ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই কাজ শেষ হবে

বিএনপির নিষ্ক্রিয় নেতাদের কালো তালিকা

প্রকাশিত: ২৩:২০, ৯ জুলাই ২০২০

বিএনপির নিষ্ক্রিয় নেতাদের কালো তালিকা

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপির নিষ্ক্রিয় নেতাদের নাম কালো তালিকায় যাচ্ছে। যারা এখন কোনভাবে দলীয় কর্মকা-ে সক্রিয় নেই হাইকমান্ডের নির্দেশে এমন নেতাদের নাম লিপিবদ্ধ করে একটি তালিকা প্রণয়ন করছেন ক’জন নেতা। এই তালিকাকে কালো তালিকা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। শীঘ্রই এই তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ করে তা হাইকমান্ডের কাছে দেয়া হবে। সূত্র জানায়, সরকারী দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল করোনা পরিস্থিতি শুরুর পরও বিভিন্নভাবে দলীয় কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে। কিন্তু বিএনপির মাত্র ক’জন নেতা ছাড়া সিংহভাগ নেতাই ঘরে বসে নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও দলীয় কর্মকা-ে একেবারে নিষ্ক্রিয় রয়েছে। তাদের এ বিষয়টিকে ভালভাবে নিতে পারেনি দলীয় হাইকমান্ড। তাই তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায় হাইকমান্ড। আর এ জন্যই নিষ্ক্রিয় নেতাদের নিয়ে একটি কালো তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা হাতে পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দেশব্যাপী সীমিত পরিসরে হলেও দলীয় কর্মসূচী পালনের পাশাপাশি অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে হাজির হয়েছে। কিন্তু বিএনপির মাত্র ক’জন নেতা ছাড়া আর কোন নেতাকে সেভাবে এগিয়ে যেতে দেখা যায়নি। প্রথমদিকে তৃণমূল পর্যায়ের কিছু বিএনপি নেতা অসহায়দের মাঝে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেও কেন্দ্রীয় নেতারা নিষ্ক্রিয় থাকায় এক পর্যায়ে তৃণমূল নেতারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এদিকে করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর বিএনপি ব্যাপকভাবে অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে হাজির না হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। সরকারী দলের পাশাপাশি বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবীরাও এ নিয়ে সমালোচনা শুরু করে। এর ফলে দলটি বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ হয় দলীয় হাইকমান্ড। আর এ কারণেই তারা নিষ্ক্রিয় নেতাদের নাম কালো তালিকায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিএনপির এ ভূমিকা সম্পর্কে সম্প্রতি এ দল সমর্থক বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতাদের এভাবে ঘরে বসে থাকা ঠিক হয়নি। তাদের অসহায় মানুষের কাছে গিয়ে দাঁড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু কয়েকজন নেতা ছাড়া অন্য কেউ এ কাজটি করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিএনপি নেতা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে বসে বসে ব্যক্তিগত কাজ করলেও দলীয় কর্মকা-ে নিষ্ক্রিয় থাকেন অনেক নেতা। এতে দলীয় হাইকমা- ক্ষুব্ধ হয়। আর এ কারণেই নিষ্ক্রিয় নেতাদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তবে এ তালিকা প্রকাশ করা হবে কি না জানিনা। এদিকে ১৬ জুলাই থেকে সীমিত আকারে দলের সাংগঠনিক কর্মকা- শুরু করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। সম্প্রতি নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু এ ঘোষণা শোনার পরও নিষ্ক্রিয় নেতারা দলীয় কর্মকা-ে সক্রিয় হওয়ার কোন গরজ দেখাচ্ছেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কোন কোন নেতা মাঝেমাঝে বাধ্য হয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অংশ নিলেও তারপর আবার চুপ করে বসে থাকে। উল্লেখ্য, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে প্রথম দফায় ২২ মার্চ বিএনপির পক্ষ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিতের কথা জানানো হয়। তবে এ সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও দলের ক’জন নেতা অসহায়দের মাঝে ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মকা-ে সক্রিয় ছিলেন। দ্বিতীয় দফায় ২৫ মে পর্যন্ত এবং তৃতীয় দফায় ২৫ জুন পর্যন্ত বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ চতুর্থ দফায় ২৫ জুনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম ১৫ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। একই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ১৬ জুলাই থেকে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরুর কথা জানানো হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালু করবে বলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষিতে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম ও সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি এবং সামাজিক দূরত্ব বিধি অনুসরণ করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম ১৬ জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে সীমিত আকারে শুরু করা হবে।
×