ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিকন্যা আয়েশা সিদ্দিকা

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯

অগ্নিকন্যা আয়েশা সিদ্দিকা

খেলার জগতে কীভাবে এলেন? আয়েশা সিদ্দিকা: ৫ বছর ৭ মাস বয়স থেকে। প্রাইমারী স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা দিয়ে শুরু করে আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলছি। স্কুল ও কলেজভিত্তিক জাতীয় পর্যায়ে হ্যান্ডবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন খেলতাম। এরপরই মার্শাল আর্ট এর দিকে ঝুঁকে পড়ি। ২০০৭ থেকে তায়কোয়ানদো (কোরিয়ান মার্শাল আর্ট)কে নিয়ে পথ চলছি। শুরুর দিকে কী কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিল? আয়েশা সিদ্দিকা: যখন খেলাধুলা শুরু করেছি তখন থেকে বাধা না পেলেও খেলাকে যখন থেকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়ার চেষ্টা শুরু করেছি তখন থেকেই পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বাধার পাহাড় সামনে এসে দাঁড়ায়। এটা তো এমনিতেই বুঝা যায় যে নারী যেটাই করতে যায় সেখানেই তাকে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এত ইভেন্ট থাকতে ‘মার্শাল আর্ট’কে কেন বেছে নিলেন? আয়েশা সিদ্দিকা : বাস্তব জীবনের একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্শাল আর্টকে বেছে নেয়া। ঘটনাটি ২০০০ সনের। আমার চোখের সামনেই একটি মেয়েকে খুবই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে দেখা এবং তাকে সেইফ করতে গিয়ে নিজে আঘাত পাওয়া। এই ঘটনা থেকেই মার্শাল আর্টকে বেছে নেয়া। তখন আমার মধ্যে উপলব্ধি হয় যে নারীদের অবশ্যই নিজেকে রক্ষা করার কৌশল আয়ত্ত করা উচিত। সবচেয়ে আনন্দময় অভিজ্ঞতাটা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন? আয়েশা সিদ্দিকা: যখন মেয়ে থেকে আরও একটি মেয়ের মা হয়েছি। জোবাইদা সিদ্দিকা জ্যোতি (৪) আমার মেয়ে বর্তমানে সেই আমার পথ চলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। ওকে সঙ্গে নিয়েই তো পথ চলছি। এটাই যে আমার কাছে চরম আনন্দময় অভিজ্ঞতা। কষ্টের অভিজ্ঞতাটা আমাদের জানান আয়েশা সিদ্দিকা: কষ্টের অভিজ্ঞতা আছে অনেক, সেই কষ্ট থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েছি বারবার। তবে কিছু দিন আগের ঘটে যাওয়া একটি কষ্টের ঘটনা একটু জানাতে চাই। বুলগেরিয়ায় ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছি অনেকের কাছে। আর্থিক সহযোগিতা না পেলেও কিছু কথা পেয়েছি। (নাম প্রকাশ করতে চাই না) একজন বলেছে, আরে আপা বয়স হয়েছে, মেয়ে আছে একটা তারপরেও এই লাফঝাঁফ দিয়ে কি হবে? মারামারি করে কি ভাত জুটবে? তার চেয়ে ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতেন তাইলেও কিছু হতো ভবিষ্যত। আপনার পিছে টাকা দিয়া লাভ কি হবে? তারচেয়ে ক্রিকেট আর ফুটবলে দিলে কাজ হবে। বলতে পারেন, একজন খেলোয়াড়ের জন্য এটা কতটা কষ্টকর অপমানজনক কথা।শুধু ক্রিকেট আর ফুটবলই খেলা অন্য খেলা খেলা নয়? সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সবার কাছে আমার একটা অনুরোধ যদি কোন খেলোয়াড়কে সাহায্য করতে না চান তো করবেন না, কিন্তু ক্রিকেট ও ফুটবলের অবস্থান চিন্তা করে অন্য খেলার খেলোয়াড়কে ছোট করার চেষ্টা করবেন না দয়া করে। সকলের উদ্দেশ্যে বলছি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে আতœরক্ষার কৌশল শিখে রাখুন। একটু বলি আমাদের সমাজে ব্যতিক্রম কিছু মানুষও থাকে, যেমন কাজী ফার্মসের এমডি কাজী