ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়াতেই হচ্ছে ডোমিঙ্গো-ভেট্টরির চুক্তি

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২৯ আগস্ট ২০২০

বাড়াতেই হচ্ছে ডোমিঙ্গো-ভেট্টরির চুক্তি

মিথুন আশরাফ ॥ করোনাভাইরাসের প্রভাব সব পরিকল্পনা লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। ক্রিকেট দুনিয়াতেও এর প্রভাব ভালভাবেই পড়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) এখানে কিছু করার নেই। প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোসহ স্পিন বোলিং পরামর্শক ড্যানিয়েল ভেট্টরির চুক্তি বাড়াতেই হচ্ছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বকাপের সময়সূচী যে পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ বছরের টি২০ বিশ্বকাপ স্থগিত হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় হওয়ার সূচী থাকা বিশ্বকাপ হচ্ছে না এ বছর। ২০২১ সালের টি২০ বিশ্বকাপ হবে ভারতে। যদি ভারতে না হয় তাহলে শ্রীলঙ্কা অথবা সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। ২০২২ সালের টি২০ বিশ্বকাপ হবে অস্ট্রেলিয়ায়। এরপর ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ হবে ভারতে। এ তিনটি বিশ্বকাপই অক্টোবর-নবেম্বরে হবে। এ সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। আর এখানেই বিসিবি বিপাকে পড়ে গেছে। কোচদের চুক্তি না বাড়িয়েও কোন গতি নেই। যদি অনাকাক্সিক্ষত কোন ঘটনা না ঘটে, কোন কোচ চলে না যায়, নৈপুণ্য বিবেচনায় কোচদেরও বিসিবি না ছেড়ে দেয় তাহলে চুক্তি বাড়াতেই হবে। অন্তত ২০২১ সালের টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত, অক্টোবর-নবেম্বর পর্যন্ত চুক্তি বাড়াতেই হবে। প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর চুক্তি দিয়েই আসা যাক। গত বছর আগস্টে ডোমিঙ্গোকে নিয়োগ দেয় বিসিবি। দুই বছরের জন্য চুক্তি হয়। ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত নিয়োগ পান ডোমিঙ্গো। এরমধ্যে এ বছর একটি টি২০ বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ছিল। তা হচ্ছে না। তাতে করে ২০২১ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত ডোমিঙ্গোকে ধরে রাখতেই হবে বিসিবিকে। এ বছরের বিশ্বকাপ হলে টুর্নামেন্টে দলের অবস্থানের ওপর হয়তো ভবিষ্যত চুক্তির বিষয়টি থাকত। কিন্তু এখন বিশ্বকাপের নৈপুণ্যের ওপরই ডোমিঙ্গোর হিসেব নির্ভর করবে। তাতে ২০২১ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকান ডোমিঙ্গোর তত্ত্বাবধানেই থাকবে বাংলাদেশ দল। আগামী বছরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত ডোমিঙ্গোকে রাখতে হলে বিসিবিকেও চুক্তি বাড়িয়েই নিতে হবে। স্পিন বোলিং পরামর্শক ড্যানিয়েল ভেট্টরির সঙ্গে অবশ্য চুক্তি ছিল এ বছর টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্তই। গত বছর জুলাইয়ে নিয়োগ পান ভেট্টরি। তার চুক্তি শেষ হওয়ার কথা ছিল এ বছর নবেম্বরেই। কিন্তু এখন বিশ্বকাপই হচ্ছে না। তাছাড়া পরবর্তী বিশ্বকাপ ভারতে কিংবা শ্রীলঙ্কায় কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাতে যদি হয় তাহলে একজন অভিজ্ঞ স্পিন বোলিং কোচের খুব দরকার। উপমহাদেশের উইকেটে যে স্পিন বোলিংটা খুবই কার্যকর। তাই নিউজিল্যান্ডের ভেট্টরিকে ধরে রাখতে হলেও বিসিবিকে চুক্তি বাড়াতে হবে। ফিজিও জুলিয়ান ক্যালিফাতোকেও গত বছর আগস্টে নিয়োগ দেয় বিসিবি। তার সঙ্গে আগামী বছর নবেম্বর পর্যন্ত চুক্তি থাকায় তা বাড়ানো নিয়ে ভাবনায় থাকতে হচ্ছে না বিসিবিকে। ‘হেড অব ফিজিক্যাল পারফর্মেন্স’ নিক লি’র চুক্তি নিয়েও ভাবনা নেই বিসিবির। নিক লি’র সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করেছে বিসিবি। সেই হিসেবে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নিক লি। পারফর্মেন্স এ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখর ২০১৬ সাল থেকেই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে আছেন। তার সঙ্গে বিসিবি চুক্তি বাড়িয়ে নিয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে। যদি শ্রীনিবাস নিজে থেকে কোথাও না চলে যান তাহলে তাকে বিসিবির রাখার ইচ্ছাই আছে। ভেট্টরির সঙ্গে পেস বোলিং কোচ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকান চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্টকে নিয়োগ দিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত নিজ দেশের খেলোয়াড়দের কোচিং করানোর সুযোগ পেয়ে চলে যান। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনকে এ বছর জানুয়ারিতে নিয়োগ দেয় বিসিবি। দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। গিবসনকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাবে বিসিবি। তাতে করে দুটি টি২০ বিশ্বকাপ পাওয়া যাচ্ছে। গিবসনের সঙ্গে তাই চুক্তি বাড়ানোর বিষয়টি আসছে না। এ নিয়ে ভাবনাও নেই বিসিবির। করোনাভাইরাসের কারণে মার্চের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস আসলে কোন খেলাই হচ্ছে না। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করবে বাংলাদেশ। ছয়মাস খেলাই হলো না। করোনাভাইরাসের কারণে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ হয়নি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি টেস্ট ও একটি ওয়ানডে হয়নি। আয়ারল্যান্ড সফরে যাওয়া হয়নি। এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপও খেলা হয়নি। এ বছর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজই হয়তো শেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হতে পারে। আগামী বছর থেকে আবার পুরোদমে ক্রিকেট খেলা শুরু হতে পারে। আগামী বছর আগস্টের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে খেলা আছে বাংলাদেশের। করোনাভাইরাসের কারণে ডোমিঙ্গো ও ভেট্টরি থেকে বিশেষ কিছু আদায় করা যায়নি। গত বছর আগস্ট থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ডোমিঙ্গোর প্রথম এ্যাসাইনমেন্টেই আফগানিস্তানের কাছে একটি টেস্টে হেরেছে। আফগানিস্তান, জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে সিরিজে যুগ্মচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে একটি টি২০ জিতেছে। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটি ম্যাচেই হেরেছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজ হেরেছে। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সর্বশেষ টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজে জিতেছে। সব ফরমেট মিলিয়ে ১৯টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তিনটি ওয়ানডের সবকটি জিতেছে। ১৩টি টি২০ ম্যাচের ৬টি ম্যাচে জিতেছে। পাঁচ টেস্টের মধ্যে একটি মাত্র জিতেছে। দুটি টি২০ ম্যাচ বৃষ্টিতে হয়নি। কাউকে বিবেচনা করতে হলেও তো সময়ও দিতে হবে। তাতে করে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে বিশ্বকাপ পর্যন্ত রাখতে হলে ডোমিঙ্গো, ভেট্টরিদের চুক্তি বাড়াতেই হবে বিসিবিকে।
×