ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিন্ডিকেটের কবলে ইলিশ ব্যবসা

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 সিন্ডিকেটের কবলে  ইলিশ  ব্যবসা

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ সাগরের ইলিশ এখন সিন্ডিকেটের কবলে। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বঙ্গোপসাগর তীরের জনপদ চরমোন্তাজ ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে এ সিন্ডিকেট। স্থানীয় ইলিশ ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গড়ে তোলা এ সিন্ডিকেট যেমন খুশি, সেভাবেই নির্ধারণ করছে ইলিশের দাম। জেলেরা সে দামে ইলিশ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে একদিকে জেলেরা আর্থিকভাবে ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন। অন্যদিকে স্থানীয় হাটবাজারেও মিলছে না ইলিশ। সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাগর থেকেই বিভিন্ন মোকামে ইলিশ চালান দিয়ে মোটা মুনাফা তুলছে। স্থানীয় মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে ইলিশের স্বাদ থেকে। অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেটের কাছে ইলিশ বিক্রি না করায় জেলেরা মারধরেরও শিকার হচ্ছেন। সাগরপাড়ের জনপদ চরমোন্তাজ ইলিশের বড় মোকাম হিসেবে পরিচিত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েক হাজার জেলে প্রতি বছর ইলিশ মৌসুমে চরমোন্তাজে আস্তানা গাড়েন। এখানে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ ইলিশ বেচাকেনা হয়। অভিযোগ উঠেছে, চরমোন্তাজের অন্তত ৪০ ইলিশ ব্যবসায়ী মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা জেলেদের ওপর অলিখিত আদেশ জারি করেছে, যাতে বলা হয়েছে; সিন্ডিকেটের বাইরের কারও কাছে ইলিশ বিক্রি করা যাবে না। ওই ইউনিয়নের আওতাধীন নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা স্থানীয় এবং অন্য এলাকা থেকে আসা সব জেলেদেরই এ আদেশ মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। যে কারণে গলাচিপা, দশমিনা, ভোলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে আসা মৎস্য ব্যবসায়ীরা চরমোন্তাজের জলসীমায় মাছ কিনতে এসে বিপাকে পড়ছেন। ভোলা থেকে মাছ কিনতে এসে হয়রানির শিকার কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, চরমোন্তাজের সোনারচরের খালে মাছ কেনার সময়ে তারা সিন্ডিকেটের সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। সিন্ডিকেটের সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে অন্তত ১০ জনকে আহত করেছে। ইলিশ মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। একপর্যায় তারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। চরমোন্তাজের জলসীমায় মাছ শিকারি কয়েকজন জেলে জানান, চরমোন্তাজের মৎস্য ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে প্রতিনিয়ত তাদের ঠকাচ্ছে। তারা নিজেদের খুশি মতো মাছের দর নির্ধারণ করছে। সে দরেই জেলেরা মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া প্রতি কেজিতে এক শ’ গ্রাম মাছ বেশি নিচ্ছে সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা। জেলেরা আরও জানান, অন্য এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ীরা এলে দর কষাকষি করে বেচাবিক্রি করা যায়। এতে তাদের লাভ বেশি হয়। আবার ওজনেও বেশি দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ফলে তারা কষ্ট করে শিকার করা ইলিশ অনেক সময়ে পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্য এলাকার ব্যবসায়ীরা এলাকায় আসা বন্ধ করলে ক্ষতি হবে জেলেদের। তারা মাছের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। সোনারচর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা জেলে জামাল বলেন, প্রতি বছর ইলিশ মাছ বিক্রি করে বেশ লাভ পেতাম। কিন্তু এ বছর তেমন সুবিধা করতে পারছি না। চরমোন্তাজের সব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে অন্য এলাকার ব্যবসায়ীদের পিটিয়ে সাগর থেকে তুলে দিয়েছে। আরও কয়েকজন জেলে একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে চরমোন্তাজ ইউনিয়নে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত মোশাররফ দালাল বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে চরমোন্তাজ ইউনিয়নে ‘ক্যারিং’ ব্যবসা করি। আমাদের ইউনিয়নে ক্যারিংবোট অর্থাৎ ইলিশ কেনাবেচা ও পরিবহনের ট্রলার আছে ৪০টি। আমরা একটি মিটিং ডেকে সকলকে নিয়ে সমিতি করেছি। সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বহিরাগত যারা আছে সেই ক্যারিংগুলো কিভাবে ব্যবসা করতে পারে। তখন আমরা বলেছি, আগে সমিতি পাস হোক। এজন্য তারা অর্থাৎ অন্য এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ীরা ৭-৮ দিন অপেক্ষা করুক। তারপর দেখা যাবে। এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, সিন্ডিকেটের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ইউএনওকে অবহিত করা হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাশফাকুর রহমান বলেন, জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমন কাজ করতে দেয়া হবে না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×