ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিজের ফিটনেস ধরে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টায় রত্না

প্রকাশিত: ০০:৪৪, ২৬ জুন ২০২০

নিজের ফিটনেস ধরে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টায় রত্না

রুমেল খান ॥ আচ্ছা, যেসব মেয়েদের নাম ‘রতœা’ হয়, তারাই কি খ্যাতিমান হন? চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা শাবানার আসল নাম ছিল আফরোজা সুলতানা রতœা। টানা পাঁচ দশক দাপটের সঙ্গে কাঁপিয়েছেন রুপালি পর্দা। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকেও রুপালি পর্দার মোহনীয়-লাস্যময়ী নায়িকা ছিলেন আরেক রতœা, যার পুরো নাম রতœা কবির সুইটি। এই দুই রতœাই এখন সিনেমা অঙ্গনে বিচরণ করছেন না। তবে তৃতীয় আরেকজন রতœা ঠিকই বিচরণ করছেন। তবে সেটা রুপালি পর্দায় নয়, সবুজ ঘাসের মাঠে। নায়িকা হিসেবে নয়, ফুটবলার হিসেবে। তিনি ইশরাত জাহান রতœা। গৃহিণী মা রোজিফা বেগমই তার দ্বিতীয় কন্যার ডাক নামটি ‘রতœা’ রেখেছিলেন। তবে রতœা কিন্তু কখনই নায়িকা হতে চাননি। চেয়েছিলেন পুলিশ হতে! কিন্তু তার ভাগ্যে লেখা ছিল ফুটবলার হবেন। রংপুরের পালিচড়ার মেয়ে রতœা। জন্ম ২০০১ সালের ৭ মে। রতœার কোন ভাই নেই। তারা চার বোন। তৃতীয় বোন নুসরাত জাহান বৃষ্টিও কৃতী ফুটবলার। সে মহিলা ফুটবল লীগে রত্মার ক্লাব এফসি উত্তরবঙ্গেই একসঙ্গে খেলে (রতœা ওই ক্লাবের অধিনায়ক)। এছাড়াও বৃষ্টি বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৫ নারী ফুটবল দলেরও খেলোয়াড়। করোনোর প্রাদুর্ভাবে মহিলা ফুটবল লীগ বন্ধ হয়ে গেলে গত ১৮ মার্চ বৃষ্টির সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে চলে যান রতœা। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হন না। বাজার করা ও অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে বের হন। তখন মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস পরেন। এছাড়া বাসায় দিনে কমপক্ষে ৭ বার সাবান দিয়ে ভালমতো হাত ধোন। এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পজিশনে খেলা রতœা এই করোনাকালে নিজের ফিটনেস ধরে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাতীয় দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের নিদের্শ মতো সপ্তাহে ছয়দিনই বাসার অদূরে একটি মাঠে গিয়ে বল নিয়ে অনুশীলন করছেন। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত অনুশীলন করেন, তখন আশপাশে কোন লোকজন থাকে না। সামাজিক দূরত্ব মেনে বোন বৃষ্টি এবং জাতীয় দলের সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্না এবং সুলতানার সঙ্গে রানিং, স্ট্রেচিং করেন। আর ‘কোর’ প্র্যাকটিসটা বাসাতেই সারেন। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত ফোনালাপে রতœা জানান, ‘কোচ ছোটন স্যার নিয়মিত আমার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। আমার ফিটনেস এখন বেশ ভাল পর্যায়ে আছে। তবে চার মাস ধরে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলতে না পেরে মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। ফুটবলকে মিস করছি ভীষণভাবে। আশা করি সেপ্টেম্বরের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং আবারও মহিলা ফুটবল লীগ মাঠে গড়াবে।’ নিজের এলাকার মানুষজন করোনা নিয়ে তেমন সচেতন নয় বলে হতাশ রতœা। ‘তবে মাঝে মাঝে পুলিশ রাউন্ডে এলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সবাই সচেতন হলে করোনা দ্রুত বিদায় হবে।’ করোনামুক্তির জন্য ভারতে ও বাংলাদেশে বিভিন্ন কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন ভারতে গোমূত্র পান ও তুলসী পাতা খাওয়া, বাংলাদেশে থানকুনি পাতা খাওয়া। এ প্রসঙ্গে ক্লাব পর্যায়ে ৭ ও জাতীয় দলে ১৪ নম্বর জার্সির মালকিন রতœার ভাষ্য, ‘আমি কোন পাতা খাইনি। কারণ জানি ওগুলো ধর্মীয় অন্ধবিশ^াস ও কুসংস্কার। আমি বরং গরম জল, রং চা, লেবু, লবঙ্গ, দারুচিনি ... এসব খাই।’ প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, ডাক্তাররা করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে অস্বীকার করেন। এ প্রসঙ্গে রত্মা বলেন, ‘ডাক্তারদের অনেক দায়িত্ব আছে। তাদের তো ভয় পেলে চলবে না। তবে অনেক ডাক্তার আছেন, যারা রোগীদের সেবা করতে গিয়ে নিজেরাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারাও গেছেন। তাদের প্রশংসা করতেই হবে।’ করোনার মারা গেলে অনেকেই রোগীর জানাজায় অংশ নেন না, লাশ দাফনেও বাধা দেন। ‘এটা ঠিক না। এটা দুঃজনক। করোনায় মারা যাওয়ার দুই ঘণ্টা পর লাশের শরীরে করোনা ভাইরাসও মারা যায়। কাজেই লাশ নির্ভয়েই দাফন করা যায়, জানাজাও পড়া যায়। এটা সবাইকে বুঝতে হবে।’ বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের মাধ্যমেই বাংলাদেশ করোনার বিস্তার ঘটেছে বলে মনে করেন রতœা। তাছাড়া অনেক কারণেও এটা ছড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি। স্কুলে পড়ার সময় ক্রিকেট, হাইজাম্প, ১০০ মিটার দৌড়, ভলিবল ও হ্যান্ডবল খেলতেন রতœা। ২০১৭ সালে তো জাতীয় পর্যায়ে হ্যান্ডবল খেলেছেন রংপুর জেলা দলের হয়ে। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় ২০১১ সালে ফুটবল খেলা শুরু রতœার। সেবার রংপুরের ১নং পালিচড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবলে অংশ নেন। সেবার তার স্কুল রানার্সআপ হয়। পরের বছরও অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। ২০১৩ সালে একটি ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় (প্ল্যান অনুর্ধ্ব-১৫ বালিকা চ্যাম্পিয়নশিপ) অংশ নিয়ে সেখানে বাছাই হন এবং ২০১৪ সালে ডাক পান অনুর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দলের ক্যাম্পে। এছাড়া খেলেছেন অনুর্ধ্ব-১৫, ১৮, ১৯ ও সিনিয়র জাতীয় দলেও। রতœার লক্ষ্য অধরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপার স্বাদ পাওয়া।
×