ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতেই বিএনপির সিটি নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবি: ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ২৩ জানুয়ারি ২০২০

 ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতেই বিএনপির সিটি নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবি:  ওবায়দুল কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতেই বিএনপির পক্ষ থেকে আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেলে রেডিসন ব্লুতে ‘চার লেন বিশিষ্ট ভারতীয় ঋণ কর্মসূচীর আওতায় আশুগঞ্জ নদীবন্দর-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ক চারলেনে উন্নতীকরণ প্রকল্পের প্যাকেজ-১ ও ২ এর চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় নির্বাচন পেছাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দাবির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা করা হবে। তবে নির্বাচনকে ঘিরে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করতেই তারা এমন দাবি করছে। নির্বাচন একবার পেছানো হয়েছে, তার একটি কারণ ছিল। এখন আর পেছানো হবে না। এসময় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়েও প্রশ্নের উত্তর দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ইভিএম বিষয়ে আমাদের অবস্থান বার বার পরিষ্কার করেছি। ইভিএম বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার কিছু নেই। এর সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা আগেও সেটি মেনে নিয়েছি, আগামীতেও নেব। তবে আমরা আধুনিক প্রযুক্তিকে সাপোর্ট করি। এরজন্য আমরা ইভিএমের পক্ষে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইভিএম ব্যবহৃত হচ্ছে দাবি কওে আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেই হিসেবে এখন আর এনালগ থাকার সুযোগ নেই। ইসি পুরো নির্বাচন ইভিএমে করবে, নাকি আংশিক করবেই; তা ইসির সিদ্ধান্ত। আর মির্জা ফখরুল ইভিএম নিয়ে যে অভিযোগ করছেন তা নির্বাচন কমিশনের কাছে করুক। আমাদের কাছে বা অন্য কারও কাছে করে লাভ নেই। নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগেরই অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এতে নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, অনেক প্রার্থী আছেন খাতা কলমে। দলীয় সিদ্ধান্তের পরে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। কাজেই পরিবেশ বিনষ্ট হবে না। এরপরেও যারা আছে তাদের বিষয়ে আমাদের ওপর ছাড়ুন। ‘লিভ ইট টু আস’। সড়ক নির্মাণে চুক্তি ॥ বাংলাদেশের আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে ভারতের আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেনের মহাসড়ক উন্নয়নে দুই দেশের অংশীদারদের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এর আওতায় তিনটি পর্যায়ের মধ্যে দুইটি পর্যায়ে ওই মহাসড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হলো। এছাড়া আরও শেষ পর্যায়ের কাজের জন্য আলাদা চুক্তি সই হবে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিমানবন্দন এলাকার হোটেল রেডিসন ব্লুতে মহাসড়কটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের এফকন ইনফ্রাস্ট্রাকচার্স লিমিটেড, বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং অর্থ ঋণ দেয়া প্রতিষ্ঠান এক্সিম ব্যাংকের ভারত শাখার মধ্যে এক ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশের উপস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের স্ব-স্ব প্রতিনিধিরা চুক্তিপত্রে সই করেন। ‘চার লেন বিশিষ্ট আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-দারকার-আখাউড়া স্থলবন্দর সড়ক উন্নীতকরণে জাতীয় মহাসড়ক’ শীর্ষক এ প্রকল্পে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থ লোন দেবে এক্সিম ব্যাংকের ভারত শাখা। প্রথম ধাপে আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল পর্যন্ত ১২ দশমিক ২১ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৫ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা। আর রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে আরও ১৯ দশমিক ১ কোটি টাকা। অন্যদিকে দ্বিতীয় ধাপে দারকার থেকে সরাইল পর্যন্ত প্রায় ২৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৭৩ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা। এই অংশে রক্ষণাবেক্ষণখাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা। আর পুরো প্রকল্পটির পরামর্শক বিষয়ক খাতে পাঁচ বছরে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৭ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা। সবশেষ দারকার থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিশ্বে বিরল। দুই দেশের ছিটমহল বিনিময় থেকেই তা দেখা যায়। এত শান্তিপূর্ণভাবে এই ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে, যা বিশাল এক অর্জন। বিশ্বে বিরল নজির। উভয় দেশের মধ্যে আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। সমস্যার সমাধানে আমরা দুই পক্ষই কাজ করছি। সব থেকে বড় কথা দু’ দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া খুব ভালো। এতে সমস্যার সমাধানে পথ সুগম হয়। আজ যে কাজের চুক্তি হলো তার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ আরও উন্নত হবে। আজ দুইটি ধাপের কাজের উদ্বোধন হলো। যারা এই কাজটি করছে ভারতের প্রতিষ্ঠান। তাদের বেশ সুনাম রয়েছে। আমি আশা করি, তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গুণগত মান ঠিক রেখে কাজটি সম্পন্ন করবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দেয়াল ভেঙে দিয়েছি। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির ডায়নামিক ও ক্যারিশমেটিক লিডারশিপের কারণে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুদেশের মধ্যে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। কোনো কিছুই অনতিক্রম নয়। দুই প্রধানমন্ত্রীর বোঝাপড়া খুবই ভালো। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে আমরা সমঝোতার নবদুয়ার উন্মোচন করছি।’ রীভা গাঙ্গুলি দাশ বলেন, ভারতের বহির্বিশ্বের সঙ্গে সর্বাধিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাংলাদেশের সঙ্গে। প্রায় ৪৬টি প্রকল্প আমরা দু’দেশ মিলে বাস্তবায়ন করছি। এর মধ্যে সর্বাধিক প্রকল্প আছে রেলওয়ে নিয়ে। বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার। ভারত প্রতিবেশী এবং বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের এই লক্ষ্য অর্জনে সবসময় পাশে থাকবে। এই সড়ক নির্মাণ চুক্তি সই পাশে থাকারই এক নজির। অনুষ্ঠানে উভয় দেশের সরকারি-বেসরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×