ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে পড়াশোনার হালচাল

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২৮ জুন ২০২০

করোনাকালে পড়াশোনার হালচাল

করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) কার্যত সবকিছু অচল করে দিয়েছে। চলতি বছরের মার্চের শেষ দিকে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা মহামারীতে শিক্ষার্থীরা কি পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে? কেমন কাটছে এই সময়? এসব নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন- মোহাম্মদ অংকন। পড়ছি কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছি না করোনার মধ্যে পড়াশোনা কিছুটা চলছে; কিন্তু মানসিকভাবে স্বস্তি পাচ্ছি না। কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করছে। চিরচেনা সবুজ ক্যাম্পাস ছাড়া কি পড়াশোনা করা যায়? অনলাইনে পড়াশোনা চলছে; কিন্তু সেই পড়াশোনায় পরিপূর্ণতা পাওয়া যাচ্ছে না। আমার দরিদ্র ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সহপাঠীদের কথা মনে পড়লে বেশি পীড়া দিচ্ছে। ওরা অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত হচ্ছে। ওদেরকে খুব মিস করছি। আর যেহেতু এই সময়টাতে একটু বেশি সময় পাচ্ছি। তাই পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি ইতিহাস ও রাজনীতির বইগুলো পড়া হচ্ছে। অনেক অজানাকে জানার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। হয়ত এমন অবসর আর কোন দিন পাব না। সময়টা মোটেও উপভোগ করতে পারছি না। শেখ রিফাদ মাহমুদ কম্পিউটার টেকনোলজি বিভাগ, বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বরগুনা। অনলাইনে গ্রুপ স্ট্যাডি করোনার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় এই সময়গুলো কাজে লাগাতে ঘরে বসে নিজের ইচ্ছা শক্তি দিয়ে পড়াশোনা করছি। ক্লাস না থাকায় সময় বেশি পাচ্ছি, তাই পাঠ্যবই ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের বই পড়ছি। অনলাইনে গ্রুপ খুলে ‘গ্রুপ স্টাডি’ করছি। ইংলিশ স্পিকিং শিখছি, নিজেদের মধ্যে ভুলগুলো শুধরে নেয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া ইউটিউব থেকে চাকরির প্রস্তুতি বিষয়ক ভিডিও দেখছি। বাংলা, ইংরেজী, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান শিখছি। নিজে কতটুকু দক্ষ হলাম তা যাচাইয়ে ‘সপয়ংঃঁফু.নফ’, ‘ংঃঁফুঢ়ৎবংং.ড়ৎম/লড়নঃবংঃনফ.পড়স’ এ রকম কয়েকটি ওয়েবসাইটে পরীক্ষা দিচ্ছি। ভুলগুলো নোট করে আবার পড়ছি। প্রবাদে আছে, ‘সময় ও নদীর ¯্রােত কারও জন্য অপেক্ষা করে না’। তাই নিজেকে সচেতন হয়ে এই সময়কে আমি কাজে লাগাচ্ছি। করোনাকাল কেটে গেলে আমার ওপর পড়াশোনার চাপ একটু হলেও কম থাকবে। জে আক্তার উদ্ভদ বিজ্ঞান বিভাগ, কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ, কুড়িগ্রাম অন্যান্য বইও পড়ছি করোনার এই সময়ে চারদিকে পিনপতন নীরবতা, ধেঁয়ে আসছে আত্মীয়-স্বজনদের মৃত্যুর খবর। এরই মধ্যে চলছে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা। মন না টানলেও পিছিয়ে না পড়তেই রুটিন মেনে যোগ দিতে হচ্ছে ভার্চুয়াল স্টাডিজে। তবে সমস্যাতে পড়ছি অনেক। অনলাইন ক্লাস চলাকালীন ইন্টারনেটের স্পিড কম পাচ্ছি, হঠাৎ বৈদুত্যিক গোলযোগ দেখা দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমরা অপ্রস্তুত হয়ে যুদ্ধে নেমেছি। তারপরও শিক্ষকদের আদেশে নিজেকে পড়াশোনামুখী রাখছি। এ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নানাবিধ বই পড়ছি, অনলাইনে বিভিন্ন রিচার্স পেপার দেখছি। বিভিন্ন ভিডিও লেকচার দেখে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করছি। হয়ত এগুলো এ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে তেমন কাজে দেবে না; কিন্তু চাকরিপ্রাপ্তিতে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে। মোটের ওপর, এই লেখাপড়াটা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। তাই করোনার আপডেট এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে যতদূর সম্ভব পড়াশোনায় মন দিচ্ছি। আজম সিদ্দিক রুমি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), ঢাকা। সংবাদপত্র পড়ার আগ্রহ বেড়েছে মার্চ মাসে আমাদের সম্মান শেষ বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। পাঁচটা পরীক্ষা দেয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এই খবরটি আমার মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। হঠাৎ এক অজানা আতঙ্ক ভীষণ চিন্তায় ফেলে দেয়। আর কি ক্যাম্পাসে যাওয়া হবে না? হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরেছি, অনেক বই সঙ্গে এনেছি। কখনও পড়ছি, কখনও পড়ছি না। সবচেয়ে বড় কথা, নিজেকে এখন মানসিকভাবে দুর্বল মনে হচ্ছে। সংবাদপত্রের খবরগুলো বারবার ঘাঁটতে ইচ্ছে করে যে কোথাও এই ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠার কোন সমাধান পাওয়া যায় কিনা। বই পড়ার আগ্রহ কমার কারণে সংবাদপত্র পড়ায় মনোযোগ বেড়েছে। যদিও ঠিকমতো পত্রিকা আসছে না, পাতাও কম। সব মিলিয়ে পড়াশোনাটাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। যতক্ষণ পড়ছি, ততক্ষণ করোনাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করছি। আর অপেক্ষা করছি, কখন ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়। এমন নির্মম মৃত্যু যেন আর না ঘটে। মণিকা আফরোজ মণি ইংরেজী বিভাগ, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর ভর্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি করোনার সময়ে মনে হতে পারে পড়াশোনার অবস্থা অনেক ভাল। কিন্তু বাস্তবে আমার কাছে তেমন মনে হয় না। বাসায় বসে বসে সারা দিন এক দিকে যেমন বোর হচ্ছি, অন্যদিকে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছি প্রতিনিয়ত। পড়াশোনা একটা চলমান বিষয়। একটা চলমান ট্রেন যখন কোথাও এসে ধাক্কা খায়, তখন নতুন করে চলা শুরু করতে হলে প্রথমেই সে মন্থর গতিসম্পন্ন হয়ে উঠবে। এখন আমারও তাই অবস্থা। মন্থর গতিতে এসে পড়াশোনার পাঠ আটকে পড়েছে। আবার শুরু করব করব বলেও সেই আগের গতিতে ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। মোদ্দাকথা হলো, পড়াশোনার মধ্যেও করোনাতঙ্ক ঢুকে গিয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা না দিতে পারাটা, কবে এডমিশন টেস্ট দিব, বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হব এসব নিয়ে বেশ চিন্তা হচ্ছে। যেহেতু সামনে ভর্তিযুদ্ধ আসন্ন, তাই প্রতিদিন কিছু কিছু করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাবা-মাকে শিক্ষক বানিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। কেননা, প্রতিষ্ঠান খুললে আর সময় পাওয়া যাবে না। কলেজ খোলার প্রতীক্ষায় আছি। মিদহাদ আহমদ এইচএসসি পরীক্ষার্থী, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ, সিলেট
×