ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্চে উদ্ভাসিত শেখ সাদী

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ৩ অক্টোবর ২০১৯

মঞ্চে উদ্ভাসিত শেখ সাদী

আমাদের দৃষ্টি ছিল গত ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় চন্দ্রকলা থিয়েটারের মঞ্চনাটক ‘শেখ সাদী’র উদ্বোধনী মঞ্চায়নের দিকে। এশিয়া ভূখ- জুড়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেভাবে আদৃত অনেকটা তেমনই সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে মহাকবি শেখ সাদী আদৃত। সেই শেখ সাধী মঞ্চে কিভাবে আসে, কতটা জীবন্তভাবে উপস্থাপিত হয় তা নিয়ে আমরা ছিলাম তটস্থ । উপরন্তু ইরানের নাট্যকর্মীরা যখন শেখ সাদীকে এখনও মঞ্চে তুলে ধরতে পারেনি সেখানে বাংলাদেশের একটি নাট্যদল তুলে ধরতে যাচ্ছে সেখানে শক্তিশালী ব্যাকুলতা আর তীক্ষè কৌতূহল নিয়ে শেখ সাদী মঞ্চায়ন দেখা ছাড়া উপায় কি! কিন্তু পর্দা উঠবার পূর্বে আলো-আধারীর আবহে যখন ইরানের তৎকালীন কাউন্সিলর ড. মাহাদী হোসাইনী ফায়েকের সুমিষ্ট ফার্সি কণ্ঠে এবং বাংলাদেশের শীর্ষ সাংস্কৃত ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের দরদি কণ্ঠে উচ্চারিত হলো ‘মহাকবি রূদাকি, মহাকবি ফেরদৌসী পারস্যের সাহিত্যকাশে এক একটি নক্ষত্র। তাদেরই যোগ্য উত্তরসূরী মহাকবি শেখ সাদী। আপন আলোয় আপন শক্তিতে উদ্ভাসিত শেখ সাদীকে ইতিহাসের আলোয় দেখা এবং দেখানোর নাটক শেখ সাদী। তিনি পাশ্চাত্যের আবার তিনি আমাদের এই প্রাচ্যের। তিনি কবি, তিনি মহাকবি, তিনি বিশ্বের কবি শেখ সাদী।’ তখন হলভর্তি দর্শকের তুমুল করতালি আর পর্দার উন্মোচন যুগপৎ আমাদের গৌরবে আন্দলিত করল আর আনন্দশ্রুতে চোখ পানিতে ভাসল। ভেসে চলাও না বয়ে চলাও না, শুধু ফজরের আজানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে প্রভাতের আলো ফোঁটার মধ্যবর্তী সময়টুকুতে দাঁড়িয়ে ঘটমান বর্তমানের ছোঁয়ায় যে একটা সামগ্রিক শেখ সাদীর রূপরেখা তুলে ধরা যায় এটা এক সত্যিকার বিস্ময়ের। পিতৃ¯েœহ, শিক্ষার্জন, বিশ্বভ্রমন, মক্কা-মদিনাগামী হজ্বযাত্রীদের সেবা প্রদান, তাচ্ছিল্লের বদলা স্বরূপ পোষাককে খাবার অর্পন, পারিবারিক বন্ধন, বিচ্ছেদের ভাঙ্গন, জালালউদ্দীন রুমি-ওমর খৈয়াম প্রভৃতি সমসাময়িক কবিদের সমান্তরাল কালজয়ী সাহিত্য সৃজন, দিল্লীর বাদশা এবং কবি বন্ধু আমীর খসরুর প্রতি শ্রদ্ধা তর্পন, জন্মস্থান সিরাজ নগরীর প্রতি প্রেমাস্পন্দন প্রভৃতি বাংলাদেশের নাট্যকার অপূর্ব কুমার কু-ু যেভাবে লেখনিতে এনেছে তা এক কথায় তার নামেরই সমার্থক। তার পরিশ্রম দেখে আমরা তৃপ্ত, আমরা আনন্দিত। শুধু আনন্দিত কিংবা তৃপ্তির বিষয় না বরং তারিফযোগ্য বিষয় চন্দ্রকলা থিয়েটারের দলপ্রধান-নির্দেশক এবং শেখ সাদী নাটকের নাম ভূমিকায় একক অভিনয়ের নির্দেশক অভিনেতা এইচ আর অনিকের কর্মের পারঙ্গমতায়। যে বয়সে যে গুরুদায়িত্ব সে সক্ষমভাবে পালন করতে সক্ষম হলো তা প্রশংসার, তা প্রেরনার। তার নির্দেশিত নাটকে সঙ্গীত যেন বহমান ¯্রােত, আলো যেন পাহাড়ী সুর, সেট যেন ধরিত্রীর অখন্ডতা, পোষাক যেন মলিনতা সরিয়ে আভিজাত্যের উন্মেষ আর অভিনয় যেন ইতিহাসের কুয়াশা ভেদ করে শেখ সাদী’র জীবন্ত উঠে আসা, শেখ সাদী চরিত্রে এইচ আর অনিকের বহুমাত্রিক অভিনয় নাটক জুড়ে নান্দনিক পুরোটা সময় জুড়ে। হালুয়া ওয়ালার কাছ থেকে বোকা বনে যাবার ছেলে মানুষি, বিশ্বভ্রমনের ক্লান্তি, অধ্যায়নের নিমগ্নতা, ভিস্তিওয়ালার মাহাত্ম্য, সন্তান বিয়োগে বিলাপ, অপমানের বদলা, স্ত্রীর প্রতি সম্মান, সমসাময়িক কবিদের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রাণাধিক কন্যার প্রতি নির্ভরতা, কবি বন্ধু আমীর খসরুর প্রতি বিশ্বস্ততা প্রভৃতি অনুভূতি দৈহিক-বাচিক এবং সাত্ত্বিকভাবে ফুটিয়ে তোলার মধ্যে দিয়ে অভিনেতা এইচআর অনিক হয়ে উঠল ঢাকার মঞ্চে এক দায়িত্বশীল অভিনেতা। দায়িত্বশীলতার দিক থেকে চন্দ্রকলা থিয়েটারের সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুনসহ সকল নাট্যকর্মী বন্ধুরাই আন্তরিক এবং পরিশ্রমী। এই লেখনীর সময জেনেছি, আগামী ১৭ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে এক্সপেরিমেন্টাল হলে শেখ সাদী নাটক মঞ্চায়ন হবে। লিখতে লিখতে ভাবছি হয়ত আর কিছুদিনের মধ্যে জানতে পারব, এবারের আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে সময় হলো, শেখ সাদী মঞ্চায়নের জন্য তেহরান চলো।
×