ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরের নাঙ্গলপাড়ায় বাদুড়ের সঙ্গে এক যুগ

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২২ জুন ২০১৯

 শেরপুরের নাঙ্গলপাড়ায় বাদুড়ের সঙ্গে এক যুগ

বাদুড় একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে বাদুরই একমাত্র উড়তে পারে। এরা গাছের ডালে পা আটকিয়ে মাথা নিচু করে ঝুলে থাকতে পারে। দিনের বেলা এরা চোখে দেখে না তাই রাতে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। বাদুড় সাধারণত গুহায় কিংবা অন্ধকার কোন জায়গায় থাকতে ভালবাসে। কিন্তু ময়মনসিংহের নান্দাইলে ঘটেছে এর ব্যতিক্রম। উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের লংগারপাড় গ্রামে কয়েকটি জঙ্গলের বাঁশঝাড় ও গাছপালায় প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে অর্ধ লক্ষাধিক বাদুড় বসবাস করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, লংগারপাড় গ্রামটি নান্দাইল-গফরগাঁও সড়কের পাশে অবস্থিত। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষসহ যান চলাচল করে। এত লোকের ভিড়েও গ্রামটিতে প্রায় এক যুগ ধরে বসবাস করছে হাজার হাজার বাদুর। এরা সন্ধ্যায় দলে দলে বিভিন্ন দিকে বেরিয়ে যায় খাবারের খোঁজে। আবার রাত শেষে ভোরবেলায় ফিরে আসে লংগারপাড় গ্রামটিতে। দুপুরের দিকে ডানা ছেড়ে হাত পাখার মতো বাতাস করা আর কিচিরমিচির শব্দ করে আবার স্থির হয়ে যাওয়া এদের প্রতিদিনের কাজ। অনেকটা পোষা প্রাণীদের মতোই অবাধে বসবাস করছে। লংগারপাড় গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, প্রায় ১২/১৪ বছর আগে হঠাৎ একদিন একটি রেন্ট্রি গাছে কিছু বাদুর এসে বসেছে। দেখতে দেখতে ১৫দিনের মধ্যে গ্রামের কয়েকটি গাছপালায় হাজার হাজার বাদুড় ভরে যায়। যদিও এরা কোন লাভজনক পোষা প্রাণী নয়, তবু দীর্ঘদিন ধরে দেখতে দেখতে বাদুড়গুলোর প্রতি গ্রামের মানুষের মায়া পড়ে গেছে। কেউ যেন বাদুড়ের কোন ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে সবারই আলাদা নজর রয়েছে। লংগারপাড় গ্রামের সিরাজ মিয়া (৩০) জানায়, প্রথমে বাদুরের চিৎকারে বিরক্তি লাগত। কিন্তু এখন ভালই লাগে তাদের। এলাকার মানুষ বিষয়টা ভালভাবে নিয়েছে। কেউ বাদুড়ের কোন ক্ষতি করে না। লংগারপাড় বাজারের পল্লীচিকিৎক আব্দুল মন্নান মিয়া বলেন, তার জঙ্গলেই প্রথমে বাদুড় এসেছিল। বাদুরের সমাগম দেখতে প্রায় সময়ই অন্য এলাকা থেকে লোকজন গ্রামে ভিড় করে। দেখে মনে হয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ গুলো যেন বাদুড়কে প্রকৃতির এক অপরূপ উপাদান হিসেবে গ্রহণ করেছে। নান্দাইল উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মলয় কুমার মোদক জানায়, বাদুরের চিকিৎসার জন্য আমার এখানে কেউ আসে না। তবে আসলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম বলেন, বাদুর এখন তেমন একটা দেখা যায় না। লংগারপাড় গ্রামের বাদুড় সম্পর্কে তিনি শুনেছেন। ওই গ্রামের বাদুর যাতে অবাধে বিচরণ করতে পারে এ ব্যাপারে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। -মজিবুর রহমান ফয়সাল, নান্দাইল, ময়মনসিংহ থেকে
×