ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হতে পারলে ভাল লাগত

নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সাকিবের অনুশোচনা

প্রকাশিত: ০০:০৭, ২৫ জুন ২০২০

নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সাকিবের অনুশোচনা

মিথুন আশরাফ ॥ বিশ্বকাপে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার মতো ব্যাটিং-বোলিং করেছেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন সেরার পুরস্কারটি নিজের করে নিয়েছেন। সাকিব মনে করেন, বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হলে ভাল হতো। এমনকি ৫-১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা এড়ানো, তার দৃষ্টিতে সুপার ওভারের সেরা বোলার ও ব্যাটসম্যান বাছাই এবং বাংলাদেশ দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমের আবেগ নিয়েও ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করেন সাকিব। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সাকিব মোট আট ম্যাচে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন, ৮৬.৫৭ গড়ে ৬০৬ রান করেন। সাকিবের ব্যাটিং গড় টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বল হাতে সাকিব ৮ ম্যাচে ১১ উইকেট নেন। অর্থাৎ বল ও ব্যাট দুই বিভাগেই সাকিব দলের তিনটি জয়ে ভূমিকা রেখেছেন। প্রথম দুটি জয়ের একটিতে সেঞ্চুরি করেছেন, একটিতে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও সেঞ্চুরি করেছেন। মোট আট ম্যাচ খেলা সাকিব ৭ ইনিংসেই ন্যূনতম ৫০ রান অতিক্রম করেছেন। দুটি সেঞ্চুরিও করেছেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ৬০০ এর ওপর রান ও ১০টিরও বেশি উইকেট নিয়েছেন সাকিব। তারপরও তিনি টুর্নামেন্ট সেরা হতে পারেননি। বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হলে ভাল হতো, এ নিয়ে বলতে গিয়ে আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে যাওয়া সাকিব জানান, ‘এটা দারুণ ব্যাপার হতো যদি আমি বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করতাম। তবে আমি মনে করি উইলিয়ামসনের এটা প্রাপ্য ছিল। সে যেভাবে তার দলকে পরিচালনা করেছে তা দুর্দান্ত।’ ১০ ম্যাচে ৮২.৫৭ গড়ে ৫৭৮ রান করে রানার্সআপ হওয়া নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক উইলিয়ামসন টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন। সাকিব এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন। আসছে ২৯ অক্টোবর মুক্ত হবেন। তিনবার ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পেয়েও আইসিসির দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে কিছু না বলায় আইসিসির (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা) আইন অনুযায়ী সাকিবের অপরাধ হয়েছে। তাতে শাস্তিও হয়েছে। কিন্তু এই শাস্তি ৫ থেকে ১০ বছরের জন্যও হতে পারত। সাকিব তা এড়াতে পেরেছেন। কিভাবে? ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে হার্শা ভোগলেকে সাকিব তাই জানান। বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমি এটা একটু বেশিই হালকাভাবে (ক্যাজুয়ালি) নিয়েছিলাম। অবশ্যই আমি এই প্ল্যাটফর্মে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করতে চাই না। আমি যখন দুর্নীতি দমন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং বললাম, তারা সবকিছু জানে, সব প্রমাণ দিলাম, ভেতরে-বাইরের সবকিছু তারা খুঁটিনাটি সব জানে, সত্যি কথা বলতে, এই কারণেই মাত্র ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছি। নইলে ৫-১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারতাম।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমার মনে হয়, বোকার মতো ভুল করেছিলাম। কারণ যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আমি খেলেছি এবং দুর্নীতি দমন ধারা নিয়ে যতগুলো ক্লাস করেছি, আমার ওই ভুল করা উচিত হয়নি। সেটা নিয়ে আমি অনুতপ্ত। কারও উচিত নয় এসব হালকাভাবে নেয়া। ওই ধরনের মেসেজ বা কল কারও হালকাভাবে নেয়া উচিত নয় বা ওভাবেই ফেলে রাখা উচিত নয়। দুর্নীতি দমন কর্তাদের জানানো উচিত নিরাপদে থাকতে হলে। এই শিক্ষা আমি পেয়েছি, বড় শিক্ষা এটি।’ সাকিব এ নিয়ে আরও বলেন, ‘যেহেতু সবসময় বেশির ভাগ ব্যাপারই ঠিক করেছি, কখনও কখনও সেই বোধ পেয়ে বসতে পারে। মনে হতে পারে, “কী আর হবে, কিছুই হবে না। আমি তো ভুল কিছু করছি না..।’ কিন্তু কেতাবি হিসেবে তো ভুল হচ্ছে। হয় তো নৈতিকতার দিক থেকে ভুল হচ্ছে না, কিন্তু আইন বা নিয়মের দিক থেকে ভুল হচ্ছে। অনেক সময় এটি মনে থাকে না। এটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল। আমি কখনোই ভাবতে পারিনি, মাথায়ই আসেনি যে ভুল করতে পারি। পাত্তা দিতে চাইনি। সেই ভুলই আমি করেছি।’ সুপার ওভারের সেরা বোলার হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারিনকেই পছন্দ সাকিবের। আর ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল ও ভারতের হার্দিক পান্ডিয়াকে মনে ধরেছেন তার। তিনি বলেছেন, ‘নারিনকে আমি সুপার ওভারে বোলিংয়ের জন্য নেব। এরপর রাসেল এবং হার্দিক পান্ডিয়াকে ব্যাটসম্যান হিসেবে আমার পছন্দ। আর নাম্বার তিন হলো বেন স্টোকস।’ মুশফিক যে আবেগপ্রবণ তার উদাহরণ টানতে গিয়ে ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ৩ বলে ২ রান দরকার থাকার পরও ভারতের বিরুদ্ধে হারা ম্যাচটির স্মৃতি এবং মুশফিকের উদযাপন তুলে ধরেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘সে (মুশফিক) খুবই আবেগপ্রবণ (ইমোশনাল), এই শব্দটিই আমি ব্যবহার করতে চাই। খুবই আবেগময় এবং সবকিছুই সে নিজের দিকে নিয়ে নেয়। সবসময়ই মনে করে, তার কারণেই এটি হয়েছে বা ওরকম হয়েছে। সবময়ই নিজেকে মেলে ধরতে চায়। সবকিছু নিজেই করতে চায়। এ রকম ভেবে সে নিজের ওপর অনেক চাপ নিয়ে নেয়। তবে সে এ রকমই। আমাদের দলের সবচেয়ে কঠোর পরিশ্রমী ছেলে সে। এত পরিশ্রম করে বলেই ব্যর্থতা মেনে নিতে চায় না।
×