ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

কিডস পেইন্ট করোনায় নির্বাচিত বাংলাদেশের শিশুর চিত্রকর্ম

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১ জুলাই ২০২০

কিডস পেইন্ট করোনায় নির্বাচিত বাংলাদেশের শিশুর চিত্রকর্ম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবরুদ্ধ সময়ে বিষাদের অধ্যায় মেলে ধরা এক ক্যানভাস। শূন্যে ভাসছে ভয়ঙ্কররূপী তিনটি ভাইরাস। লালরঙা ভাইরাসগুলো হিংস্র অভিব্যক্তিতে আক্রমণের জন্য মুখিয়ে আছে। সংক্রমণ থেকে বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা করছে এক নারী। তার শরীরে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশসহ নানা দেশের পতাকায় তৈরি পোশাক। মুখে চাপিয়েছে মাস্ক। সবুজ টুপিতে ঢেকেছে কেশ। দুই হাত ঢেকে আছে দস্তানায়। একহাতে বুকে চেপে ধেরেছে বিশ্ব মানচিত্রকে। অপর হাতে মুছছে চোখের জল। ‘লেট আস ফাইট এগেইনস্ট কোভিড-১৯ টুগেদার’ শিরোনামের ছবিটি এঁকেছেন শিশুশিল্পী জায়না আলম পিয়া। জলরংয়ের সঙ্গে এ্যাক্রেলিক মাধ্যমের সংমিশ্রণে চিত্রিত চিত্রকর্মটি নির্বাচিত হয়েছে একটি অনলাইন আন্তর্জাতিক চিত্রকর্ম প্রতিযোগিতায়। ‘হ্যাশট্যাগ কিডস পেইন্ট করোনা’ শীর্ষক প্রতিযোগিতাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে জার্মানির সাপ্তাহিক সাময়িকী দাই জিট এবং নরওয়ের অসলোর দ্য ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম অব চিলড্রেন্স আর্ট। সারাবিশ্বের শিশুশিল্পীদের কাছ থেকে এই প্রতিযোগিতার জন্য অনলাইনে চিত্রকর্ম আহ্বান করা হয়। এতে জমা পড়ে ৬৪টি দেশের শিশুশিল্পীদের আঁকা সাড়ে পাঁচ হাজার চিত্রকর্ম। সেগুলোর মধ্য থেকে নির্বাচকরা ১০০টি চিত্রকর্মকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করেন। আর সেই চূড়ান্ত মনোনয়নে বাংলাদেশের একমাত্র শিশুশিল্পী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে পিয়ার আঁকা ছবিটি। মে মাসের শেষের দিকে মেইলের মাধ্যমে পিয়া ছবিটি জমা দেয়। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আয়োজকদের পক্ষ থেকে তার চিত্রকর্মটি মনোনীত হওয়ার খবর আসে। এ বিষয়ে কথা হয় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী পিয়ার সঙ্গে। আলাপচারিতায় এই খুদে চিত্রকর জনকণ্ঠকে বলে, মে মাসে অনলাইনের মাধ্যমে এই আন্তর্জাতিক শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার খোঁজ পাই। এরপর করোনাকে উপজীব্য করে ছবি আঁকা শুরু করি। মে মাসের শেষ সপ্তাহে মেইলের মাধ্যমে চিত্রকর্মটি পাঠিয়ে দেই। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ছবিটি প্রতিযোগিতায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার কথা জানতে পারি। খবরটি জানার পর দারুণ খুশি হয়েছি। ভিন্নরকম ভাললাগার একটি অনুভূতি কাজ করেছে। কারণ আমি নিজেও আশা করিনি যে ছবিটি চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবে। এ নিয়ে মনের মধ্যে সংশয় ছিল। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী সেপ্টেম্বরে অসলোর দ্য ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম অব চিলড্রেন্স আর্টে নির্বাচিত চিত্রকর্মগুলো নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। বনানী রংধনু কচি-কাঁচার মেলার চারুশিক্ষার্থী পিয়া। এই খুদে শিল্পীর বিষয়ে আর্ট স্কুলটির চারুশিক্ষক আঞ্জুমান আর রুমা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের এই শিক্ষার্থীর এমন কৃতিত্বে শিক্ষক হিসেবে আমি গর্বিত। তার আঁকার হাতটি খুবই ভাল। নিজস্ব একটা স্টাইল আছে। পোর্ট্রেট চিত্রণে রয়েছে বিশেষ দক্ষতা। পাশাপাশি চিত্রকর্ম সৃজনের বিষয়ে রয়েছে স্বতন্ত্র ভাবনা। ছবি এঁকে এর আগেও দেশের বাইরে সুনাম কুড়িয়েছে পিয়া। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও আলাস্কার যৌথ উদ্যোগে পিকাসো আর্ট কনটেস্টে জলরঙের ছবি এঁকে পুরস্কার জিতে নেয় পিয়া। প্রিন্সেস ডায়নার পোর্ট্রেট এঁকে অর্জন করে এই আন্তর্জাতিক সাফল্য। এছাড়া গত বছর হল্যান্ড ও জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু : এ রিমেমব্রেন্স’ শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে পিয়ার আঁকা ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি’। এই প্রদর্শনীটিতে একমাত্র পিয়াই ছিল কিশোর শিল্পী। তার আঁকা ছবিটি দিয়ে প্রদর্শনীর ব্রুশিউরের প্রচ্ছদ করা হয়েছিল।
×