ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিকল্পনা ছাড়া কোন নির্মাণ চলবে না

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ২০ আগস্ট ২০২০

পরিকল্পনা ছাড়া কোন নির্মাণ চলবে না

মশিউর রহমান খান ॥ দেশের সকল প্রান্তে পরিকল্পনাবিহীন স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। স্বল্প জমি সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা ছাড়া সকল প্রকার অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ ও ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন থেকে গ্রামীণ অবকাঠামো পাকা সড়ক, ব্রিজ, কালভার্টসহ যে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির অনুমোদন লাগবে। গুরুত্ব বিবেচনা করতে প্রতিটি উপজেলা পরিষদে সকল প্রকার স্থাপনা নির্মাণের আগে যাচাই বাছাই করা হবে। স্থাপনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করেই অনুমোদন দেয়া হবে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যত্রতত্র ব্রিজ নির্মাণ বন্ধে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, যে কোন স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদনের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। পরিকল্পনা গ্রহণের আগে অবশ্যই উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটিতে আলোচনা করতে হবে। এরপর যোগ্যতা প্রমাণ সাপেক্ষে কার্যবিবরণীতে এসব স্থাপনা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যথায় তা বাস্তবায়ন করা হবে না। যত্রতত্র রাস্তা, ব্রিজ নির্মাণ করে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য কোনক্রমেই জমির অপব্যবহার এবং প্রকৃতি বিনষ্ট করে স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। মন্ত্রণালয়ের মতে, কেবল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণই মাঠ পর্যায়ের কোন স্থানে কোন জিনিস নির্মাণ করা প্রয়োজন তা বুঝেন। একইসঙ্গে জনগণের চাহিদা ও বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করেই যেন নতুন সকল স্থাপনা নির্মাণ করা যায় তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বর্তমানে দেশে মোট ৪৯২টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। এসব উপজেলায় কোন প্রকার পরিকল্পনা ছাড়াই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধিদের ইচ্ছানুযায়ী রাস্তা ঘাট, সেতু বা পাকা রাস্তা তৈরি করা হয়। আগে এ নিয়ে কোন প্রকার কমিটি না থাকায় সমন্বয়হীনতার ফলে অপরিকল্পিত নগর বা শহর এমনকি তৃণমূলে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠে। এর সুফল নাগরিকগণ সরাসরি না পাওয়ায় সরকার পরিকল্পনায় আনতে চায়। এরই অংশ হিসেবে অধিক সংখ্যক নাগরিকের উপকার হবে ও নাগরিক দুর্ভোগ তুলনামূলকভাবে কম হবে এমন বিবেচনায় সকল প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এতে সরকারী অর্থেরও সাশ্রয় হবে। সরকারের নির্দেশ বাস্তবায়নে প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি করা হবে। কমিটি যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে। এতে যত্রতত্র রাস্তা-ঘাট এবং ব্রিজ নির্মাণ বন্ধ হবে। ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার এবং পরিকল্পিত শহর ও গ্রাম গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে নদীর নাব্য ঠিক রাখা, নদীতে পানি প্রবাহ ঠিক রাখা, নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখা, কৃষি সেচ ও মৎস্য এবং পরিবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এর পরেও কোন সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি তা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত প্রদান করবে। নদীর নাব্য রক্ষার স্বার্থে বড় বড় নদীতে ন্যূনতম পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটারের মধ্যে কোন সেতু করা যাবে না। অতি দ্রুত এ সংশ্লিষ্ট একটি নীতিমালা করে তার খসড়া মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। একইসঙ্গে যে কোন নদীর ওপর বৃহৎ সেতু নির্মাণের জন্য হাইড্রোলজিক্যাল, মরফোলজিক্যাল ও নেভিগেশন সমীক্ষায় নদীর বৈশিষ্ট্য, অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে নাব্য বৃদ্ধি করে পানি সরবরাহ, মৎস্য চাষ এবং কৃষি সেচ ব্যবস্থা যেন অক্ষুণ্ন থাকে তার ওপর জোর দিতে হবে। এছাড়া ব্রিজ নির্মাণের সময় নদীর দুই পাশের খাল কোন অবস্থাতেই সঙ্কোচন করা যাবে না। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ যে সকল সংস্থা ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করছে তাদের সকলকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে নেভিগেশন, নদীর নাব্য, ড্রেজিং এবং নৌ চলাচল ব্যবস্থা ঠিক রেখে নির্মাণ করতে হবে। মূলত দেশে প্রতিটি নদীর যে বহুমাত্রিক সুবিধা আছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা স্বল্প জমি সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগাতে সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা ছাড়া সকল প্রকার অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করতে চাই। এরই অংশ হিসেবে ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার করে পরিকল্পিত শহর এবং গ্র্রাম গড়তে এখন থেকে উপজেলা বা তৃণমূল পর্যায়ে পাকা রাস্তা, ব্রিজ কালভার্টসহ যে কোন স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। কেবল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণই মাঠ পর্যায়ের কোন স্থানে কোন জিনিস নির্মাণ করা প্রয়োজন তা বুঝেন। একইসঙ্গে জনগণের চাহিদা ও বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করেই যেন নতুন সকল স্থাপনা নির্মাণ করা হয় সেজন্য গ্রামীণ সকল অবকাঠামো নির্মাণে উপজেলা পরিষদের পরামর্শে ও তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই করতে হবে। যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ করে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির ক্ষতি, জমির অপব্যবহার এবং প্রকৃতি বিনষ্ট করে স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। একইসঙ্গে প্রতিটি উপজেলা পরিষদে সকল প্রকার স্থাপনা নির্মাণের আগে যাচাই বাছাই ও এসব স্থাপনার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা নির্ধারণ করবে সমন্বয় কমিটি। কমিটিতে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি, নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা থাকবেন। এ কমিটির অনুমতিতেই কেবল সকল প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে। এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, যত্রতত্র ব্রিজ নির্মাণ বন্ধে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ সহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া দেশের ভূ-প্রকৃতির ক্ষতি রোধে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন কোন সেতু নির্মাণ না করতে নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসন অনুযায়ী যে কোন নদীর ওপর বৃহৎ সেতু নির্মাণের জন্য হাইড্রোলজিক্যাল, মরফোলজিক্যাল ও নেভিগেশন সমীক্ষায় নদীর বৈশিষ্ট্য, অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে নাব্য বৃদ্ধি করে পানি সরবরাহ, মৎস্য চাষ এবং কৃষি সেচ ব্যবস্থা অক্ষুণœ যেন থাকে তার ওপর জোর দিতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
×