ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

বিপন্ন এম্পারার পেঙ্গুইন

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ২৩ আগস্ট ২০১৯

বিপন্ন এম্পারার পেঙ্গুইন

এন্টার্কটিকার ওয়েভেল সাগরে হ্যালি বে কলোনিতে এম্পারার পেঙ্গুইনরা গত তিন বছর ধরে ছানাদের লালন পালন করতে পারছে না। ফলে প্রতি মৌসুমেই ওখানকার প্রায় সব বাচ্চাই মারা যাচ্ছে। হ্যালি বে কলোনি এতে করে কার্যত এখন অদৃশ্যই হয়ে গেছে। ব্রিটিশ এন্টার্কটিক সার্ভের (বিএএস) গবেষকরা স্যাটেলাইট থেকে অতি হাই রিজোলিউশন ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলো পর্যালোচনা করে এই অস্বাভাবিক ঘটনার তথ্য প্রকাশ করেছেন। এই সেদিন পর্যন্ত হ্যালি বে কলোনি ছিল বিশ্বে এম্পারার পেঙ্গুইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম কলোনি। প্রতিবছর সেখানে প্রজননের জন্য পেঙ্গুইন জুটির সংখ্যা থাকত ১৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার। অর্থাৎ বিশ্বে এম্পারার পেঙ্গুইনের মোট সংখ্যার প্রায় ৫ থেকে ৯ শতাংশ। পরপর তিন বছর পেঙ্গুইন বাচ্চা লালন পালন করতে না পারার জন্য স্থানীয় সাগরের বরফের অবস্থার পরিবর্তন দায়ী। এম্পারার পেঙ্গুইনের প্রজননের জন্য স্থিতিশীল সাগরের বরফ প্রয়োজন। বরফের এই প্লাটফর্মটা এপ্রিলে যখন এম্পারার পেঙ্গুইনরা এখানে আসে সেই সময় থেকে ডিসেম্বরে যখন বাচ্চাদের শরীরে পালক গজায় সেই সময় পর্যন্ত অবশ্যই থাকতে হবে। গত ৬০ বছর ধরে হ্যালি বের এই জায়গায় বরফের অবস্থা স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে অস্বাভাবিক ঝাড়ো হাওয়ার এক অধ্যায় চলার পর অক্টোবর মাসে অর্থাৎ এম্পায়ার পেঙ্গুইন ছানাদের শরীরে পালক গজিয়ে ডানা জাপটে চলার উপযোগী হবার আগেই সাগরের বরফ ভেঙ্গেচুরে যায়। একই ঘটনা ২০১৭ সালে এবং ২০১৮ সালেও ঘটে। ফলে প্রতি মৌসুমে ঐ স্থানটিতে প্রায় সব বাচ্চাই মরে শেষ হয়ে যায়। তবে হ্যালি বে’তে এম্পাবার পেঙ্গুইন কলোনি প্রায় সবটুকু অদৃশ্য হয়ে গেলেও এর কাছাকাছি ডাওসন ল্যাম্বটন কলোনির আকার লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে গেছে। তা থেকে বোঝা যায় যে অনেক প্রাপ্তবয়স্ক এম্পাবার পেঙ্গুইন পরিবেশগত অবস্থার পরিবর্তনের কারণে প্রজননের উন্নততর স্থানের খোঁজ সেখানে চলে গেছে। পেঙ্গুইন পাখিদের অনেকেই যে অধিকতর স্থিতিশীল প্রজনন ক্ষেত্র বেছে নিচ্ছে সেটা একটা উৎসাহব্যঞ্জক ব্যাপার। কেননা পেঙ্গুইনরা তাদের স্থানীয় পরিবেশের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটলে বিকল্প স্থানের সন্ধান করে এতদিন পর্যন্ত তা জানাই ছিল না। গবেষকদের অন্যতম ড. পিটার ফ্রেটওয়েল বলেন, ‘আমরা গত এক দশক ধরে অতি হাই রিজোলিউশন স্যাটেলাইট ছবি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কলোনির পেঙ্গুইনদের খোঁজ খবর রাখছি। এসব ছবিতে স্পষ্টতই দেখা গেছে যে গত তিন বছর ধরে হ্যালি বে’ কলোনিতে প্রজননের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ঘটেছে বিপর্যয়কর। এসব ছবিতে এককভাবে ও গাদাগাদি অবস্থায় পেঙ্গুইনদের চিহ্নিত করা যায় বিধায় এ থেকে কলোনির আকারও নির্ভরযোগ্যভাবে নির্ণয় করা যায়। গবেষকদলের পেঙ্গুইন বিশেষজ্ঞ ড. ফিল থ্রাথান বলেন, হ্যালি বে’তে সাগরের বরফের অবস্থার এই পরিবর্তন জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে সম্পর্কিত কিনা বলা সম্ভব নয়। তবে সাফল্যের সঙ্গে প্রজনন পর্ব সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এমন পরিপূর্ণ ব্যর্থতা এক নজিরবিহীন ঘটনা। প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাগরের বরফের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য চলতি শতাব্দীর শেষ হওয়ার আগেই এম্পারার পেঙ্গুইনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে। তাদের সংখ্যা ৫০ থেকে ৭ শতাংশ কমে যাবে। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×