেয় বার্সা। পৌলিনহো: চীনা ক্লাব গুয়াংজু এভারগ্রান্দে থেকে ২০১৭ সালে বার্সায় যোগ দেন পৌলিনহো। বছরখানেক পরই আবার আগের ক্লাবে ফিরে যেতে হয় এই ব্রাজিলিয়ানকে। চড়ামূল্যে তাকে দলে ভিড়িয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বার্সা কর্তৃপক্ষকে। যদিও সেই মৌসুমে ৯টি গোল এবং ৩টি অ্যাসিস্ট করেছিলেন এই উইঙ্গার। তারপরও বার্সা ছাড়তে হয় তাকে। ম্যালকম: এই ব্রাজিলিয়ানকে নিয়ে কম নাটক করেনি বার্সেলোনা। আগের দিন ইতালিয়ান ক্লাব রোমার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন ম্যালকম। একপ্রকার ছিনতাই করে পরদিন তার সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করে বার্সা। দিয়েছিল চড়া মূল্যও। ৪০ মিলিয়ন ইউরো। তবে এতকিছুর পরও তাকে বেশিদিন রাখেনি কাতালানরা। ১ মৌসুম পরই ৪০ মিলিয়ন ইউরোতেই তাকে বিক্রি করে দেয় রাশান ক্লাব জেনিত সেইন্ট পিটার্সবার্গের কাছে। লুকাস ডিগনে এবং আন্দ্রে গোমেজ: ইয়েরি মিনার মতো ডিগনে এবং গোমেজেরও ঠাঁই হয় ইংলিশ ক্লাব এভারটনে। দু'জনই বার্সায় বেশ বাজে সময় কাটিয়েছেন এবং ক্লাব ছেড়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। পাকো আলকাসার: বড় চমকের আশা নিয়ে ২০১৬ সালে ৩০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ভ্যালেন্সিয়ার কাছ থেকে আলকাসারকে কিনে নেয় বার্সেলোনা। তবে মেসি-সুয়ারেজ-নেইমারদের ভীড়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হন তিনি। ২ মৌসুম পর ২১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে যোগ দেন আলকাসার। আর্থার মেলো: এই ব্রাজিলিয়ান বেশ বিরক্তই বার্সার উপর। যেভাবে তাকে বিদায় করেছে ক্লাবটি তাতে যে কেউ অপমানবোধও করতে পারেন। মৌসুমের মাঝামাঝিতে বার্সা তাকে জানিয়ে দেয়, ক্লাব আর তাকে রাখতে চায়না। রাগে-ক্ষোভে দলে থাকার পরও, বার্সার হয়ে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দেন আর্থার। য়্যুভেন্তাসের মিডফিল্ডার মিরালেম পিয়ানিকের বিনিময়ে তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটিতে পাঠিয়ে দেয় বার্সা। আরতুরো ভিদাল: চিলিয়ান এই উইঙ্গার বড্ড আশা নিয়ে এসেছিলেন বার্সেলোনায়। তবে টিকেছেন মাত্র ২ মৌসুম। ২০১৮ সালে বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে বার্সায় যোগ দেয়ার পর প্রায়ই গণমাধ্যমে দাবি করতেন, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্লাবে যোগ দিয়েছেন তিনি। তবু বার্সার তোপ এড়াতে পারেননি এই চিলিয়ান। সম্প্রতি ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানে যোগ দিয়েছেন ভিদাল। ডেনিস সুয়ারেজ: তিনি টিকেছেন আড়াই বছর অথচ বার্সার সমর্থকরা তাকে চিনবেন খুব কমই। কারণ কাতালান জার্সিতে খুব কমই দেখা গেছে তাকে। ২০১৬ সালে বার্সায় যোগ দেয়ার পরের বছরই তাকে ধারে আর্সেনালে পাঠিয়ে দেয় স্প্যানিশরা। গেল মৌসুমে ১৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাকে কিনে নেয় সেল্টা ভিগো। অ্যালেক্স ভিদাল: এই নামটিও খুব একটা পরিচিত না সমর্থকদের কাছে। ২০১৬ সালে বার্সায় যোগ দিলেও, ইনজুরি প্রবণতা এবং ফর্মহীনতার কারণে দলে জায়গা করে নিতে পারেননি তিনি। ২০১৮ সালে ৯ মিলিয়ন ইউরোতে তাকে সেভিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয় বার্সা। হুসপার চিলিসেন: এই গোলকিপার বেশ সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন। অনেকেরই ধারণা ছিল টের স্টেগানের বিকল্প হিসেবে সেরা পছন্দ হবেন চিলিসেন। তবে কখনো লিগে খেলার সুযোগ পাননি চিলিসেন। কেবল কোপা দেল রে'তে তাকে সুযোগ দেয় বার্সা। গেল মৌসুমে ভ্যালেন্সিয়ার কাছে তাকে বিক্রি করে নেতোকে নিয়ে আসে কাতালানরা। নেলসন সেমেদো: দানি আলভেজের বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছিলো তাকে। তবে পর্তুগিজ ডিফেন্ডার আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। ৩৫ মিলিয়ন ইউরোতে তাকে দলে ভিড়িয়েছিলো বার্সা। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পরপর তিন বছর রোমা, লিভারপুল এবং বায়ার্ন ট্র্যাজেডির স্বাক্ষী হয়ে ক্লাব ছাড়তে হয়েছে তাকে। সম্প্রতি ইংলিশ ক্লাব উলভসে যোগ দিয়েছেন তিনি। থমাস ভারমালেন: চার মৌসুম কাটিয়েছেন বার্সায়। তবে খেলেছেন মাত্র ৫৩ ম্যাচে। এক মৌসুম ধারে খেলেছেন রোমায়। গেল মৌসুমে তাকে জাপানিজ ক্লাব ভিসেল কোবেতে বিক্রি করে দিয়েছে বার্সা। ইভান র‍্যাকিটিচ: বার্সার হয়ে দুর্দান্ত কিছু সময় কাটিয়েছেন ক্রোয়াট এই মিডফিল্ডার। ৬ মৌসুমে প্রায় নিয়মিত মুখ ছিলেন বার্সা একাদশের। খেলেছেন ৩১০টি ম্যাচে, জিতেছেন ১৩টি ট্রফি। ক্লাবের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম সেরা সাইনিং ছিলেন তিনি। তবে চলতি মৌসুমে তাকেও বিদায় জানিয়েছে কাতালানরা। নিজের সাবেক ক্লাব সেভিয়ায় ফিরে গেছেন সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানো এই ক্রোয়াট তারকা। লুইস সুয়ারেজ: বার্সার সবশেষ শিকার লুই সুয়ারেজ। ক্লাবটির ইতিহাসে জায়গা করে নেয়া এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারকে এই মৌসুমে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয় কাতালানরা। এর আগে ২৮৩ ম্যাচে ১৯৮ টি গোল করে বার্সার সর্বকালের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান সুয়ারেজ। তবে নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যান দায়িত্ব নেয়ার পরপরই তাকে জানিয়ে দেন, বার্সা জার্সিতে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। স্পেনেরই আরেকটি ক্লাব অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদে যোগ দিয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা স্ট্রাইকার।
×