ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্যা পরিস্থিতি জুলাইয়ের শেষ নাগাদ অব্যাহত থাকবে

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ১৬ জুলাই ২০২০

বন্যা পরিস্থিতি জুলাইয়ের শেষ নাগাদ অব্যাহত থাকবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি জুলাইয়ের শেষ নাগাদ অব্যাহত থাকবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে যমুনা এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বেড়ে ২০ জুলাই থেকে স্থিতিশীল হয়ে পড়বে। এরপর আবার বেড়ে ২৫ জুলাই নাগাদ তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। ফলে এই সময়ে উত্তরের বিভিন্ন জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটবে। তা জুলাইয়ে শেষ নাগাদ অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা জানায়, দেশের মধ্যাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৫ দিন পর্যন্ত অবনতি ঘটবে। টানা ১০ দিন এই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এই সময়ে মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী এবং শরীয়তপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তবে এই সময়ে ঢাকার চার নদীর পানি বেড়ে যাবে। ঢাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও চার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে। এদিকে পাহাড়ী ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে দেশের প্রধান নদী পদ্মা, যমুনাসহ ১৩টি নদীর পানি ২১টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে যমুনা নদীর ৬টি পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদী ১০২ সেন্টিমিটার এবং ধরলা ও ঘাঘট নদী ৯০ বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১৫ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় নদীসমূহের পানি হ্রাস পেতে শুরু করেছে। তারা জানায়, দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বন্যার পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তবে এই সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টায় গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, নাটোর, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদী সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। তারা জানায়, দেশের পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৬টির, হ্রাস পেয়েছে ৪১টির ও বিপদসীমার ওপরে ২১টির। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে রাজশাহীতে ৭৮ মিলিমিটার। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে আগামী ১০ দিনের পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি ২-০ জুলাই থেকে স্থিতিশীল হতে পারে। এই দুই নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে আগামী ৭ দিন পর্যন্ত কুগ্রিাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর এবং টাঙ্গাইল জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। কুড়িগ্রাম ॥ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বেড়েছে বানভাসীদের দুর্ভোগ। ব্রক্ষপুত্র নদের পানিতে তলিয়ে গেছে রাজিবপুর উপজেলা শহর। উপজেলা চত্বরে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। রৌমারী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাছাকাছি ব্রক্ষপুত্র নদ চলে আসায় বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। গাইবান্ধা ॥ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত এবং ভারি বর্ষণের কারণে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষারপাড়া সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চুঁইয়ে পানি অপর পাড়ে যাচ্ছে। এতে বাঁধটি চরম হুমকির মুখে পড়েছে। নওগাঁ ॥ টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে হু-হু করে বাড়ছে আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর পানি। আত্রাই নদীর পানি উপজেলার জোতবাজার পয়েন্টে এখন বিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নাটোর ॥ সিংড়ায় আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বুধবার সকালে পানির স্রোতে উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের শাহবাজপুর-তাজপুর-তেমুখ নওগাঁ সড়কের তিনটি স্থানে ভেঙ্গে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শেরকোল ও তাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হু হু করে পানি ঢুকে পড়ছে। তীব্র বেগে পানি প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় হুমকির মুখে রয়েছে স্থানীয়রা। মানিকগঞ্জ ॥ ২য় দফা বন্যায় মানিকগঞ্জে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সকালে আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ঘণ্টায় ৪৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। জেলার পদ্মা-যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী দৌলতপুর, শিবালয়, হরিরামপুর, ঘিওর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এলাকার ধলেশ্বরী, ইছামতি ছাড়াও শাখা নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা। পানি বৃদ্ধির কারণে ¯্রােত বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল ॥ উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢল আর টানা বৃষ্টিতে গত কয়েকদিন যাবত অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে যমুনার পানি। এতে সৃষ্ট বন্যায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের চরাঞ্চলের পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী ও নিকরাই ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক। উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। অধিকাংশ বাড়িতে বসত ঘরে পানি উঠায় বাঁশের মাচা করে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ গোবাদিপশু সরিয়ে নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিলেও অধিকাংশই বাড়ির গবাদিপশু পানিতেই রয়ে গেছে।
×