ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রংপুরে পশুর হাটে এখনও বিক্রি জমেনি

প্রকাশিত: ২১:৪২, ২৩ জুলাই ২০২০

রংপুরে পশুর হাটে এখনও বিক্রি জমেনি

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ২২ জুলাই ॥ ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় খামার ও বাসাবাড়িতে কোরবানিযোগ্য প্রায় ৯ লাখ পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে করোনা ও বন্যা দুর্যোগের কারণে বাজারে ক্রেতার সমাগম অত্যন্ত কম। ফলে ভাল দাম পাচ্ছে না খামারিরা। প্রত্যাশিত দাম পাওয়া নিয়ে বিভাগের দেড় লাখ খামারি সংশয়ে আছেন। অনেকেই কম দামে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত রংপুরের সবচেয়ে বড় হাট লালবাগ হাটেও তেমন বেচাকেনা শুরু হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি সংরক্ষণ এবং খামারিদের লোকসান ঠেকাতে অনলাইনে পশু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ। সেই সঙ্গে হাট-বাজারগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু বিক্রির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। অঞ্চল ভেদে পশু পরিবহনের সু-ব্যবস্থা হিসেবে প্রথমবারের মতো সড়কের পাশাপাশি রেলপথকেও বেছে নেয়া হয়েছে। করোনা ও বন্যার প্রভাব পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের হাটগুলোতে। আবার মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে ‘গরুর লাম্পিং স্কিন ডিজিজ’। সে কারণে গরু কেনায় তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। হাটে সাধারণ ক্রেতাদেরও তেমন ভিড় নেই। রংপুর কাউনিয়া উপজেলার একজন প্রভাষক ও সফল খামারি আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘তার খামারে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দামের ১৫টি গরু আছে। প্রতিটি গরুর পেছনে প্রতিদিন তার খরচ হচ্ছে কমপক্ষে ৫০০ টাকা। গেল বছর পশুখাদ্যের দাম কম থাকলেও এ বছর করোনা ও বন্যার কারণে খাদ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু কমেছে গরুর দাম। ক্রেতারা তার গরুর যে দাম দিতে চাচ্ছেন তাতে গরু কেনা ও লালন-পালনের খরচ উঠবে না। তিনি বলেন, মূলত করোনার কারণে মানুষ কোরবানির পশু কিনতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। তার ওপর বন্যার কারণে বানভাসি মানুষ তাদের গবাদি পশু বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে হাটে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, এ পরিস্থিতিতে ভারতীয় গরু আমদানি বা চোরাই পথে ঢুকলে এদেশের খামারিদের পথে বসতে হবে। তাই, ভারতীয় গরু প্রবেশ রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। রংপুর নগরীর ইসলামপুরের বাসিন্দা মাওলানা জাকির হোসেন বলেন, তিনি প্রতিবছরই ১০/১২টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেন। তাতে খরচ বাদ দিয়েও তার বছরে লক্ষাধিক টাকা লাভ হয়। কিন্তু, এবারে তিনি লোকসানের আশঙ্কা করছেন। তিনি বলেন, যে গরুটি গত বছর ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সে রকম একটি গরু এ বছর ৩৫ হাজারের বেশি দাম বলছে না। গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের অনেক মালিক এবারের ঈদে পশুর ন্যায্যমূল্য পাবেন না জেনে অনেক আগেই কম দামে গরু বিক্রি করেছেন। বুক ভরা আশা নিয়ে তার মতো অনেকেই গরু লালন-পালন করলেও এ বছরও শঙ্কায় আছেন। রংপুর ডেইরি ফার্মাস এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন একেকটা গরুর পেছনে খাবারসহ অন্যান্য খরচ হয় চারশ’ থেকে এক হাজার টাকা। এই অবস্থায় যদি কোরবানিতে গরু বিক্রি করতে না পারি বা লোকসানে বিক্রি করতে হয়, তাহলে খামার টিকে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এদিকে পশুরহাট জমে না উঠার জন্য অবিরাম বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ার পাশাপাশি করোনা ভীতিতে দুষছেন হাট ইজারাদার ও বিক্রেতারা। তারা বলছেন, ঈদের এক সপ্তাহ থেকে বিকিকিনি বাড়বে। তখন হাটে হাটে মানুষের উপচেপড়া ভিড়ও থাকবে। রংপুর নগরীর লালবাগ হাটের ইজারাদার আব্দুস সালাম জানান, তারা এই মাসের শুরুতেই কোরবানি ঈদকে ঘিরে হাট প্রস্তুত করে রেখেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা আসছেন। কিছুটা জমে উঠেছে হাট। তবে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এ পরিস্থিতিতে অনলাইন মার্কেটিংকে গুরুত্ব দিচ্ছে প্র[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে তারা রংপুর জেলায় কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য নয়টি অনলাইন পশুরহাট চালু করেছেন। রংপুরের প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডাঃ হাবিবুল হক জানান, চলতি বন্যা ও লাম্পিং ডিজিজের প্রভাব পড়বে না কোরবানির পশুতে। বিভাগের আট জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা সাড়ে ছয় লাখ হলেও বিভাগের এক লাখ ৫৫ হাজার ৮০২ জন খামারির উৎপাদিত কোরবানিযোগ্য পশু মজুদ আছে ৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৮১টি। এর মধ্যে ষাঁড়, বলদ, গাভী, মহিষ চার লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৪টি, ছাগল, ভেড়াসহ অন্য দুই লাখ ৭১ হাজার ২৩৩টি এবং গৃহপালিত পশু আছে এক লাখেরও বেশি। তাই স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে পশু যাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এজন্য সড়ক পথের পাশাপাশি নতুন সংযোজন হিসেবে রেলপথকেও বেছে নেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে অনলাইনে সহজে পশু কেনার সুব্যবস্থাও করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে গোটা বিভাগে প্রায় ৪০০ কোরবানির পশুর হাটে কেনাবেচার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম জানান, ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে নিরাপদে পশু কেনাবেচা করতে পারেন সেজন্য সব ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিটি পশুর হাটে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধাসহ জালটাকা শনাক্তকরণ মেশিন বসানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর রয়েছে। পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, দেশীয় শিল্প রক্ষায় ভারতীয় গরুর প্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশও শক্ত অবস্থানে রয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে নিরাপদে পশু পরিবহনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নরসিংদীতে শঙ্কায় খামারিরা স্টাফ রিপোর্টার নরসিংদী থেকে জানান, কোরবানি সামনে রেখে নরসিংদীতে বিক্রির জন্য ৫০ হাজারের বেশি পশু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। ভাল দামের আশায় নিজেদের ও ব্যাংকের ঋণে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করে পশু বিক্রির অপেক্ষায় আছেন তারা। খামারে খামারে এখন চলছে পশু পরিচর্যার ব্যস্ততা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ না কমায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে খামারিদের। মহামারী করোনার কারণে ন্যায্য দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা। খামারিরা বলছেন, ঈদের আগে খামারগুলো পাইকারদের ভিড়ে মুখরিত থাকলেও এবার তাদের আনাগোনা অনেক কম। এছাড়া পশু বাজারে নিতে পারবেন কিনা, বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা বা সঠিক দাম পাবেন কিনা এসব নিয়েও আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন খামারিরা। করোনাকালে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জেলায় পশু অধিদফতর ‘অনলাইন পশুর হাট’ বিকিকিনির ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন জানান, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আমরা বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। এবার জেলা প্রশাসন যে কাজটি করেছে সেটি হলো, আমাদের পশুর হাটের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছি। গতবছর অস্থায়ী পশুর হাট ছিল ৬২টি এবার করেছি ২১টি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৬ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা অনলাইনের মাধ্যমে বেচাকেনার জন্য একটি ওয়েবসাইট ও একটি এ্যাপস ডেভেলপ করেছি। মাগুরায় পশুর হাটে নজর কাড়বে ‘কালো পাহাড়’ নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, নাম ‘কালো পাহাড়’। যার পুরো শরীর কুচকুচে কালো, পায়ের নিচের দিকটা কিছুটা সাদা-কালোর মিশ্রণ। যেমন উঁচু , তেমনই দেখতে। যে কেউ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে। এবারের কোরবানির ঈদে পশুটি বিক্রি করা হবে। প্রায় ২৮-৩০ মণ ওজনের এই ‘কালো পাহাড়’ ষাঁড়টির দাম চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এখন কালোপাহাড়কে দেখতে এলাকার মানুষসহ বিভিন্ন স্থানের উৎসুক জনতা ভিড় করছে জাফর শেখের বাড়িতে। কোরবানি যতই এগিয়ে আসছে ততই কালো পাহাড়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে চারদিক । মাগুরা সদরের দেড়ুয়া গ্রামের আবু জাফর শেখের যতেœ লালিত এই ষাঁড়টি জেলার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। দেহের গঠন ও স্বাস্থ্য সম্মতভাবে নিজ বাড়িতে জাফর শেখ প্রায় ২ বছর ধরে লালন-পালন করছেন ষাঁড়টি। ইতোমধ্যে তার পোষা এ ষাঁড়টির দাম উঠেছে ৫-৬ লাখ টাকা। কিন্তু মালিক জাফর শেখ ষাঁড়টি এ দামে ছাড়তে নারাজ। তার দাবি, এ দামে বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা উল্টো লোকসান গুনতে হবে। তাই একটু ভাল দামের আশায় তিনি দিন গুনছেন । ষাঁড়ের মালিক জাফর শেখ জানান, তিনি ২০ বছর ধরে গরু পালন করছেন। নিজ বাড়িতেই রয়েছে তার খামার। তিনি পেশায় একজন কৃষক। জমিতে ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি তিনি এ ষাঁড়টি জন্মের পর থেকে বাড়িতেই নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করে আসছেন। আদর যতœ দিয়ে বড় করেছেন কালো পাহাড়কে। সময় মতো তিন বেলা খাবার (ভুসি, ভুট্টার আটা, ধানের গুঁড়ো, ছোলা, গমের ভুসি, খুদ, নেপিয়ার ঘাস) সঠিক মতো খাওয়াচ্ছেন। প্রতিদিন তার এ ষাঁড় বাবদ এক হাজার টাকা খরচ হয়। যতেœর কোন ত্রুটিই তিনি করেননি। কালো পাহাড় এ ষাঁড়টি একদম গরম সইতে পারে না। তাই ২৪ ঘণ্টায় ফ্যান চালানো থাকে। আর দিনে দুবার গোসল করানো হয়। তিনি আরও জানান, নিজের বুদ্ধি, জ্ঞান ও মেধা খাটিয়ে পরিশ্রম করে পশু লালন-পালন করেন তিনি। নিজ পরিবারের সন্তানদের মতো করে গড়ে তুলেছেন পশুদের। কালো পাহাড়কে নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জাফর শেখ। কেননা করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বড় গরু কেনার মতো সচরাচর ক্রেতা ও পাইকার মিলছে না। অন্যদিকে, চলতি হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির ঝুঁকি থাকার কারণে তিনি গরুটি নিয়ে হাটে যেতে নারাজ। বাড়িতে ভাল খরিদদার পেলে বিক্রি করবেন তিনি ষাঁড়টি।
×