ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সড়ক আইন বহাল রেখেই সহনীয় মাত্রায় প্রয়োগ ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১১:০৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৯

সড়ক আইন বহাল রেখেই সহনীয় মাত্রায় প্রয়োগ ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নতুন সড়ক পরিবহন আইন বহাল রেখেই সহনীয় মাত্রায় তা প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন এই মুহূর্তে সংশোধন সম্ভব নয়। সোমবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে ডাকা সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রী বিএনপির চলমান রাজনীতি, পেঁয়াজের দাম, চালের বাজার, এনআরসিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন। ২০১২ সালের প্রক্রিয়া শুরুর পর দেড় বছর আগে সংসদে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস হয়। চলতি বছরের গত এক নবেম্বর থেকে তা কার্যকর করার ঘোষণা আসে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না থাকায় ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। গত ১৬ নবেম্বর থেকে আইন বাস্তবায়ন শুরু হলে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা কৌশলে সারাদেশে পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পণ্যবাহী পরিবহন শ্রমিকরা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে ধর্মঘট ডাকে। এর প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষে ধর্মঘট স্থগিত হয়। কিন্তু যাত্রীবাহী পরিবহন শ্রমিকরা যানবাহন চালাতে নারাজ ছিলেন। গত শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে ফের বৈঠক হয় আসাদুজ্জামান খান কামালের। রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন সড়ক আইনের কিছু ধারা শিথিল থাকবে। বাকিগুলো কার্যকরে কোন বাধা নেই। শ্রমিক ও মালিক পক্ষের দাবি দাওয়া নিয়ে চার সদস্যের সচিব পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার সড়ক মন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের নতুন সড়ক আইন কার্যকর করার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। তখন ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়ক আইনের সমস্যা সমাধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছি। যখন পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারা তাদের দাবি জানিয়েছেন, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। এ মুহূর্তে কিছু করা সম্ভব নয়। সংসদে যেহেতু আইন পাস হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বিষয়টি আলোচনা করব। আইন সংশোধনের ইঙ্গিত ও বাস্তবায়নে পিছু হটায় এটি মেনে না চলার প্রবণতায় জনমনে কোন প্রভাব পড়বে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন পরিবর্তন কোথায় হলো? জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হয়েছে। পরিবর্তন করতে হলে সংসদেই আবার নিয়ে যেতে হবে। সেটা আমরা বলছি তারা (পরিবহন সংশ্লিষ্টরা) দাবি করেছে, সেটা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। তিনি বলেন, ‘আইন তো আর কোরান আর বাইবেল নয় যে, এটাতে সংশোধনের সুযোগ নেই। যদি যাচাই-বাছাই করে সংশোধনের মতো বাস্তব কোন যুক্তিসঙ্গত, ন্যায়সঙ্গত বিষয় থাকে সেটা অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। কিন্তু যাচাই-বাছাই করার আগে তাদের দাবি নিয়ে আমি তো এখন হুট করে কোন মন্তব্য করতে পারি না, যে আইনের পরিবর্তন বা সংশোধন হবে।’ আইন মেনে না চলার প্রবণতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি এখন আইন মেনে চলার প্রবণতা বাড়ছে। একটা ভয়ভীতি কাজ করছে। যে যাই বলুক আইনের প্রয়োগটা বন্ধ করা হয়নি। কিছু কিছু বিষয়ে বাস্তবতার স্বার্থে শৈথিল্য দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগে যতটা সহনীয়ভাবে দেখা যায় দেখব। যখন অচলাবস্থা হয় তখন মিডিয়াও বলে ভোগান্তি হচ্ছে। সব বন্ধ হলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। বাস্তবতার নিরিখে রয়ে-সয়ে চলতে হবে। কারণ বাস্তবতা ভিন্ন। আইনের বিধি হয়ে গেলে অনেক কিছু সমাধান হবে। সবার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত তো চাপিয়ে দেয়া হয়নি, সবার সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবহন নেতাদের কাছে সরকার জিম্মি কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারও কাছে কেউ জিম্মি নয়। পরিবহনের সঙ্গে দু’দিনের অবস্থা বিচার করে দেখেন। মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচকভাবে আইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে এক সপ্তাহ অচলাবস্থা হলে মিডিয়ার সুর পাল্টে যাবে। প্রথম দু’তিন দিন আপনারা আইনের পক্ষে থাকবেন। পণ্য সরবরাহ বন্ধ হলে কী হবে? কাজেই আমাদের হট এ্যান্ড কোল্ড পলিসি করে এগিয়ে যেতে হবে। সরকার পরিবহন তোদের জন্য পিছু হটল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, পিছু হটার বিষয় নেই, যা বাস্তব, দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী যে বিষয় নিয়ে আমাদের অবস্থান নেয়া দরকার, আইনী ব্যবস্থা রেখে জনস্বার্থে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশে তো ধর্মঘট নেই, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে পারি তাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে। কিন্তু তাতে যা হবে তা কি বাস্তবসম্মত হতো। পরিবহন নেতাদের সিদ্ধান্তের বাইরেও ধর্মঘট হয়েছে, এখানে নানা মেরুকরণ হয়েছে বলেও জানান তিনি। লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রুত বিআরটিএতে এ বিষয়ে কাজ হবে। জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে; দ্রুত জনবল সঙ্কট সমাধান হবে। চালক তৈরির জন্য বিরাট প্রকল্প আছে, বিআরটিসি ও বিআরটিএ উদ্যোগ নিয়েছে। দক্ষ চালক সৃষ্টিতে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জন্যই সড়ক আইন হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শ্রমিকদের সরকার যে ছয় মাসের সময় দিয়েছে এর মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন, নতুন লাইসেন্স দেয়া বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) ওভারটাইম কাজ করছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অধিক জনবল দেয়ার জন্য কাজ করছে। ভারি যানবাহন চালানোর মতো প্রশিক্ষিত চালক তৈরির কাজ চলছে। সভা-সমাবেশ করার সাহস বিএনপির নেই ভবিষ্যতে অনুমতি না নিয়েই বিএনপি সমাবেশ করবে বলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে হুমকি দিয়েছেন, এর জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া আনুষ্ঠানিক বিষয়।’ বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগও অনুমতি নিয়েই সভা সমাবেশ করেছে। আমরা কি অনুমতি না নিয়ে কখনও সভা সমাবেশ করেছি? আপনারা অনুমতি নেবেন না কেন? জায়গার মালিকের কাছ থেকে অনুমতি তো নিতেই হবে। অনুমতি না নিয়ে সভা-সমাবেশ করার সক্ষমতা বা সাহস কোনটাই বিএনপির নেই। তাদের নেত্রীর মুক্তির জন্য ৫০০ লোক নিয়ে সমাবেশ করতে পারে না, তারা আবার অনুমতি না নিয়ে সমাবেশ করতে চায়! এই ঘোষণা হাস্যকর। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। তবে অনুমতি দেয়া হয়নি। পরে অনুমতি দেয়া হলে নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে তারা কর্মসূচী পালন করে। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ভবিষ্যতে অনুমতি না নিয়েই সমাবেশ করা হবে। চালের সঙ্কট নেই ॥ চালের সঙ্কট নেই, মজুদ আছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ৮২ হাজার টন পেঁয়াজ এসেছে। অচিরেই দাম কমে যাবে। সরকার বসে নেই। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে। দেশের জনগণের স্বার্থের বাইরে যাওয়ার কারও সুযোগ নেই। এনআরসি নিয়ে টানাপোড়েন নেই ভারতের নাগরিক তালিকা (এনআরসি) বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন টানাপোড়েন নেই। এনআরসি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। তবে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এলে উদ্বিগ্ন তো হতেই হবে।
×