ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নীলফামারীতে পানি কমলেও ভাঙ্গন আতঙ্কে তিস্তা পাড়ের মানুষ

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ৫ জুলাই ২০২০

নীলফামারীতে পানি কমলেও ভাঙ্গন আতঙ্কে তিস্তা পাড়ের মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ গতকাল শনিবার সকালে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ রবিবার সকালে বিপদসীমার নিচে নেমে এসেছে। ফলে তিস্তা নদীর উজান ও ভাটি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। তবে পানি কমলেও বেড়েছে ভাঙ্গন। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি সংকটের কবলে পড়েছে তিস্তাপাড়ের বন্যা ও ভাঙ্গনকবলিত এলাকার পরিবারগুলো। এলাকায় নলকুপ ও স্যানিটেশন ল্যাট্রিন স্থাপনের দাবি করা হয়েছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র সুত্র জানায় আজ রবিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৫২.৩৫ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি কমে বর্তমানে ৫২.৩২ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২.৬০ মিটার। গতকাল শনিবার উক্ত পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। যা এ বছরের এ পর্যন্ত সর্বস্ব ছিল। এতে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছিল। স্থানীয়রা জানান, ধেয়ে আসা উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়া ও দুই কুলের ভাঙ্গনে নদী প্রশস্ত হয়ে গেছে। ফলে উজানের ঢল এলে নদী ফুঁলে ফেপে উঠে লোকালয়েও প্রবেশ করে।উজানের সামান্য ঢেউয়ে তিস্তার দুই কুল উপচে বন্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ডান তীরে শক্তিশালী বাঁধ থাকায় বাম তীরে আঘাতটা কয়েকগুন বেশি হয়। ফলে বাম তীরের কয়েক হাজার পরিবার দুর্ভোগে পড়ে। উজানে পানি প্রবাহ কমে গেলে এ অঞ্চলে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করে। তলদেশ ভরাট হওয়ায় গতিপথ না পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে তিস্তা পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন তিস্তার তীরবর্তী মানুষ। জুন মাসের গত সপ্তাহে টানা ৪ দিন বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তার পানি। ফলে ডিমলা এলাকার ৭৫ পরিবার ভাঙ্গনের মুখে হারায় বসতভিটা।পানি কমলেই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে তিস্তাপাড়ে। তিস্তা পাড়ের ছাতুনামার আমিনুর রহমার বললেন গত ৭ বছর আগে তিস্তা ব্যারাজের উজানে ও ভাটির দিকে মাত্র এক হাজার মিটার এলাকা পলি অপসারন করা হয়েছিল। কিন্তু নদী খনন করা হয়নি। তিস্তা নদী খনন না করায় প্রতিবছরের বন্যায় পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়েছে। ফলে পানি প্রবাহের পথ না পেয়ে উভয় তীরে বন্যার সৃষ্টি হয়ে ফসল ও সম্পদের ক্ষতিসাধন হচ্ছে। তিনি বলেন নদীতো এখন নিয়ন্ত্রনে নেই। চারিদিকে মাটি নরম হয়ে গেছে। বসতঘর ঝুঁকিতে পড়েছে। তাই অনেকে ঘরবাড়ি শুকনা স্থানে সরিয়ে ফেলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ল্যাট্রিনের প্রয়োজন। কিন্তু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কোন লোক এলাকায় আসেনা দেখেনা। জরুরীভাবে বন্যা ও ভাঙ্গন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকুপ স্থাপন জরুরী। তিস্তাপাড়ের মানুষজন দাবি করে জানান, বন্যা আর খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল ও পরিবার পরিজনকে বাঁচাতে তিস্তা নদী খনন করে উভয় পাড়ে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। খনন করে বাঁধ নির্মাণ হলে ভাঙন, বন্যা আর খরা থেকে ফসল, সম্পদ ও জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি তিস্তার পানি ব্যবহার করে কৃষির আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢল নিয়ন্ত্রন করতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ টি জলকপাট আমরা ২৪ ঘন্টা খুলে রাখছি।
×