জাহেদ হাসান স্যার যিনি বুলগেরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য ২১তম ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করতে আমাকে এক লাখ টাকার সহযোগিতা করেন। এদেশে নারীদের মার্শাল আর্ট শেখাটা কতটা জরুরী বলে আপনি মনে করেন? আয়েশা সিদ্দিকা: অবশ্যই বাংলাদেশে নারীদের মার্শাল আর্ট শেখা খুবই জরুরী বলে আমি মনে করি। শুনলাম আপনি নতুন একটি প্রজেক্ট শুরু করতে যাচ্ছেন? আয়েশা সিদ্দিকা: এটা তো আমার যাত্রার শুরু মাত্র। ছোট পরিসর থেকেই বড় কিছুর শুরু করতে হয়। আপাতত এখন হাজার নারীকে নিয়ে শুরু করছি, আমার ভবিষ্যতে পরিকল্পনা বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় একজন একজন করে মার্শাল আর্ট ট্রেইনার তৈরি করা। আপনি কি মনে করেন, এ খাতে পৃষ্ঠপোষকতা দরকার? আয়েশা সিদ্দিকা: অবশ্যই দরকার। যেহেতু আমার পরিকল্পনা পুরো বাংলাদেশের নারীদের নিয়ে, সেক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি আমার কাজটা আরও সহজ ও ভালভাবে করতে পারব। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কি কিছু প্রত্যাশা করেন? আয়েশা সিদ্দিকা: শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে আমার প্রত্যাশা শিক্ষা গ্যাজেটে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের ক্লাসের পরিবর্তে সেলফ ডিফেন্স বা মার্শাল আর্ট এর শিক্ষা প্রদান করা। যাতে প্রধানমন্ত্রীর দেখা নারীর অধিকার উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জায়গা নিশ্চিত করা যায়। এটি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হলে ভবিষ্যতে ছেলে মেয়েরা তায়কোয়ানদোর সঙ্গে খুব সহজেই যুক্ত হতে পারবে। তায়কোয়ান-দো কে পেশা হিসেবে না হোক অন্তত নিজের আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে শিখে রাখা খুব দরকার। যা নিজের ও সমাজের উন্নয়ন সাধনে সাহায্য করবে। আপনার অর্জনগুলো বলুন? আয়েশা সিদ্দিকা: স্কুল ও কলেজভিত্তিক জাতীয় পর্যায়ে হ্যান্ডবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন। ২০০৭ থেকে তায়কোয়ানদোতে এখন পর্যন্ত ৫টি জাতীয় স্বর্ণপদক , ১টি জাতীয় রৌপ্যপদক। ৩টি আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক, ১টি ব্রোঞ্জপদক। সর্বশেষ আগস্টে বুলগেরিয়ায় অনুষ্ঠিত ২১তম ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করা। ভবিষ্যতে স্বপ্নটা কী সেটা শুনতে চাই? আয়েশা সিদ্দিকা: ক্রীড়ার মাধ্যমে নারী ও শিশু উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে চাই এবং একটি ক্রীড়া স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য এক নজরে আয়েশা সিদ্দিকা আয়েশা সিদ্দিকার পুরো নাম আয়েশা সিদ্দিকা আঁখি। তিনি চাঁদপুর জলার মতলব (দক্ষিণ) উপজেলার ( উত্তর) বহড়ী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা, মা ও দুই বোন ও এক ভাই নিয়ে তার সংসার। তিনি ভাই বোনের মাঝে সবার বড়। তিনি বিবাহিত এবং তার ৪ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। ২৮-০৮-১৯৮৭ সালে জন্ম নেয়া এই অগ্নিকন্যা এখন দেশ ও দশের সম্মান বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন অবিরত। বাবা অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপ্যাল এবং মা গৃহিণী, তবে তার মা খুব ভাল কবিতা লিখেন। তার মা ও বোনের অবদান সবচেয়ে বেশি। তবে এই মুহূর্তে পরিবারের সবাই খুব সাহায্য করে। সরকারী কোন সহোযোগিতা পাননি। তবে তিনি সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা কামনা করেন।
×