ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রামপাল-মংলার ৮৩ খাল খননে নানামুখী চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ১১:২৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

রামপাল-মংলার ৮৩ খাল খননে নানামুখী চ্যালেঞ্জ

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় সাত শ’ ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৩টি খাল ও নদী পুনর্খননেন মেগা প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার ক্ষেত্রে নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। অবৈধ দখল, খনন কাজে বাধা, পক্ষপাতিত্ব, সর্বক্ষণিক তদারকির অভাব, খননের মাটি রাখার (ডাম্পিং) স্থান সঙ্কট ইত্যাদি কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মোংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-রুটের স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষা করা হুমকির মুখে পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অগ্রাধিকার এ মেগা প্রকল্পটি ৭ শ’ ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। যা গত ২০১৮ সালের জুনে শুরু হয়েছে এবং ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাল ও নদীগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেন। এতে মংলা বন্দরের নৌ চলাচলে গতিশীলতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা নিরসন, পরিবেশের বিপর্যয় রোধ, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, মংলা-ঘষিয়াখালী নৌরুটের নাব্য বৃদ্ধি, দ্বিমুখী সর্বক্ষণিক নৌযান চলাচল বৃদ্ধি পাবে। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, দীর্ঘসময় খাল ও নদীগুলো সংস্কার না করা, অধিক হারে পলি জমে ভরাট হওয়া, খাল ও নদীতে অপরিকল্পিতভাবে শত শত ছোট ব্রিজ, কালভার্ট, কাঁচা-পাকা রাস্তা নির্মাণ করা, মাটি রাখার জায়গার অভাব, সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা নির্মাণ করা, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা নদী-খালের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে মাছ চাষ করা, ভরাট হয়ে যাওয়া খাল ও নদীগুলোতে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় অবৈধভাবে ব্যক্তি মালিকানা জমি রেকর্ড করা, ভূমিহীনদের জন্য খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান ও আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করা, খননের সময় মামলা-হামলা ও ভয়ভীতি প্রদান করে খননে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব কারণে খনন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, রামপাল-মংলায় ৮৩টি খাল ও নদীর মোট ৩শ’ ১০ কিলোমিটার খনন করে ১৪৭.৫ লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি নদীর ৫৭.৫৮৩ কিলোমিটার ও ৭৮টি খালের ২৫৫.৪১৭ কিলোমিটার খনন করা হবে। গত ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নৌবাহিনী খনন কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ৮৩টি নদী ও খালের মধ্য থেকে ৪৬টি তাদের অনুকূলে রেখে বাকি ৩৭টি অন্য ঠিকাদারদের মাধ্যমে খনন কার্যক্রম শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে ২৯টি খালের প্রায় ৮০ কিলোমিটার খনন করে ৩০ লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করে খালগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৪টি নদী ও ২৫টি খাল খনন চলমান রয়েছে। চলমান ওই সব খাল থেকে আরও প্রায় ৩০ লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। গত ২০ মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো এক-তৃতীয়াংশের বেশি মাটি খনন করেছে। বাকি প্রায় এক কোটি ঘনমিটার মাটি মাত্র ১৭ মাসে উত্তোলন করতে হবে। এটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশিষ্ট নাগরিক নেতা ও পরিবেশবিদ এ্যাডভোকেট কুদরত-ই খোদার মতে, মংলা বন্দর সচল, সুন্দরবন রক্ষা, এই এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষা এবং মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথের নৌচলাচলের জন্য নাব্য নিশ্চিত করতে হবে। আর এটা করতে হলে চ্যানেল সন্নিহিত নদী ও খাল খনন করে দ্রুত খুলে দিতে হবে। খনন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে এ মেগা প্রকল্পের কোন সুফল মিলবে না। পরিপূর্ণভাবে এর সুফল পেতে হলে শাখা নদী ও শাখা খালের পাশাপাশি জোয়ার ভাটার প্লাবনভূমি তৈরি করতে হবে। সঠিক সময়ের মধ্যে ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিকভাবে নদী খনন করতে হবে তা না হলে খালগুলো আবার দ্রুত ভরাট হয়ে যাবে। আর এটা না করতে পারলে প্রকল্প ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাবে। তিনি কাজের গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানান। এ বিষয়ে বাগেরহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাহিদ-উজ জামান খান জানান, খাল খননের শুরুতেই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। আমরা দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক এ মেগা প্রকল্প সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
×